টেকনাফে অপহৃত চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:২৫ পূর্বাহ্ন, ১৯শে মার্চ ২০২৩


টেকনাফে অপহৃত চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার
মুক্তিপণ আদায়কারি চক্রের ৬ সদস্য

কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের পাহাড় কেন্দ্রিক অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়কারি চক্রের ৬ সদস্যকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। যার মধ্যে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ২ জনকে। 


এমনকি বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে অপহৃত ৭ জনের মধ্যে ৩ জন সরাসরি অপহরণকারি চক্রের সাথে জড়িত ছিলেন। যাদের শুক্রবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। অপহরণকারি চক্রের ২ সদস্য ছাড়াও কথিত অপহরণে অংশ নেয়া চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।


শনিবার (১৮ মার্চ) কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম।


বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরা পাহাড়ি এলাকা থেকে ৯ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। এরপর মোহাম্মদ আমির (১১) ও রিফাত উল্লাহ (১২) নামের ২ জনকে ছেড়ে দিলেও জিন্মি রাখা হয়েছিল ৭ জন।


শুক্রবার সন্ধ্যায় উদ্ধার করা হয় ৭ জনকে। এরা হলেন, জাহাজপুরা গ্রামের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন (১৭), ফজল করিম (৩৮), জাবেরুল ইসলাম (৩৫), আরিফ উল্লাহ (২২), মোহাম্মদ রশিদ (২৮), মোহাম্মদ জাফর (৩৮), মোহাম্মদ জায়নুল ইসলাম (৪৫)।


এ ঘটনায় অপহরণকারি চক্রের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, স্থানীয় চৌকিদার মোহাম্মদ ইছাক, মো. সেলিম, আইয়ুব, মুসা, কালু ও নুরুলকে। যার মধ্যে স্থানীয় চৌকিদার মোহাম্মদ ইছাক ও মো. সেলিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।


এ ছাড়া এ ঘটনায় অপহৃত গিয়াস উদ্দিন, জায়নুল ইসলাম ও আরিফ উল্লাহ চক্রের সদস্য এবং গিয়াস চৌকিদার ইছাকের ছেলে।


সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, উদ্ধার পরবর্তী পাওয়া তথ্য মতে অপহৃত ব্যক্তিরা বাহারছড়া পাহাড়ি এলাকায় পানের বরোজে পানির ব্যবস্থা গেলে ৬ জন লোক এসে তাদের ধরে নিয়ে যায়। যারা ১৭ মার্চ শুক্রবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত আটক ছিল। এর পর তারা সকলেই মিলে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে ৮ ঘন্টা ধরে ৭ জন পাহাড়ে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকে। পুলিশ তাদের কৌশলে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।


এ ৭ জনের মধ্যে ৩ জন সরাসরি অপহরণের সাথে জড়িত বলে দাবি করেছেন পুলিশ সুপার। তিনি জানান, উদ্ধার হওয়া গিয়াস উদ্দিন, জায়নুল ইসলাম ও আরিফ উল্লাহ কৌশলে এদের সাথে অপহরণ হয়ে অপহরণকারিদের সহায়তা করেন। 


এ ৩ জনের কাছে মোবাইল ছিল। যে মোবাইলের মাধ্যমে নিজের পরিবার সহ অপর ৪ পরিবারের কাছে দফায় দফায় ফোন করে মুক্তিপণের টাকা দিতে বলে। ৭ জনের ৪ জন নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত এবং প্রহারে শিকার হলেও এ ৩ জন কোন ধরণের আঘাত বা প্রহারে শিকার হয়নি। এমনকি এদের জামা কাপড় সম্পূর্ণ পরিষ্কার ও সঠিক রয়েছে। এর মধ্যে গিয়াস উদ্দিনের পিতা স্থানীয় চৌকিদার মোহাম্মদ ইছাকও অপহরণকারি চক্রে জড়িত রয়েছে। এই চৌকিদারকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


চৌকিদারের জড়িত থাকার বিষয় নিয়ে পুলিশ সুপার জানান, চৌকিদারের ছেলে গিয়াস উদ্দিন অপহৃত হলেও সে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ ছিল এবং এই সংক্রান্ত কোন সংবাদ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশকে অবহিত করেনি। চৌকিদার নিজেই অপহৃত অপরাপরদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দ্রুত টাকা দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। 


চৌকিদার তার দ্বিতীয় স্ত্রীর মোবাইল ফোন থেকে সরাসরি অপহরণ চক্রের আইয়ুব নামের একজনকে সহায়তা করে। আইয়ুব এ অপহরণের ঘটনায় মুক্তিপনের টাকা বাহনকারি। এমনকি আইয়ুব নামের ঐ ব্যক্তি চৌকিদারের দ্বিতীয় স্ত্রীর মোবাইল ব্যবহার করে টাকা আদান প্রদানের কাজটি সরাসরি করেন। চৌকিদারের ছেলে গিয়াস উদ্দিন শুক্রবার সকালে মুক্ত হওয়ার ঘটনাটি জানার পরও গোপন রাখে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে চৌকিদার এ ঘটনা স্বীকারও করেন। তার নেতৃত্বে সাড়ে ৬ লাখ টাকা সংগ্রহ হলে চৌকিদার সন্দেহ দূর করতে নিজেও টাকা প্রদান করেছে।


পুলিশ সুপার এ ঘটনায় চক্রের অপর সদস্য মোহাম্মদ সেলিম নামের অপর এক জনকেও গ্রেপ্তারের সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ সেলিম অপহৃতদের পরিবারের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে জামা রাখেন বাড়িতে। টাকা পৌঁছানোর ১ ঘন্টা আগেই পাহাড়ে জিন্মি রাখা ৭ জনখে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর অপহৃতদের সেলিম, মুসা, কালু, নুরুল নিজ হেফাজতে নিয়ে আত্মগোপনে থাকবে বলে। যাতে পুলিশ আসল ঘটনা বের করতে না পারে। এমনকি আইয়ুব নামের ব্যক্তিকে কাকে মুক্তিপণের টাকা দিয়েছে এটা কেউ দেখেনি। মো. সেলিম, আইয়ুব, মুসা, কালু ও নুরুল জিন্মি রাখা ৭ জনের জন্য খাবার ক্রয় করে পাহাড়ে আসে এবং আত্মগোপনে রেখে দেয়। পুলিশ অভিযানে এদের শেষ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে।


কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, এ অপহরণের নেপথ্যে আর কে কে জড়িত তাদের গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বের করার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে চিহ্নিত অপর ৪ জনকেও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা হবে বলে জানান তিনি।


এ অপর ছাড়া গত ৬ মাসে টেকনাফের পাহাড় কেন্দ্রিক ৪১ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৭ জন রোহিঙ্গা হলেও ২৪ জন স্থানীয় বাসিন্দা। যেখানে ২২ জন মুক্তিপনের টাকা দিয়ে ফেরত আসার তথ্য জানিয়েছিল। সর্বশেষ গত ৩ মার্চ ২ শিশু অপহরণের ৮ ঘন্টা পর ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফেরত আসে। এ ছাড়া ২১ জানুয়ারি হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়ক পাহাড়ি ঢালার ভেতর থেকে মোহাম্মদ হোসেন নামে এক ইজিবাইক চালকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।


আরএক্স/