কক্সবাজারে ডেঙ্গু বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে!


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:২৯ অপরাহ্ন, ২৮শে আগস্ট ২০২৩


কক্সবাজারে ডেঙ্গু বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে!
প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলছে। জুলাই মাসের চেয়ে আগস্ট মাসে আক্রান্ত বেড়েছে ১ হাজার ৬৮ জন। যেখানে জুলাই মাসের ৩১ দিনে কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ৩ হাজার ২৫২ জন। অথচ আগস্ট মাসের ২৭ দিনে আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৫২০ জন। আক্রান্ত বিবেচনায় জুলাই মাসে প্রতিদিন গড়ে আক্রান্তের হার ছিল ১০৪৯০.৩২ শতাংশ আর আগস্ট মাসে প্রতিদিন গড়ে আক্রান্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৬৭৪০.৭৪ শতাংশ। ফলে জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে প্রতিদিন গড়ে আক্রান্ত বেড়েছে ৬২৫০.৪২ শতাংশ।


কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দেয়া এক তথ্য বিবরণীতে বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।


প্রাপ্ত তথ্য বিবরণী মতে, গত এক সপ্তাহে কক্সবাজারে ডেঙ্গু রোগে নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৬৮ জন। যার মধ্যে ১ হাজার ২৯৭ জন রোহিঙ্গা এবং ২৭১ জন স্থানীয় বাসিন্দা।


তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজারে মোট ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী ১০ হাজার ২২৬ জন। যার মধ্যে ৮ হাজার ৫৩৮ জন রোহিঙ্গা ও ১ হাজার ৬৮৮ জন স্থানীয় রয়েছেন। কিন্তু ৭ দিন আগে ২১ আগস্টের দেয়া তথ্য বিবরণীতে দেখা যায়, কক্সবাজার জেলায় মোট ৮ হাজার ৬৫৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিলেন। যেখানে রোহিঙ্গা ছিলেন ৭ হাজার ২৪১ জন ও স্থানীয় ছিলেন ১ হাজার ৪১৭ জন।


কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহ ফাহিম আহমদ ফয়সাল জানিয়েছেন, জানুয়ারি থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জন রোহিঙ্গা ও ২ জন স্থানীয়। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৩ জন।


তিনি জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত বিবেচনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও তার আশে-পাশের এলাকা ক্রমাগত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৪৭৪ জন। যেখানে রোহিঙ্গা ৮ হাজার ৩৪২ জন এবং স্থানীয় ১ হাজার ১৩২ জন। গত ২১ আগস্ট পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১৩ জন। যেখানে রোহিঙ্গা ৭ হাজার ৭২ জন ও ৯৪১ জন স্থানীয় বাংলাদেশী।


এ পরিসংখ্যা মতে, গত ৭ দিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক নতুন করে ১ হাজার ৪৬১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। যেখানে ১ হাজার ২৭০ জন রোহিঙ্গা এবং ১৯১ জন স্থানীয় বাংলাদেশী আক্রান্ত হয়েছেন।


এর বাইরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫২ জন। যেখানে ৫৫৬ জন স্থানীয় বাংলাদেশী এবং ১৯৬ জন রোহিঙ্গা। গত ১ আগস্টের প্রতিবেদনে মোট আক্রান্ত ছিল ৬৪৫ জন। যেখানে ৪৭৬ জন স্থানীয় বাংলাদেশী এবং ১৬৯ জন রোহিঙ্গা ছিল। জেলা সদর হাসপাতালে গত ৭ দিনে নতুন করে ১০৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যেখানে ৮০ জন স্থানীয় বাংলাদেশী ও ২৭ জন রোহিঙ্গা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।


ডা. শাহ ফাহিম আহমদ ফয়সাল জানিয়েছেন, আক্রান্তের বিবেচনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১, ১ (পশ্চিম), ১ (পূর্ব) ৪, ৯, ১৭ নম্বর ক্যাম্পে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া কক্সবাজার পৌরসভা, চকরিয়ায় অধিক সংখ্যক রোগী পাওয়া যাচ্ছে। বন্যা পরবর্তি গত ৩ সপ্তাহে এমন বিষয়টি দেখা যাচ্ছে।


কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুর রহমান জানিয়েছেন, সোমবার (২৮ আগস্ট) জেলা সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫৫ জন ভর্তি রয়েছে। আগস্ট মাসের শুরু থেকে জেলায় বৃষ্টি বেড়েছে। এর কারণে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা, নালায় আবর্জনা হয়ে পানি জমে থাকার কারণে এডিস মশার প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে গত মাসের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।


কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সমন্বয়ক ডা. আবু তোহা মো. আর. হক ভূঁইঞা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘনবসতি, পরিচ্ছন্ন নালা, যেখানে সেখানে পানি জমে থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবে মশার প্রজনন থাকে। যেখানে আগে থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। এ মাসে তা আরও একটু বেড়েছে।


উল্লেখ্য, ২০২২ সালে কক্সবাজারে মোট ১৯ হাজার ২৩১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। যার মধ্যে ১৫ হাজার ৬৩৬ জন রোহিঙ্গা ও ৩ হাজার ৫৮৫ জন স্থানীয়। এই এক বছরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। যার মধ্যে রোহিঙ্গা ২৬ জন ও স্থানীয় ১৩ জন।


আরএক্স/