মাইলস্টোন ট্রাজেডি:

শিক্ষিকা মাসুকার মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শোকের ছায়া


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:০০ অপরাহ্ন, ২২শে জুলাই ২০২৫


শিক্ষিকা মাসুকার মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শোকের ছায়া
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান ওই স্কুলের প্রাইমারি শাখার বাংলা ভার্সনে প্রাইমারি শাখার ইরেজি শিক্ষিকা মাসুকা বেগম (৩৭) তার মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারজুড়ে চলছে শোকের মাতম। শিক্ষিকা মাসুকার মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত মাসুকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহরের মধ্যমেড্ডা সবুজ বাগ এলাকার সিদ্দিক আহমেদের মেয়ে। নিহতের বাবা জানান, দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে মাসুকা সবার ছোট ছিলেন। 


মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে তার মরদেহ তার বড় বোনের বাসা আশুগঞ্জে সোহাগপুরে পৌঁছলে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ তৈরি হয়। বাদ আসর জানানা শেষে তাকে সোহাগপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।


দীর্ঘ সাত বছর ধরে মাইলস্টোন কলেজে শিক্ষকতা করে আসছিলেন মাসুকা বেগম। ছাত্রছাত্রীদের কাছে তিনি শুধু শিক্ষকই নন, ছিলেন একজন বন্ধু, অভিভাবক, অনুপ্রেরণার উৎস। সততা, বিনয় আর দায়িত্ববোধে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী একজন মানুষ। দুর্ঘটনাটি ঘটে সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে। 


আরও পড়ুন: উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত উক্যসাইন মারমা আর নেই


মাইলস্টোন কলেজ সংলগ্ন এলাকায় একটি প্রশিক্ষণ বিমান জরুরি অবতরণের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে এবং মুহূর্তেই আগুন ধরে যায়। ওই সময় মাসুকা বেগম ক্লাস শেষ করে শিক্ষক কক্ষে ফিরছিলেন। আকস্মিকভাবে আগুনে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন। দ্রুত তাকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হলেও চিকিৎসকদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে তিনি রাত ১২টা ২০ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।


জীবনের শেষ সময়েও ছিলেন বাস্তব ও শান্ত মনের মানুষ। মৃত্যুর আগে সহকর্মীদের জানিয়েছিলেন—আমার মৃত্যুর পর যেন লাশটি প্রথমে আমার বড় বোন পাপড়ি রহমানের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং আমাকে আমাদের গ্রামের মাটি, সোহাগপুরেই দাফন করা হয়।


এমন আবেগঘন কথা জানিয়েছেন মাসুকার ঘনিষ্ঠ ভাগ্নি নিধি। তিনি বলেন, খালার ব্যবহার ছিলো মায়ের মতো। কখনো ঝগড়া-বিবাদে জড়াতেন না। সবসময় শান্ত, সংবেদনশীল, সবার ভালো চাইতেন।


আরও পড়ুন: ইশরাক ভাইয়ের মধ্যে ফ্যাসিস্টদের চরিত্র দেখতে পাই: সারজিস


তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর খালার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে জানা যায় তিনি বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি, শরীরের প্রায় ৪৫% পুড়ে গেছে। রাত ১২টা ২০ মিনিটে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানতে পারি, খালা আর বেঁচে নেই।


মাসুকা বেগমের বড় বোন জামাতা খলিলুর রহমান বলেন, আমি যখন মাসুকার বড় বোনকে বিয়ে করি, তখন মাসুকার বয়স ছিল মাত্র ৫-৬ বছর। আমি তাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতাম। কখনো কল্পনাও করিনি, এমনভাবে তাকে চিরবিদায় জানাতে হবে।


মাসুকার শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে আনা হয়। বোন জামাতার বাড়ি থেকে নেওয়া হয় গ্রামের খানবাড়ি এলাকায়। পরে সোহাগপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে বাদ আসর জানাজা শেষে তার দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।


এমএল/