সরকারি পিসি কলেজ

নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেন টাকা আত্মসাতের দায়ে বরখাস্ত হিসাব সহকারী


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৩৫ অপরাহ্ন, ৩১শে আগস্ট ২০২৩


নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেন টাকা আত্মসাতের দায়ে বরখাস্ত হিসাব সহকারী
বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করছেন অসিত কুমার দে

বাগেরহাট সরকারি প্রফুল্ল চন্দ্র (পিসি) কলেজের অধ্যক্ষের স্বাক্ষর নকল করে চেকের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের দায়ে বরখাস্ত হওয়া হিসাব সহকারী অসিত কুমার দে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। সেই সাথে কলেজের অধ্যক্ষ ও তার ঘনিষ্টজনদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন। অন্যায় বরখাস্থাদেশ তুলে নিয়ে স্বপদে পুনঃবহালের দাবি জানিয়েছেন অসিত কুমার দে। 


বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন তিনি।


অসিত কুমার দে বলেন, সরকারি পিসি কলেজের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় অধ্যক্ষ শেখ জিয়াউল ইসলাম ও তার সহযোগীদের ইশারায় এবং সহায়ক হিসেবে প্রধান সহকারী মোঃ আনোয়ার হোসেন খান সকল ভাউচার সমন্বয় করেন। “হিসাব সহকারী কাম-অফিস সহায়ক” পদে অত্যাবশ্যকীয় কর্মচারী হওয়ায় হুকুমের দাস হিসেবে আমি চেক লেখা এবং ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের দায়িত্ব পালন করতাম। কিন্তু কলেজের অধ্যক্ষসহ একটি কুচক্রিমহল আমাকে কলেজ থেকে বিতাড়িত করার জন্য, ভুয়া চেক জালিয়াতির অভিযোগ এনে, কোন প্রকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এবং তদন্ত কমিটির কাজ পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই আমাকে চাকুরিচ্যুত করেছেন। 


চাকুরীচ্যুতির চিঠিতে কলেজ অধ্যক্ষ বলেছেন, হিসাব সহকারী পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় আমি কমপক্ষে ৮০ হাজার আত্মসাত করেছি। এর মধ্যে গেল ১১ জুন স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে ২৪ হাজার ১৯২ টাকা উত্তোলন করেছি, যা রেজিষ্ট্রারে লিপিবদ্ধ নেই। ওইদিন জনতা ব্যাংকে থাকা কলেজের হিসাব থেকে দুটি চেকের মাধ্যমে ৪৮ হাজার ৩৮৪ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। 


একটি চেকের অর্থ উত্তোলন করেছেন বাংলা বিভাগের শিক্ষক তাপস চন্দ্র ঘরামি এবং অন্য চেকের টাকা উত্তোলন করেছেন অফিস সহায়ক (ক্যাশিয়ার) শেখ মোদাচ্ছের আলী। মূলত এই টাকা যদি আত্মসাতের উদ্দেশ্য থাকত তাহলে, টাকা উত্তোলনের চেক আমি তাদেরকে দিতাম না। 


অসিত কুমার আরও বলেন, ভুয়া দরপত্র, টুকিটাকি কমিটি, ভুয়া ভাউচার ও কোন প্রকার সরঞ্জাম ক্রয় ছাড়াই প্রায় ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ জিয়াউল ইসলাম, উপাধ্যক্ষ (সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) মোঃ শাহ আলম ফরাজী ও তার ঘনিষ্ট জনেরা। মূলত ভুয়া বিল ভাউচার, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার রাজস্বাক্ষী হওয়ায় নিজেদের কুকর্ম ঢাকতে তারা আমাকে বরখাস্ত করেছে। অন্যায় বরখাস্তাদেশ তুলে নিয়ে অতিদ্রুত স্বপদে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান অসীত কুমার দে। 


১১ জুন কলেজের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন সম্পর্কে কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক তাপস চন্দ্র ঘরামি বলেন, কলেজের উন্নয়ন (পানির লাইনের) কাজের জন্য ২৪ হাজার ১৯২ টাকা আমি ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে এনেছিলাম। 


অফিস সহায়ক (ক্যাশিয়ার) শেখ মোদাচ্ছের আলী বলেন, কলেজের ক্যাশ থেকে ২৪ হাজার ১৯২ টাকা নিয়ে সমমূল্যের একটি চেক আমাকে দিয়েছিল অসিত কুমার দে। পরে ব্যাংক থেকে ওই টাকা তুলে সমন্বয় করেছি। 


সরকারি পিসি কলেজের উপাধ্যক্ষ (সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) মোঃ শাহ আলম ফরাজী বলেন, অসীত যেসব অভিযোগ করেছেন তা সবই মিথ্যা। মূলত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায়, তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং আত্মসাত করা ৮০ হাজার টাকা এক মাসের জন্য ফেরত দিতে বলা হয়েছে। এই টাকা না দেওয়ার জন্য এখন এসব মিথ্যা অভিযোগ করছেন। এছাড়া অসিতের বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত হচ্ছে, তদন্তে যদি আরও বেশি অর্থ আত্মসাতের প্রমান পাওয়া যায়, সে টাকাও অসিতকে ফেরত দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষক। 


উল্লেখ, ১১ জুন হিসাব সহকারি অসিত কুমার দে জনতা ব্যাংক থেকে স্বাক্ষর জাল করে ২৪ হাজার ১৯২ টাকা তুলে নেয়। মুঠোফোনে এসএমএসের মাধ্যমে বিষয়টি বুঝতে পারেন কলেজের অধ্যক্ষ। পরে ১৪ জুন অবৈধ ভাবে টাকা উত্তোলনের ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে কলেজ প্রশাসন। ৩১ জুলাই অধ্যক্ষ প্রফেসর জিয়াউল ইসলাম অর্থ আত্মসাতের অপরাধে হিসাব সহকারী অসিত কুমার দে’কে বরখাস্ত করেন।


আরএক্স/