ছাত্রলীগের হামলায় শিকলে বন্দি ছাত্রদল নেতা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪০ অপরাহ্ন, ২১শে জুলাই ২০২৫


ছাত্রলীগের হামলায় শিকলে বন্দি ছাত্রদল নেতা
সুলতান বাপ্পি। ছবি: প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের রমায়ের খিল গ্রামের আইসার বাড়িতে শিকলে বন্দি অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন এক যুবক। পরিবারের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন তিনি। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের ধারাবাহিক নির্যাতনের ফলেই এমন পরিণতি হয়েছে তার।


শিকলবন্দি অবস্থায় থাকা ওই যুবকের নাম সুলতান বাপ্পি। তিনি দত্তপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।


আরও পড়ুন: অপারেশন ডেভিল হান্ট: লক্ষ্মীপুরে আওয়ামীলীগের ১১ নেতাকর্মী গ্রেফতার


পরিবারের অভিযোগ, ২০২১ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় মসজিদে দোয়া মাহফিল আয়োজন করেছিলেন বাপ্পি। এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে দফায় দফায় হামলা চালায় তার ওপর।


অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ নেওয়াজ, ছাত্রলীগ নেতা কাজী নিজাম ও বাবু। তাদের নেতৃত্বেই একটি সংঘবদ্ধ দল সুলতান বাপ্পিকে বিভিন্ন সময় মারধর করে বলে দাবি করেছে পরিবার।


বাপ্পির বড় ভাই সুলতান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া মাহফিল করায় বারবার হামলার শিকার হন বাপ্পি। একাধিকবার তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এতটাই ভয়ভীতি ও নির্যাতনের শিকার ছিলাম আমরা, যে তারা যদি দুপুর ১টাকেও বলে রাত ১টা, সবাই সেটাই বিশ্বাস করতে বাধ্য হতো। এখন আমার ভাইকে শিকলে বেঁধে রাখতে হয়।


বাপ্পির বাবা আবদুল লতিফ সরকার বলেন, ‘ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের নেতারা আমার ছেলের ওপর দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে। তাদের অত্যাচার আমার ঘরটাও ঠিক করতে পারিনি, শান্তিতে বাঁচতে পারিনি। এখন ছেলেকেও শিকলে বেঁধে রাখতে হচ্ছে।’



মা সাকিনা বিবি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার চোখের সামনে ছেলেটা সেকালে বন্ধি, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। ছেলেকে ছেড়ে দিলে সে পালিয়ে যায়, আবার কখনো মানুষকে মারতে যায়। তাই বাধ্য হয়ে তাকে শিকলে বেঁধে রাখি।  দয়া করে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।


স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আমিন বলেন, বাপ্পির একটাই দোষ সে ছাত্রদল করে, বিএনপি করে। এজন্যই তাকে বারবার মারধর করেছে ছাত্রলীগের ছেলেরা। কাজী বাড়ির দরজায় তাকে একাধিকবার মারধর করা হয়। 


আরেক স্থানীয় শাহাদাত হোসেন বলেন, গত ১৭ বছর ধরে বাপ্পি নির্যাতনের শিকার। ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিল, ভালো ছেলে ছিল। এখন মানসিক রোগী হয়ে গেছে।


আরেক বাসিন্দা ইয়াকুব বলেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা বেশিরভাগ সময় বাপ্পির মাথায় আঘাত করত। হয়তো সে কারণে সে ধীরে ধীরে মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে। 


স্থানীয় জসিম বলেন, যারা নিয়মিত বাপ্পি কে মারধর ও নির্যাতন করত তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। এছাড়া বাপ্পির চিকিৎসায় এগিয়ে আসা দরকার। 


চাচা আবদুল মালেক বলেন, ছাত্রদল করার কারণে সে হামলার শিকার হয়েছে। দোয়া মাহফিল আয়োজন করাটাই ছিল তার অপরাধ।


অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘ছাত্রলীগের কিছু ছেলেরা বাপ্পিকে মারধর করেছে, তবে আমি তাকে একাধিকবার রক্ষা করেছি। আমি নিজে কোনো হামলায় জড়িত নই।



অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা কাজী নিজাম দাবি করেন, আমরা তাকে মারধর করিনি। শুনেছি তার ভাই সোলায়মানই মাঝে মাঝে বাপ্পিকে মারতেন। এখন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে বিএনপি থেকে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য। 


আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে সাংবাদিকের উপর হামলা-গুলি, ৩ সাংবাদিক আহত



এ বিষয়ে দত্তপাড়া ইউনিয়নের বিএনপি নেতা তসলিম পাটোয়ারী বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাপ্পিকে বিভিন্ন সময় মারধর করেছে। আমরা চেষ্টা করছি তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার।


লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদলের নেতা হাসান মাহমুদ ইব্রাহিম বলেন, বাপ্পির বিষয়ে আমাদের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ভাই তার পরিবারকে সহযোগিতা করেছেন।


এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। পরিবার বলছে, দলীয় সিদ্ধান্ত পেলে তারা মামলা করবেন।



এসডি/