শেখ হাসিনার উপহার, প্রাণীর পাশেই ডাক্তার


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:৪৮ অপরাহ্ন, ২২শে আগস্ট ২০২৩


শেখ হাসিনার উপহার, প্রাণীর পাশেই ডাক্তার
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প

কয়েক বছর আগেও যেখানে হাস-মুরগী, গবাদিপশু পালন করাকে তেমন কেউ পেশা হিসেবে চিন্তা করতো না, বর্তমানে এই পেশাই অত্যন্ত জনপ্রিয় হিসেবে রুপ নিয়েছে দেশের সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে। গবাদি পশু পালনের মাধ্যমে বহু বেকার লোকের হয়েছে কর্মসংস্থান। ব্যাপক অর্থনৈতিক সাফল্যের কারণে শুধু গ্রামের মানুষের মধ্যেই এই পেশা আর সীমাবদ্ধ নেই। বহু শিক্ষিত ছেলেমেয়েই আজকাল হয়ে উঠেছে খামারী। স্বাবলম্বী হয়ে বেকারত্বকে বিদায় জানিয়ে নিজেকে দাঁড় করিয়েছে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে।


তবে ব্যবসার পরিসর যত বৃদ্ধি পায় ততই এর ভেতরের জটিলতাগুলো সামনে আসতে থাকে। আর এই পেশার অন্যতম প্রধান সমস্যাগুলোর একটি হলো গবাদিপশুর সুস্থতা এবং তাৎক্ষনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। 


দেশে প্রাণিসম্পদ খাতের যথেষ্ট সমৃদ্ধি ঘটলেও তাৎক্ষণিক চিকিৎসার অভাবে মারা যায় অনেক পশুপাখি এবং গবাদিপশু। দূরত্বের কারণে উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা থেকে সেবাবঞ্চিত হন অনেক খামারি, কারণ অসুস্থ এবং বৃহৎ আকারের গবাদিপশু বহন করে হাসপাতালে নেয়া একটি দুরুহ কাজ।


এ লক্ষ্যেই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রান্তিক খামারিদের দোরগোড়ায় আধুনিক ও জরুরি প্রাণিচিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেবার উদ্দেশ্যে দেশে এই প্রথম মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক চালু করেছে। ভ্রাম্যমান এই প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিকে করে ডাক্তার ও চিকিৎসা যাবে রোগী তথা অসুস্থ প্রাণীর কাছে। অর্থাৎ, চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাবে বাড়িতে বসেই।


মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক হচ্ছে একটি ভ্রাম্যমান প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিক যার মূল উদ্দেশ্য হলো দ্রুততম সময়ে খামারীদের দোরগোড়ায় জরুরি প্রাণিচিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়া। এই ব্যবস্থার ফলে ভারী ও অসুস্থ গবাদিপশু নিয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে যাওয়ার ভোগান্তি পোহাতে হবে না বরং ভ্রাম্যমান এই ভেটেরিনারি ক্লিনিক অসুস্থ পশুর কাছে আসবে। ক্লিনিকগুলো দেখতে অনেকটা সাধারণ জিপ গাড়ি বা ডাবল ক্যাবিন পিকআপের মতো। এর দু’টি অংশ রয়েছে। গাড়ির সামনের অংশ চিকিৎসক ও তার সহকারির বসার জন্য এবং পেছনের অংশ অত্যাবশ্যক চিকিৎসা সামগ্রী, ওষুধ ইত্যাদি বহন করার জন্য।


প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একটি কেন্দ্রীয় টোল ফ্রি হটলাইন নাম্বার আছে, ১৬৩৫৮। এখানে ফোন করে জরুরি সেবা চাইলে তা তৎক্ষণাত সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে একটি করে ডেডিকেটেড কর্পোরেট মোবাইল ফোন নাম্বার দেয়া আছে। সেখানে ফোন করেও জরুরি সেবা পাওয়া যাবে।


এছাড়া প্রত্যেক উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা ভেটেরিনারি সার্জন শুধু জরুরি ফোন পেয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়ার কাজেই এ ক্লিনিকটি ব্যবহার করবেন না, বরং তারা এটি নিয়ে নিয়মিত স্ব স্ব উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল রুটিন করে এবং আগে থেকে জানান দিয়েও পরিদর্শন করবেন।


ভ্রাম্যমাণ প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিকগুলোতে থাকছে রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি, ওষুধ এবং চিকিৎসাসামগ্রী। জরুরি চিকিৎসার পাশাপাশি চিকিৎসক এবং দক্ষ কর্মীরা ক্লিনিক-ভ্যানে চেপে রুটিন করে নিজ উপজেলার অন্তর্ভুক্ত ইউনিয়ন ও গ্রামগুলোতে নিয়মিত পরিদর্শনে যাবেন এবং চিকিৎসা, ওষুধ, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেবেন। দেশের ৬১টি জেলার ২৯৯টি উপজেলায় এরই মধ্যে ভ্রাম্যমাণ প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিক কাজ করছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন এলডিডিপি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, টিকা ও অন্যান্য ওষুধপত্রসহ ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকগুলো সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। এরই মধ্যে ২৯৯টি ক্লিনিক প্রস্তুত করা হয়েছে। অবশিষ্ট ক্লিনিকগুলোও শিগগিরই উপজেলাগুলোতে পাঠানো হবে।


“শেখ হাসিনার উপহার, প্রাণীর পাশেই ডাক্তার”এই স্লোগানকে ধারন করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক উন্নত দেশের আদলে দেশের প্রান্তিক খামারিদের দোরগোড়ায় আধুনিক ও জরুরি প্রাণিচিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেবার এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে ফোন করলেই এখন থেকে খামারিদের দোরগোড়ায় দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে আধুনিক এ ক্লিনিক। এরই মধ্যে সরকার সব উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে করপোরেশন মোবাইল সংযোগ দিয়েছে, যেটা সেই উপজেলার জন্য নির্ধারিত। এটি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাই সমন্বয় করবেন। প্রতি উপজেলায় একজন ভেটেরিনারি সার্জন আছেন, উপ-সহকারী কর্মকর্তা আছেন কয়েকজন। পশুপাখির চিকিৎসায় সব ধরনের  আধুনিক মেডিকেল সুবিধা এ ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকে আছে।


প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো: আব্দুর রহিম বলেন, এখন থেকে খামারিরা আর নিজেকে একা মনে করবেন না। তাদের আত্মবিশ্বাস, বিনিয়োগ এবং উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে বহুলাংশে। সেই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত ‘ওয়ান হেলথ’ অর্থাৎ মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের জন্য একই রকম সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পথে একধাপ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।


আরএক্স/