ডিমলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০ টি পরিবার পানিবন্দি


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:৫০ অপরাহ্ন, ২৬শে আগস্ট ২০২৩


ডিমলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০ টি পরিবার পানিবন্দি
পানিবন্দি হয়ে পড়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় তিস্তা নদীর একটু পানি বৃদ্ধি পেলে পানিবন্দি হয়ে পড়েন একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫০ পরিবার। এমন  অভিযোগের সত্যতা মিলিছে উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানীর ছাতুনামা কেল্লাপাড়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে।


জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২য় পর্যায়ের ১ কোটি ২ লাখ ৫০  হাজার ব্যয়ে ১ একর খাস জমিতে ৫০ টি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করে  হস্তান্তর করা হয়। আশ্রয়ন প্রকল্পের এই ঘরগুলো অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় স্যাঁতসেতে পরিবেশ,  ঘরের উঠান ও চলাচলের রাস্তা নাই বললেই চলে। এছাড়া ঘর হস্তান্তরের কিছুদিনের মধ্যে দেওয়ালে ধরেছে ফাঁটল।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আশ্রয়ন প্রকল্পে যাওয়ার একমাত্র  রাস্তাটি গত কয়েকদিন আগের বন্যায় কয়েক স্থানে ভেঙে গেছে। আশ্রয়ন প্রকল্পে যেতে হলে জন চলাচলের রাস্তায় কোথাও একহাটু পানি কোথাও আবার তার চেয়ে বেশি। ঘর গুলোর উঠানে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সুবিধাভোগী পরিবারগুলো। আশ্রয়ন প্রকল্পের প্রবেশের প্রধান গেট দিয়ে পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থানে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। প্রবেশের গলিতে পানি প্রায় একহাটু পরিমান।


আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী আরজিনা বেগম বলেন, ঘর ফাইটা যায়, অফিসের লোকজন আইশা ঠিক কইরা দিয়া যায়। এমনি কইরা দুই তিনবার ঠিক কইরা দিয়া গেছে। এর আগেও দরজার উপরে  ফাইটা গেছে ঠিক কইরা দিছে। এবার তো ফাটছে ওয়ালের মাঝখানে,আবার ঠিক কইরা দিয়া গেছে। এই ভাবে তো বাচ্চা-কাচ্চা নিয়া বসবাস করা ভয়ের ব্যাপার। ওইটা ভালো না কইরা দিলে ছোট বাচ্চা-কাচ্চা নিয়া থাকার সমস্যা। 


৪৯ নং ঘরের মালিক জয়গুন জানান,  খুব বন্যা হইলে আঙ্গরে(আমাদের) সমস্যা হয়। এটা তো সমাধান করা নাগবো(লাগবো)। বন্যায় আমার ঘরের পূর্ব পাশের মাটি ভাইঙ্গা(ভেঙে) গেছে। চেয়ারম্যান, মেম্বার কয়েকদিন আগে আইছিল(এসেছিল), তারা দেইখা(দেখে) গেছ। কিন্তু কামের কাম তো কিছুই হয় না। সবাই দেইখা(দেখে) যায় কামের কাম কিছুই হয় না। 


৬ নম্বর ঘরের বাসিন্দা বাহার আলী জানান, বারান্দা পর্যন্ত পানি উঠে। পাশের যে স্কুল ঘর আছে ওইখানে  একহাটু পানি হয়। সবাইকে বলি কিন্তু কোনো কাজ হয় না। শরমে আর কাউকে বলি না।


৫ নম্বর ঘরের বাসিন্দা ফুলোরা বেগম বলেন, পানি যখন উঠে তখন খাটের উপরে উঠি। একটা খাট কিনছি ওই খাটে লুকি থাকি। বন্যা আইলে(আসলে) খাওয়া দাওয়ার কথা বাদ দেই। আর একটা সিমেন্টের চুলা আছে সেইটা খাটের ওপরে তুলি রান্না করি। এইবারসহ চার বার বান (বন্যা) আইলো(আসলো) কিন্তু চেয়ারম্যান তো একটা বারো আইলো(আসলো) না বানো (বাঁধ)ও দিলো না।


১ নম্বর ঘরের বাসিন্দা জানান, হাটু পর্যন্ত পানি উঠে কিন্তু কিছু করার নাই। বেটারা আইশা দেইখা যায় কিন্তু কিছু তো করে না। রান্না করি একটা চুলা আছে চুলা উপরে তুলি রাখি।


৪৮ নম্বর ঘরের বাসিন্দা মশিয়ার রহমান জানান, বর্তমানে তো নদীর পানি কি বলে বাড়ছে রাতে পানি হাটুর ওপরে উঠবে। শুধু উঠানে নয়, বারান্দা ও রুমেও পানি উঠে। একদিন তো রাত ৩ টায় ঘুম থেকে উঠে দেখি জুতা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। রুমে পানি উঠেছিল বিছানা থেকেই পা ধুয়েছিলাম। সরকারের লোকজন যখন বাড়ি গুলো তৈরী করেছে তখন আরেকটু উঁচু করলে পানি উঠতো না। আর কয়েকটা বাড়ি ফাঁটল ধরেছে। অলিয়ার রহমান নামের একজন এসে কয়দিন পরপর এসে ঠিক করে দিয়ে যায়।


আমাদের এদিকে সিমেন্টের চুলা বেশি, রান্না-বান্না বিছানায় উঠে করি। খাওয়া দাওয়া বিছানায় করি। সবাই আশে আর দেখে, কেউ কাজ করে না। ঘরগুলো তৈরী করে দিয়েছে আর কেউ কোনো কাজ করে না।


এ বিষয়ে উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হককে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।


ঘটনাস্থল থেকে ডিমলা উপজেলা ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মেজবাউর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোন কথা হলে তিনি জানান, বিগত বন্যায় রাস্তাটি ভেঙে গেছে কাবিখা প্রকল্পে রাস্তাটি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধান রাস্তার পার্শ্ব রাস্তা নাকি আগেই থেকে এমন ভাঙা ছিল এমন প্রশ্নে জবাবে বলেন, এখানে মতামত দেওয়ার কি আছে? বললাম যে কাবিখা দেওয়া হয়েছে। কাবিখা দিয়ে রাস্তা ঠিক করা হবে। মতামতের তো কিছু নাই! ফাটল বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না দেখে তো বুঝতে পারবো না। আপনি অফিসে নিয়ে আসেন এসে দেখান আপনি বললেন আর আমি বিশ্বাস করবো!। আপনার অভিযোগ থাকলে আপনি অফিসে এসে দেখান, মুখে বললে তো বিশ্বাস করবো না।


 উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, আমি তো এখানে নতুন এসেছি। আপনি যে যেখানকার কথা বলেছেন ওই স্থান মার্ক করতে পারতেছি না। তবে খোঁজ খবর নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো।


আরএক্স/