রামাদান হোক আমলের বসন্তকাল


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৫৫ পূর্বাহ্ন, ৩০শে মার্চ ২০২৩


রামাদান হোক আমলের বসন্তকাল
ফাইল ছবি

আরশের মালিক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মুসলিম মিল্লাতের উপর যে পাঁচটি মৌলিক বিধান নির্ধারণ করা হয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হল সাওম তথা মাহে রামাদানের রোজা। কুরআন বলছে- 'হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যাতে করে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো', (সূরা বাকারা-১৮৩)। রামাদান একজন বিশ্বাসী বান্দার জন্য আমলের বসন্তকাল। এই মাসে মুমিনের উপর রহমতের বারিধারা বর্ষিত হয়। নিজেকে সম্পূর্ণ পাপমুক্ত করার এক মোক্ষম সময় মাহে রামাদান।


বিশ্বনবী সা. পবিত্র মাহে রামাদানের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, পবিত্র মাহে রামাদান মাস দয়া, কল্যাণ আর ক্ষমার মাস অর্থ্যাৎ রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের মাস। আল্লাহর কাছে বাকী সকল মাসের চাইতেও এই মাস অধিক গুরুত্বপূর্ণ, অন্যান্য সকল মাসের চাইতে এই মাস সম্মানের, এই মাসের দিনগুলো সবচেয়ে সেরা দিন, এই মাসের রাতগুলো শ্রেষ্ঠ রাত। এই মাসের প্রতিটি মূহুর্ত মূল্যবান, কেননা এই মাসে একজন মুমিনের প্রতিটি নিশ্বাস মহান রবের গুণগান ও জিকিরের সমতুল্য, এই মাসে মুমিনের ঘুম প্রার্থনার সমতুল্য, এই মাসে একটি ফরজ অন্যমাসে সত্তরটি ফরজ আদায়ের সমতুল্য (শুয়াবুল ইমান,হাদিস-৩৩৩৬)। রামাদানে এক টাকা দান অন্য মাসে সত্তরটা দানের সওয়াব পাওয়া যায় আবার কারো কারো ক্ষেত্রে সাতশো গুণ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা বৃদ্ধি করে দেন। এই মাসে রয়েছে এমন এক রাত যা হাজার রাতের চাইতেও উত্তম যা শবে কদর, এই মাসে একটি আয়াত তেলোয়াত করা অন্য মাসে পুরো কুরআন তেলোয়াতের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। রামাদানের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে বিশ্বনবী সা. বলেন- 'নিঃসন্দেহে সে ব্যক্তি দূর্ভাগা বা হতভাগ্য যে রামাদান পেল অথচ নিজের গোনাহ মাফ করাইতে পারলো না অর্থ্যাৎ আল্লাহর ক্ষমা হতে বঞ্চিত' (মুসলিম-২৫৫১, তিরমিজি-৩৫৪৫)। আবার বলা হয়েছে- 'যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রোজা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দিবেন' (বুখারি-৩৮)। একজন মুমিনের আল্লাহর কাছে প্রিয় বান্দা হওয়ার অফুরন্ত সুযোগ আর সম্ভবনা নিয়ে মাহে রামাদান প্রতি বছর আমাদের হাতছানি দেয়। তাই একজন মুমিনের উচিত পুরো রমাদানকে কাজে লাগানো, প্রোডাক্টিভ রামাদান হিসেবে নেওয়া। নিজেকে নির্মাণ করার এই উপযুক্ত সময় আপনি কিভাবে কাটাবেন তার কিছুটা রূপরেখা পাঠকদের কল্যাণে তুলে ধরছি-


(১) তাকওয়া অর্জন করুন- অন্যান্য মাসের তুলনায় এই মাসে একজন মুসলমান আমলের ব্যাপারে অনেক যত্নশীল হয়। তাকওয়া অর্জনের প্রশিক্ষণ দেয় এই রামাদান। তাকওয়া মানে অন্তরে আল্লাহর ভয়। জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে আল্লাহর ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যক্তি জীবনে বাস্তবায়ন করার নাম ই তাকওয়া। রামাদানে রোজা রেখে দিনের বেলায় আমরা যেমন আল্লাহর ভয়ে লুকিয়েও কিছু খাই না, তদ্রুপ জীবনের প্রতিটি কাজে আল্লাহর অসন্তুষ্টি আছে এরকম সকল কাজ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ বিরত রাখার নাম ই তাকওয়া। যিনি তাকওয়া অবলম্বন করেন তাকে মুক্তাকি বলা হয়।  রামাদান এই শিক্ষা দেয় জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে কিভাবে তাকওয়ার প্রতিফলন ঘটাতে হয়। কুরআনের অসংখ্য জায়গায় তাকওয়া অর্জনের নির্দেশনা রয়েছে। তাকওয়া অর্জন প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর উপর ফরজ,  তাকওয়ার গুরুত্ব নিয়ে কোরআন বলছে- 'হে মুমিনগণ! তোমার আল্লাহকে ভয় করো, যেভাবে তাকে ভয় করা উচিত' (সূরা আল ইমরান-১২০)। তাকওয়া অর্জনকারীরা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত, কুরআন বলছে- ' নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই সবচেয়ে বেশি সম্মানী যে তোমাদের নিকট সবচেয়ে বড় মুত্তাকি' (সূরা  হুজরাত-১৩)। বিশ্বনবী সাঃ বলেছেন- 'যে ব্যক্তি মানুষের নিকট অধিক সম্মানিত হতে চায়, সে যেন আল্লাহকে ভয় করে অর্থ্যাৎ তাকওয়া অর্জন করে' (আল কামেলু ফিদ দুয়াফায়ি: ৮/৪০৫)। যেহেতু রোজা তাকওয়া সৃষ্টি করে তাকওয়া অর্জনের বিশেষ মৌসুম তাই আমাদের উচিত রামাদানে তাকওয়া অর্জন করা। পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ বলছেন- 'যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অর্জন করেছে তাদের জন্য সুসংবাদ দুনিয়া ও আখেরাতে' (সূরা ইউনুস: ৬৩-৬৪)।


(২) নিয়মিত কুরআন তেলোয়াত করুন- মাহে রামাদানের এত গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য যা অন্য যেকোন মাসের তুলনায় শ্রেষ্ট পূর্বেই তা উল্লেখ করেছি। এই মাসে রয়েছে হাজার রাতের চাইতে শ্রেষ্ট রাত "শবে কদর"। এই রাতেই আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল করেছেন এবং কুরআন নাজিলের কারণেই এই মাস এত মহিমান্বিত। এই মাসে কুরআনের একটি আয়াত তেলোয়াত অন্য মাসে পুরো কুুরআন তেলোয়াতের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। তাই কুরআন নাজিলের মাসে রামাদানের প্রতিদিনই আমাদের কুরআন তেলোয়াত করা উচিত। বিশেষ করে বুঝে বুঝে কুরআন পড়তে পারলে পবিত্র কুরআনের বিশেষত্ব উপলদ্ধি করা যাবে। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনই অন্ধকারে নিমজ্জিত পথহারা একটি জাতিকে হাত ধরে টেনে আলোর দিকে নিয়ে এসেছে এবং কুরআন নাজিলের উদ্দেশ্য এটাই যে দিকভ্রান্ত দিশেহারা মানুষকে টেনে আলোর দিকে নিয়ে আসা। কুরআন বলছে- "এই কিতাব! ইহা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করিয়াছি যাতে করে তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের নির্দেশে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বাহির করিয়া আনিতে পারো" (সূরা ইবরাহিম-১)।  আল-কুরআনের  আলোচ্য বিষয় যেহেতু মানুষ সুতরাং কুরআনের কাজই মানুষকে আলোর দিকে নিয়ে আসা। 


আজকে বিশ্বজুড়ে জ্ঞান বিজ্ঞানের যত উৎকর্ষতা, তা কুরআন থেকেই ধার করা। অথচ আমরা মুসলমানরা সে উপলদ্ধি থেকে অনেক দূরে। নিজেদের উৎকর্ষ  সাধনের জন্যই আমাদের উচিৎ পবিত্র কুরআন বুঝে বুঝে পড়ে তা হৃদয়ঙ্গম করা । আমাদের অবস্থা এই যে সারাবছর নামাজে সূরা ফাতিহা পড়ি অথচ অধিকাংশ মানুষই তার অর্থ জানিনা। কি পড়ছি তা ই জানিনা, তাই কুরআনকে জানার জন্য বুঝার জন্য হলেও কুরআন অর্থসহ পড়া উচিত তাহলে আমরা কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারবো কেন কুরআন পৃথিবীর শ্রেষ্ট গ্রন্থ। আমলের এই বিশেষ মৌসুমে প্রতিদিনই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের শেষে কুরআন পড়ুন, কেননা কুরআন কেয়ামতের দিন আপনার পক্ষে সুপারিশ করবে, বিশ্বনবী সাঃ বলেছেন- "রোজা ও কুরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে" (আহমাদ: হাদিস- ৬৬২৬)। আপনার রামাদান হোক কুরআনময় রামাদান।


(৩) বেশি বেশি দান সদকা করুন- ইসলামে দানের গুরুত্ব ব্যাপক ও বিস্তৃত। বিশেষ করে রামাদানে দানের ফজিলত আরো বেশি। রামাদানে এক টাকা দান করা অন্য মাসে সত্তর টাকা দানের সমান সওয়াব পাওয়া যায়, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে আল্লাহ পাক সাতশো গুণ পর্যন্ত সওয়াব বাড়িয়ে দেন। "নিশ্চয়ই ধনীর সম্পদে গরীবের হক রয়েছে(সূরা-যারিয়ার-১৯)। রোজায় সাড়াদিন অনাহার থেকে ক্ষুধার প্রতি গভীর উপলদ্ধির শিক্ষা দেয়। যারা ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরায় তাদের প্রতি নমনীয় ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার শিক্ষা দেয় রামাদান। রামাদানে দানের হাতকে সম্প্রসারণ করুন, প্রতিদিনই কিছুনা কিছু দান করুন সেটা এক টাকা দিয়েই  হউক না কেন। একজন মুমিন সচ্ছল ও অসচ্ছল দুই অবস্থাতেই আল্লাহর পথে দান করে, কুরআন বলছে- "যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল দুই অবস্থায় আল্লাহর পথে দান করে এবং ক্রোধ সংবরণকারী এবং ক্ষমাকারী আল্লাহ সৎকর্মশীলদের(তাদেরকে) ভালবাসেন" (আল ইমরান-১৩৪)। অসচ্ছল নিকট আত্মীয়দের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পর্যায়ক্রমে দানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।


নিকটাত্মীয় যারা অসচ্ছল তাদের বাসায় ইফতার পাঠান, প্রতিবেশির বাড়ীতে ইফতার পাঠান আল্লাহ তায়ালা খুশি হয়ে যাবেন। আগুন যেমন পানি নিভিয়ে ফেলে তেমনি দান সদকাও মানুষের গুনাহ মিটিয়ে ফেলে। যে ব্যক্তি নিয়মিত দান করে আল্লাহ তার অভাব দূর করে দেন। মনে রাখবেন - আপনি যদি দানের প্রশ্নে মানুষের প্রতি উদার হন তাহলে আপনার প্রতি আল্লাহর দান বরকত উদার হবে আবার আপনি যদি মানুষের প্রতি দেওয়ার ক্ষেত্রে সংকোচিত হন তাহলে আল্লাহও আপনাকে দেওয়ার ক্ষেত্র সংকোচ করে দিবেন। তাই আসুন মাহে রমাদানে নিয়মিত দান করি, বিশ্বনবী সাঃ বলেছেন -" একটি খেজুর দিয়ে হলেও তোমরা জাহান্নাম থেকে নিজেদের আত্মরক্ষা করো"( সহীহ মুসলিম- ২২২১)।


(৪) তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ুন - নিয়মিত তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ার উপযুক্ত সময় রামাদান। কারণ একজন রোজাদার সাহরী খেতে ভোররাতে উঠতে হয়, একটু সময় নিয়ে দশ মিনিট আগে উঠতে পারলেই তাহাজ্জুদ পড়া সম্ভব। আবার অনেকেই সারারাত জেগে একবারে সাহরী খেয়ে ফজরের নামাজ আদায় করে ঘুমায়, তাদেরও যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে সাহরীর আগে তাহাজ্জুদ পড়ে নেওয়া সম্ভব। যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় খুবই সহজ বিষয়। রামাদানের কিয়ামুল লাইলের কথা বলা হয়েছে, এর দুটো অর্থ দাঁড়ায়, রাতের নামাজ, আবার ইবাদতের জন্য রাতে দণ্ডায়মান হওয়া। তারাবির নামাজ যেমন কিয়ামুল লাইল আবার তাহাজ্জুদের নামাজও সালাতুল লাইলের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তায়ালা মুত্তাকিদের গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে কুরআনে বলেন- "তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় যেত এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতো"(সূরা আযযারিয়াত-১৭-১৮)। 


গভীর রজনীতে মহান আল্লাহ বান্দার একবারে নিকটে চলে আসেন! তাই তাহাজ্জুদের সময় হলো বান্দা তার মুনিবের সান্নিধ্যে যাওয়ার বড় এক মাধ্যম, যেহেতু তাহাজ্জুদ নামাজের ঘোষক স্বয়ং আল্লাহ পাক। রাতের এই আমল খুবই কার্যকরী, কুরআন বলছে- "নিশ্চয়ই রাতের বেলা জেগে উঠা আত্ম সংযমের জন্য বেশি কার্যকর, এবং স্পষ্ট কথা বলার জন্য বেশি কার্যকরী"(সূরা মুজাম্মিল-৬)। তাহাজ্জুদের গুরুত্ব নিয়ে বিশ্বনবী সাঃ বলেছেন - প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ' যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দিব। যে আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করবো, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দিব'(বুখারী,মুসলিম)। আসুন একটু সময় নিয়ে এই মহামূল্যবান আমলের অংশীদার হই! নিয়মিত তাহাজ্জুদের সঙ্গী হোন।


(৫) গুনাহের ব্যাপারে সতর্ক হোন- রোজার জন্য যে কয়েকটি শর্তের কথা বলা হয়েছে তারমধ্যে অন্যতম "পাপাচার থেকে বিরত থাকা"। রামাদানে যেহেতু একজন রোজাদার গুনাহের ব্যাপারে সতর্ক থাকে সেহেতু এই সতর্কতাকে অভ্যাসে পরিণত করা উচিত। একজন ঈমানদার ছোট ছোট গুনাহের ব্যাপারে সতর্ক থাকে, কেননা যারা ছোট ছোট গুনাহের ব্যাপারে সতর্ক থাকে তাদের কবিরা গুনাহ খুবই কম হয় আবার যারা ছোট ছোট গুনাহের ব্যাপারে উদাসীন তারা বড় তথা কবিরা গুনাহ করতে দ্বিধা করবে না। হযরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, একজন মুমিন গুনাহকে এভাবে দেখে থাকে যে, সে যেন এক পাহাড়ের নিচে বসে আছে যা তার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে। পক্ষান্তরে পাপী তার গুনাহকে দেখে যেন মাছি তার নাকের ডগায় বসেছে, তাকে এভাবে তাড়িয়ে দেয়। রাসূল সাঃ বলেছেন  "তোমরা নগণ্য ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান হও! কেননা সেগুলো মানুষের কাঁধে জমা হতে থাকে এরপর তাকে ধ্বংস করে দেয়" (মুসনাদে আহমাদ)।

তাই পবিত্র এই মাহে রামাদানে ছোট ছোট সগীরা গুনাহ থেকে সতর্ক থাকার প্র্যাকটিস চলমান থাকলে এই প্রভাব বাকী মাসগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। আসুন গুনাহ না করার বিষয়ে সিরিয়াস হই।


(৬) নিয়মিত ইস্তেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করুন- পবিত্র মাহে রামাদানে আপনার নিয়মিত আরেকটি আমল হোক ইস্তেগফার তথা মহান মুনিবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। বিশ্বনবী সাঃ বলেছেন- " যে ব্যক্তি রমাদান পেয়েও তার পাপ ক্ষমা করাইতে পারেনি তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক" (জামেউল উসুল- ১৪১০)। আমাদের নিয়মিত ইস্তেগফার পড়া উচিত। আল্লাহর কাছে ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত, এইভাবে  "হে আমাদের রব! তুমি আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা কর, আমাদের মন্দ কাজসমূহ গোপন কর এবং মৃত্যুর পর আমাদেরকে পুণ্যবানদের সাথে মিলিত কর" (সুরা আল-ইমরান-১৯৩)।  গুনাহ মাপের এই সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য আমাদের নিয়মিত ইস্তেগফার পড়া উচিত। যারা নিয়মিত ক্ষমা প্রার্থনা করে তারা আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা। আল্লাহ বলছেন- "আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থণা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু"(আল ইমরান-১০৬)।


(৭) নিজেকে নির্মাণ করুন- আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের এক সুমহান বার্তা নিয়ে প্রতিবছর রামাদান আমাদের নিকটে হাজির হয়। রামাদান ই উপযুক্ত সময় একজন মুমিন নিজেকে আল্লাহর রাহে সপে দিয়ে সে ধাচে নিজেকে তৈরি করার। অন্যান্য সময়ের তুলনায় রামাদানে একজন মুসলমান গুনাহের ব্যাপারে সতর্ক থাকে আর আমলের ব্যাপারে হয় বেশ মনোযোগী। সেহেতু কিছু কিছু আমলে নিজেকে এমনভাবে প্রস্তুত করা উচিত যেন এই আমালের প্রভাব সাড়া বছর থাকে। আল্লাহ বলেন- "আর সফলকাম হবে অই সব লোক যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের হুকুম পালন করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর নাফরমানী হতে দূরে থাকে (সূরা আন নূর-৫২)। মানুষের জীবন সংক্ষিপ্ত এবং নির্দিষ্ট, তাই নির্ধারিত মৃত্যু আসার আগেই আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত কেননা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমরা দুনিয়াতে থাকবো, আল্লাহ বলেন- "কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত সবাইকেই অবকাশ দিয়ে থাকেন পরে সে সময় যখন উপস্থিত হয় তখন তার এক মুহুর্ত আগে পরে হতে পারেনা" ( সূরা আন নাহল-৬১)।


রামাদান আত্মশুদ্ধির  প্রশিক্ষণ দেয়। একজন মানুষ চাইলে একটি রামাদানেই নিজেকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা হওয়ার সুযোগ নিতে পারে। এই রামাদান ভাল কাজে প্রতিযোগিতার মাস, আসুন ভাল কাজে প্রতিযোগিতা করি! কে কার থেকে বেশি ভাল কাজ করতে পারি, কে কত আগে রবের সান্নিধ্যের দিকে দৌঁড়াতে পারি! আমলের এই বসন্তকাল আগামীতেও পাব কিনা নিশ্চয়তা নাই, তাই আসুন নিজেকে মেরামত করি, পরিশুদ্ধ করি, আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য দৌঁড়াই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করুন, ক্ষমাপ্রাপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, রামাদানের পূর্ণ বারাকাহ দান করুন। মাহে রামাদানের বরকতের বসন্তে আমাদের রাঙিয়ে তুলুন।


লেখক: মুহাম্মদ মেহেদী হাসান

প্রভাষক, তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা, ঢাকা।