শ্রীপুরে বিদ্যুৎপৃষ্টে তিন নির্মাণ শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:০৮ পূর্বাহ্ন, ১লা এপ্রিল ২০২৩
গাজীপুরের শ্রীপুরে কোন প্রকার নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই একটি কারখানার বহুতল ভবন নির্মাণকাজ করার সময় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে তিন নির্মাণ শ্রমিকের নিহত হওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা ।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) দুপুর ১২টারে দিকে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফজল মামলা হওয়ার বিষয়টি জানান।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্বখণ্ড এলাকায় স্কাইনিট পাওয়ার কোম্পানির নিমার্ণাধীন বহুতল ভবনে নিচ থেকে ওপরে রড় ওঠাতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্টে তিন নির্মাণ শ্রমিক নিহত হন। স্কাইনিটের এই কারখানাটি “আরমাদা স্পিনিং” কিনে নিয়েছিল।
নিহত তিন শ্রমিক হলেন- নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চর কচ্ছপিয়া গ্রামের পিয়াস (২০), একই গ্রামের পাভেল (২৩) এবং জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জের মনোয়ার হোসেন (২৫)।
ওসি আবুল ফজল জানান, বৃহস্পতিবার রাতে নিহত মনোয়ার হোসেনের ভাই আনোয়ার হোসেন কারখানার মালিকসহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলায় আসামিরা হলেন- ভবনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আলিফ এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তা ইব্রাহিম খান, ফোরম্যান রাব্বানী এবং স্কাইনিট পাওয়ার কোম্পানির মালিক আরশেদ আলী। অভিযুক্তদের মধ্যে ইব্রাহিম খান ও রাব্বানীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আগুনে পোড়ার গন্ধ পাওয়া যায়। সকাল ৯টার দিকে কারখানার গেটে উৎসুক জনতার ভিড় জমতে শুরু করে। সাংবাদিকেরা নির্মাণাধীন ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। পরে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উপস্থিত হলে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় সেখানে কোনো মরদেহ দেখতে পাওয়া যায়নি। পরে এক শ্রমিক ইঙ্গিত করে জানান, মরদেহ বালির নিচে চাপা দেওয়া হয়েছে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বালির নিচ থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
মাওনা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার ইফতেখার হোসেন রায়হান জানান, আরমাদা স্পিনিং কারখানায় সকাল ৮টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কারখানার পশ্চিম পাশের তিন তলা ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে কর্মরত তিন নির্মাণ শ্রমিক বিদ্যুৎপৃষ্টে হয়ে মারা গেছেন।
তিনি বলেন, নিচ থেকে রড ভবনের ওপরে উঠানোর সময় পাশ দিয়ে যাওয়া ১১ হাজার ভোল্টের লাইনে তা পড়ে যায়। এতে বিদ্যুতায়িত হয়ে শ্রমিকদের মৃত্যু হয়। আমরা নিহতদের মরদেহ বালির নিচে চাপা দেওয়া অবস্থায় পেয়েছি।
ভবনের নির্মাণ শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, তাদের কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়া হয়নি। বরং তাদের সহকর্মীর মৃত্যুর পর মরদেহ বালির নিচে চাপা দেওয়া হয়।
মরদেহ বালির নিচে চাপা দেওয়ার কারণ হিসেবে কারখানার এক কর্মচারী বলেছেন, বিদ্যুৎপৃষ্ট হওয়ার পর তিন শ্রমিকের শরীরে আগুন ধরে গিয়েছিল। আগুন নেভানোর জন্যই তাদের বালুর নিচে চাপা দেওয়া হয়।
শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কিনা জানতে চাইলে কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ঘটনার সময় কারখানায় উপস্থিত ছিলাম না। মরদেহ বালিচাপা দেওয়ার বিষয়টিও আমার জানা নেই।