ত্রিশালে রঙিন মাছ চাষে সফল উদ্যোক্তা মিনু


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৪৪ অপরাহ্ন, ২রা আগস্ট ২০২৩


ত্রিশালে রঙিন মাছ চাষে সফল উদ্যোক্তা মিনু
রঙিন মাছ খাবার দিচ্ছেন সাইফুল ইসলাম মিনু

ঢাকা সিটি কলেজ থেকে বি.কম পাস করা মিনু এখন রঙিন মাছ চাষের সফল উদ্যোক্তা। ১৭ বছর আগে ০৬ টি বিদেশী রঙিন মাছ চাষের মাধ্যমে শুরু করেন যাত্রা। পরে ইটের চৌবাচ্চায় চাষ শুরু হয়। এরপর বড় আকারে ৭ টি পুকুর থেকে শুরু করে ১৭ বছরে বানিজ্যিক ভাবে দেশে বিদেশে মাছ বিক্রির মাধ্যমে ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও গফরগাঁও উপজেলার সিমান্তবর্তী বারবাড়িয়া ইউনিয়নের লক্ষনপুর গ্রামের খামারী সাইফুল ইসলাম মিনু বাহারি রঙের বিদেশী মাছ চাষ করে সফল একজন উদ্যোক্তা। বর্তমানে ৩০ বিঘা জমিতে তার খামারে ২৬টি পুকুর রয়েছে। এসব পুকুরে বিদেশী মাছ ছাড়াও তিনি বর্তমানে দেশী মাছের চাষাবাদ করেন। দুই উপজেলার সিমান্ত এলাকা হওয়ায় পুকুর গুলো ত্রিশাল ও গফরগাঁও উপজেলায় পড়েছে।


সরেজমিনে দেখাযায়, দুই উপজেলার সিমান্তবর্তী এ অঞ্চলের রঙিন মাছের সফল উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম মিনু। তার আল-আমিন এসোরটেড হ্যাচারি অ্যান্ড ফিশারিজ নামের রঙিন মাছের খামার রয়েছে। এছাড়াও খামারে ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পুকুর ও চৌবাচ্চা রয়েছে। তার পাশাপাশি বিদেশী জাতের কুকুর, বিড়াল, পাখিসহ নানান প্রজাতির বিদেশী ফল শাকসবজির সমাহার রয়েছে খামারে। এ এলাকায় বিদেশী রঙিন মাছ চাষী হিসেবে মিনু সবার কাছে পরিচিত। তার খামারে এসব দেখতে প্রতিদিন দর্শনার্থীরাও ভিড় করছেন। তিনি এ অঞ্চলের প্রথম রঙিন মাছ চাষী। তিনি ১৭ বছর উৎপাদিত রঙিন মাছ বিক্রি করেছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সেই সঙ্গে পাঠিয়েছেন বিদেশেও। মিনু সফল একজন উদ্যোক্তা তার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই এখন রঙিন মাছ চাষে উৎসাহিত হয়ে বানিজ্যিক ভাবে বিক্রি করছেন। কিন্তু সেই সফল চাষী মিনু করোনা কালীন সময় থেকে রঙিন মাছ বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। বর্তমানে তিনি একটি বড় পুকুরে রঙিন মাছের চাষ করলেও বাকী গুলোতে দেশী মাছের চাষ করছেন।


এলাকার স্থানীয় রহমত আলী, আব্দুল আওয়াল বলেন, আমাদের এ এলাকা ত্রিশাল ও গফরগাঁও উপজেলা সিমান্ত এলাকা লক্ষনপুর গ্রাম। এ এলাকায় প্রথম রঙিন মাছ চাষের সফল উদ্যোক্তা মিনু ভাই। মিনু ভায়ের কাছ থেকে দেখে অনেকেই এখন রঙিন মাছ চাষ করছেন। মিনু ভায়ের কাছে রংগৃন মাছ থাকলেও তিনি এখন বিক্রি করেন না। মিনু ভাই সৈাখিন একজন মানুষ। তিনি খামারে বিদেশী পশু, পাখি লালন পালনসহ বিদেশী ফল, ফুলের চাষও করেন।


রঙিন মাছ দেখতে আসা দর্শনার্থী জাহিদ খন্দকার, মামুনুর রশিদ, ইশরাক হোসেন বলেন, অনেকের কাছে শুনেই খামারে দেখতে এসেছি। রঙিন মাছকে হাত দিয়ে পানিতে খাবার দিলেই ঝাকে ঝাকে মাছ চলে আসে। দেখতে অনেক ভাল লাগে। মাছের সাথে খেলা করে কখন যেন সময় চলেযায়। খামারে মাছের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন বিদেশী কুকুর, বিড়াল, পাখিসহ বিদেশী ফল ও ফুলের সমাহার। দেখেই যেন মনজুড়িয়ে যায়। মিনু এ এলাকার সফল একজন রঙিন মাছ মাষের সফল উদ্যোক্তা।


সাইফুল ইসলাম মিনু বলেন, আমার বেড়ে উঠা ঢাকার মানিকগঞ্জে। সেখানেই ব্যবসা বানিজ্য। হঠাৎ গ্রাম্য পরিবেশে বসবাস করার ইচ্ছে জাগে। তাই ১৯৯৫ সালে এ এলাকায় আসি। নব্বইয়ের দশকে এ অঞ্চলের রেণু পোনার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরিচয় হয়। ১৭ বছর আগে প্রথমে জায়গা ভাড়া নিয়ে চৌবাচ্চায় ছোট পরিসরে রঙিন মাছের চাষ শুরু করি। পরে জমি কিনে বাণিজ্যিকভাবে রঙিন মাছের চাষ শুরু করি। ২০০৭ সালে অ্যাকুয়ারিয়ামের মাধ্যমে মাছ চাষ শুরু। ওই সময় ক্রেতা কম থাকলেও ভালো দাম পাওয়া যেত। তারপর জাপান থেকে ছয়টি কই কার্প মাছের পোনা সংগ্রহ করে রেণু উৎপাদনের মাধ্যমে পোনার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। পরে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও চীন থেকে প্রায় ২৪ প্রজাতির মাছ এনে ব্যবসা আরো প্রসারিত করেছি। আমি ৩০ বিঘা জমিতে ২৬টি পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ  করছি। এর মধ্যে রয়েছে ভিয়েতনামের শোলের পোনা, জাপানিজ কই কার্প, ক্যান্ডি প্যাটি, ফান টেইল মিল্কি, বেনিøগই, জেব্রা মেল, গোল্ড ফিশ, কই কার্প, কোহাকো জাপানিজ কই, আলবেনিও শার্ক ১৫-২০ প্রজাতির মাছের সাথে দেশী মাছও রয়েছে। একই সঙ্গে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই বা কালো মাছির লার্ভাও চাষ করছি। এখান থেকে দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা অনলাইনে যোগাযোগ করে রঙিন মাছ কিনে নিয়ে যান। এখন এ এলাকার অনেকেই রঙিন মাছ চাষ করে বানিজ্যিক ভাবে বিক্রি করছেন। করোনাকালীন সময়ের পর থেকে আমি রঙিন মাছ বিক্রি বন্ধ রেখেছি।


তিনি আরও বলেন, রঙিন মাছ এ এলাকায় এখন অনেকেই চাষ করে বানিজ্যিক ভাবে বিক্রি করছে। আমি একটি পুকুরে রঙিন মাছ চাষ করি। গোসলের সময় তাদের খাবার দেই, খেলা করি। শহর থেকে গ্রাম্য পরিবেশ আমার কাছে ভাল লাগে। তাই মাছ, পশু, পাখি ,ফল শাক, সবজি নিয়েই আছি। অনেকেই আমার খামার দেখতে আসে।


আরএক্স/