যাত্রী ছাউনির মুখোশে ফুটপাতে কর্পোরেশনের অবৈধ দোকান


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৫৪ অপরাহ্ন, ২৩শে জুলাই ২০২৫


যাত্রী ছাউনির মুখোশে ফুটপাতে কর্পোরেশনের অবৈধ দোকান
ছবি: প্রতিনিধি

আবুল হাসনাত, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরীর ব্যস্ততম কেন্দ্রস্থল কাজীর দেউড়ি ও এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন ফুটপাত ঘিরে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পূর্বে একাধিকবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও জেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে এ এলাকায় গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হলেও, সম্প্রতি আবারো সেখানে “যাত্রী ছাউনি” ব্যানারে দোকান বসানোর অভিযোগ উঠেছে। ফলে চসিকের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে নগর ব্যবস্থাপনায় এটি কি দ্বিমুখী নীতি?


তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর ও ২০২৩ সালের মার্চে পরিচালিত দুই দফা উচ্ছেদ অভিযানে কাজীর দেউড়ি আউটার স্টেডিয়াম এলাকা থেকে প্রায় ৪৫টি অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়। চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী ও জাহানারা ফেরদৌস এবং জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নু এমং মারমা মং ওই অভিযানের নেতৃত্ব দেন।


তবে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, একই জায়গায় পুনরায় গড়ে উঠেছে দোকান, যার নাম দেওয়া হয়েছে 'যাত্রী ছাউনি'। যদিও নাম ‘ছাউনি’, বাস্তবে এটি একটি বাণিজ্যিক স্থাপনায় রূপ নিয়েছে। দোকানের আয়তন যাত্রী বিশ্রামের চেয়ে অনেক বড়, ফলে ফুটপাতের বড় অংশ দখল হয়ে আরও একাধিক হকার টং দোকান থাকায় পথচারীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।


চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “এই ফুটপাত দিয়ে দৃষ্টিহীন ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচল একসময় সহজ ছিল। এখন সেটাও কঠিন হয়ে পড়েছে।”


সাবেক ফুটবলার মনির হোসেনের মতে, “উচ্ছেদের পর হাঁটার পরিবেশ হয়েছিল। এখন আবার দোকান বসানো হচ্ছে এটা চলাচলে সমস্যা তৈরি করে।”


চসিক সূত্রে জানা গেছে, এসব স্থাপনা 'বিউটিফিকেশন' প্রকল্পের অংশ হিসেবে নির্মিত হচ্ছে বলে দাবি করা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। মূলত ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যেই দোকান স্থাপন করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা বিউটিফিকেশনের অংশ হিসেবে যাত্রী ছাউনি নির্মাণের অনুমতি দিয়েছি। সাধারণত এসব ছাউনির পাশে ছোট একটি দোকান থাকতে পারে, কিন্তু এতবড় দোকান গড়ে উঠেছে এটা আমাদের জানা ছিল না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”


অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ সাদি উর রহিম জাদিদ জানান,“বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়ে সকালে একটি টিম পাঠানো হয়েছে, যেখানে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্য ছিলেন। যেসব দোকানের নির্মাণ কাজ চলছিল, সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। 


চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন একাধিকবার নগরকে ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি সিটি গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং ওয়ার্ডভিত্তিক পরিদর্শন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু কাজীর দেউড়ির এ ঘটনায় অনেকের প্রশ্ন এই ধরনের উদ্যোগ কি নগরবাসীর জন্য সেবার অংশ, না কি লোভী মহলের সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যম?


আরএক্স/