শ্রমিকবান্ধব শ্রম আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করার দাবি গার্মেন্টস শ্রমিকদের
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, ২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে পরিবহন খরচ বেড়ে বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় ন্যুনতম মজুরি ২২ হাজার টাকা করে অবিলম্বে মজুরি বোর্ড পুনর্গঠনসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটি গার্মেন্টস শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বন্দর নগরী চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ (বিজিডবিউইউসি) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির আয়োজিত মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা এ দাবি জানান। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার কারণে তাদের জীবনযাত্রার মান একেবারেই নিম্নমুখী।
শ্রমিকেরা বর্তমানে অনাহারে-অর্ধাহারে কাজ করছেন। তাই সরকারের উচিত শ্রমিকদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেল ও চিনির রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা। দেশে যখনই শ্রম আইন হয়েছে, সেটা শ্রমিক স্বার্থ-বিরোধী শব্দ চয়ন সংযোজিত হয়েছে জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন, এ সকল কালাকানুন বাতিল করে শ্রমিকবান্ধব শ্রম আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা দরকার।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন শ্রম অধিদপ্তর এবং ডাইফির (কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর-শ্রম ও কর্মসংস্থান) দুর্নীতি আজ সীমাহীন এবং অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে উল্লেখ করে তারা আরও বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এবং সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি নুরুল আবছার তৌহিদের সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি মো. আলমগীর হোসেনের সঞ্চালনায়, মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. তৌহিদুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন শহীদ, গ্রীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি মো. সোহাগ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক পারভীন আক্তার শেলী, আবুল বাশার, মহিউদ্দিন মজনু, হারুন অর রশীদ, ইমাম হোসেন, সৈয়দ খালেদ হায়াত, মো. দুলাল হোসেন রনি, মো. সাইফুল ইসলাম ও মুক্তা আক্তার প্রমূখ। মানববন্ধনে ৮ দফা দাবিগুলো হলো- ১. ৭ম গ্রেডের শ্রমিকদের জন্য ৬৫ শতাংশ মূল মজুরিসহ ২২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ। ২. জানুয়ারির মধ্যে নতুন মজুরি বোর্ড গঠন। ৩. ভর্তুকি মূল্যে শ্রমিদের চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেল, চিনি, শিশুখাদ্য রেশন হিসেবে প্রদান। ৪. বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সরকারি সান্ধ্যকালীন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন। ৫. সাম্প্রতিক বাংলাদেশ শ্রমবিধিমালায় থাকা শ্রমিক স্বার্থ-বিরোধী বিধি সমূহ বাতিল করে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন। ৬. বাংলাদেশ শ্রম আইন চলমান সংশোধনী প্রক্রিয়ায় শ্রমিক সংগঠন সমুহের প্রস্তবনা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে একটি শ্রমিকবান্ধব শ্রম আইন প্রণয়ন। ৭. সরকারি চাকরিজীবী মায়েদের মতো বেসরকারি শিল্পের মাকেও ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ সুবিধাদী শ্রম আইনে যুক্ত করা। ৮. ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় শ্রম অধিদপ্তরের বে-আইনি হস্তক্ষেপ বন্ধ করাসহ ইউনিয়ন গঠনে ২০ শতাংশ শ্রমিকের অংশগ্রহণের বাধ্যবাধকতা বাতিল করে যে কোনো শিল্পে বা প্রতিষ্ঠানে ন্যুনতম ১০ জন শ্রমিক দ্বারা ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের আইন প্রণয়ন।
এ দিকে, চলমান ৮ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন সংগ্রাম জোরদার করার লক্ষ্যে আগামী ৬ মার্চ ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে শ্রমিক সমাবেশ থেকে শ্রম মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির নেতৃবৃন্দ।
আরএক্স/