‘সার্টিফিকেট ছিঁড়ে’ ফেলা যুবক এখন পরিবারের বোঝা


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:৩৪ অপরাহ্ন, ৩১শে মে ২০২৩


‘সার্টিফিকেট ছিঁড়ে’ ফেলা যুবক এখন পরিবারের বোঝা
ছবি: জনবাণী

নীলফামারীর ডিমলায় চাকরি না পাওয়ায় হতাশায় একাডেমিক সব সনদপত্র ছিঁড়ে ফেলা বাদশা মিয়া এখনো বেকার। বিষয়টি একাধিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।


জানা যায়, বাদশা মিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সুন্দর খাতা গ্রামের বাসিন্দা মহুবার রহমানের ছেলে। অভাবের সংসারে ছয় ভাই–বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। ২০১৪ সালে তিনি নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেন।


তবে অর্থের অভাবে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে পারেননি। বাদশা ২০০৭ সালে জিপিএ ৩.৯২ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগে দাখিল, ২০০৯ সালে জিপিএ ৪.০৮ পেয়ে বিজ্ঞান বিভাগে আলিম এবং ২০১৪ সালে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ২.৬৬ জিপিএ নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। 


সনদ ছেড়ার পূর্বে বাদশা ফেসবুক লাইভে বলেন, আসলে আমার ভাগ্যটাই খারাপ। কত মানুষ ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়া করে খাচ্ছে। আর আমি এত সার্টিফিকেট নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও একটা সরকারি বা বেসরকারি চাকরি জোটাতে পারিনি। সনদপত্র অনুযায়ী চাকরির বয়স শেষ, এখন এগুলো রেখে লাভ কী? 


আরও পড়ুন: বাঁচতে চায় ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত মালতী


তিনি বলেন, ছাত্র জীবনে আমার একটা স্বপ্ন ছিল, পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা চাকরি করবো। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করে দেখছি বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেটা আমার যোগ্যতা বা পারিপার্শ্বিক যেকোনো কারণেই হোক। এ সার্টিফিকেটের জন্যেই আমাকে এখন কথা শুনতে হয়।


তিনি আরও বলেন, এসব সনদ না থাকলে হয়তো আমি সব ধরনের কাজে অংশগ্রহণ করতে পারতাম। যেহেতু এ সার্টিফিকেটগুলো আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই এগুলো না রাখাই মনে হয় ভালো বলেই এক এক করে তিনি তার সবগুলো সনদ ছিঁড়ে ফেলেন।


এলাকাবাসীরা জানান, বাদশা মিয়া এ গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মহুবার রহমানের ছেলে। অভাবের সংসারে ছয় ভাইবোনের মধ্যে বাদশাই সবার বড়। ২০১৪ সালে তিনি নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তবে অর্থের অভাবে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে পারেননি। বাদশা ২০০৭ সালে বিজ্ঞান বিভাগে দাখিল, ২০০৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগে আলিম সম্পন্ন করেন।


বাদশা মিয়ার বাবা মহুবার রহমান জানান, চাকরির বয়সসীমা শেষ হওয়ায় বেশ কিছুদিন থেকে হতাশায় ভুগছিল বাদশা। দিন দিন হতাশা বেড়ে যাওয়ায় সে তার একাডেমিক সার্টিফিকেটগুলো কাউকে না জানিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছে।সে এখনো বেকার হয়ে বাড়িতে বসে আছে,সরকারের কাছে অনুরোধ আমার ছেলেকে যেন একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়।


আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে কমেছে মুরগির দাম


জানতে চাইলে বাদশা মিয়া বলেন, ‘আমার বাবা খেয়ে না খেয়ে আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা ও ছোট ভাইবোনদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। বর্তমান সমাজে সবচেয়ে অসহায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত ছেলে। এরা না পারে চাকরি জোটাতে, আবার অর্থের অভাবে না পারে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে। তাই চুপিসারে ঢাকা ও বগুড়া শহরে প্রায় সময়ে রিকশা চালিয়ে উপার্জন করেছি। এলাকার কৃষিশ্রমিকদের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জায়গায় কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হয়েছে।’


বাদশা মিয়া আরও বলেন, ‘সনদ ছিঁড়ে ফেলার পর রোজ নামে একটি কুরিয়ার সার্ভিস আমাকে চাকরি দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে তিন মাস চাকরি করার পর এক মাসের বেতন দেওয়ায় চাকরি ছেড়ে চলে এসেছি। অপর দিকে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঢাকায় কনস্ট্রাকশনের কাজে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে শ্রমিক হিসেবে আমাকে দৈনিক হাজিরায় কাজ দেওয়ায় তা ছেড়ে চলে আসি।’


জেবি/ আরএইচ/