তদারকির অভাবে কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থী, ভবন না থাকায় পাঠদান বন্ধ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৫৮ অপরাহ্ন, ২৩শে মে ২০২৩


তদারকির অভাবে কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থী, ভবন না থাকায় পাঠদান বন্ধ
ছবি: জনবাণী

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ায় উদাসীনতা পাশাপাশি তাদের তদারকির অভাবে দিনদিন কমে যাচ্ছে বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা। তবে এখানে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার পেছনে অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন বা কেজি স্কুল প্রতিষ্ঠানও দায়ি রয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। 


উপজেলাজুড়ে অনুমোদন ছাড়া ব্যাঙয়ের ছাতার মতো গড়ে উঠছে কিছু কিন্ডারগার্টেন। আবার অনুমোদন থাকলেও তা অর্থের মাধ্যমে পড়ালেখায় মনোযোগী করছেন অভিভাবকরা। কয়েকটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভবনে ক্লাস সঙ্কট থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া হচ্ছে টিনসেট কক্ষে। আবার একাডেমিক ভবন না থাকার কারণেও বন্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। 


মঙ্গলবার (২৩ মে ) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সরিষাবাড়ী উপজেলার চর সরিষাবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১৬৩ থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তেমন দেখা যায়নি। 


এদিকে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বাঁধা সৃষ্টি করেছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মালেক। তবে তিনি প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ে আসেন না।  আসলেও বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে চলে যান বলে তথ্য রয়েছে। 


চর শিশুয়া বাঘমারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১৩৮। এর মধ্যে নারী শিক্ষক ৩ ও পুরুষ শিক্ষক ৩ জন রয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা ছিল। 


অন্যদিকে পোগলদিঘা ইউনিয়নের টাকুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাগজ কলমে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি থাকলেও বাস্তবে উপস্থিতি নেই। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে নিয়মিত না আসার অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তবে এ বিদ্যালয়ের বই নিয়ে শিক্ষার্থীরা পাঠদান নেয় পাশেই অবস্থিত মিশন স্কুল কিন্ডার গার্টেনে। কর্মকর্তারা কেউ পরিদর্শনে আসলে কিন্ডার গার্টেন থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে এসে দেখানো হয়। 


এদিকে চর সরিষাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ভাল থাকলেও ভবন সংকটের অভাবে নবম ও দশম শ্রেণীর মানবিক/বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া হচ্ছে টিনসেট কক্ষে। শ্রেণী কক্ষের সংকট নিরসনে উদ্যেগ না নেয়ায় মেধা বিকাশে বাধাগ্রস্থ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।


অপর দিকে সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ে একাডেমিক ভবন না থাকায় চলমান এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় কিছু ধরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। 


চর সরিষাবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহীদা আক্তার জানান, বিদ্যালয়ে ১৬৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছে। ৫ জন নারী শিক্ষিকা ও ২ জন পুরুষ শিক্ষক কর্মরত। বিদ্যালয়ে পরীক্ষা থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। আপনি অন্য সময়ে আসলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখতে পারতেন। 


এলাকার কয়েকজন অভিভাবক জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা আসেনা, শিক্ষার্থী উপস্থিতি নেই। তাই বাধ্য হয়ে অর্থ ব্যয় করে হলেও সন্তানদের কেজি স্কুলে পাঠাচ্ছি। 


এদিকে চর সরিষাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও আমরা টিনসেট কক্ষে পড়ালেখা করছি। চরাঞ্চল থাকি বলে কি আমরা ভালভাবে পাঠদান কর‍তে পারব না। চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন তারা ।


চর সরিষাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুল আলম (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, ভবন সঙ্কটের অভাবে টিনসেট কক্ষেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া হচ্ছে৷  বিদ্যালয়ে প্রায় ৯০% শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকে। একটি ভবনের জোর দাবি জানাই। 


এ বিষয়ে সাতপোয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের জানান, স্থানীয় এমপির মাধ্যমে শিক্ষা অধিদপ্তরে ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন দেওয়া হয়েছে।  


কথা হলে সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান শাহজাদা জানান, শিক্ষার্থীদের আসন সংকট থাকার কারণে একটা একাডেমিক ভবন নির্মাণ অত্যন্ত জরুরী। বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১১ শত জন। উপজেলার ভিতরে এসএসসি ফলাফলে এই প্রতিষ্ঠান সন্তোষজনক। তবে ভবন না থাকার কারনে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময় গুলোতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ থাকে। 


উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা ইয়াসমিন জানান, ১৩৪ টি সরকারী প্রাথমিক সংখ্যা। আমরা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করার লক্ষে সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছি। যারা বিদ্যালয়ে আসে না তাদের বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য পরমর্শ দিয়েছি। আর নিজেরা মনিটরিং করতেছি দেখতেছি।  


উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানান, বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিশ্চিত করনের জন্য মনিটরিং সব সময় করা হয়। 


জেবি/ আরএইচ