তেঁতুলিয়ায় ৪০ লাখ টাকা নিয়ে মসজিদের ঈমাম উধাও
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭:০৯ অপরাহ্ন, ১০ই সেপ্টেম্বর ২০২৩
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় একটি জামে মসজিদের আতিকুর রহমান নামের এক ইমামের বিরুদ্ধে প্রায় ৪০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় প্রতারক ঈমামকে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।
রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের মালিগছ এলাকার ২০টি পরিবার জুতা ও ঝাড়ু মিছিলের মধ্য দিয়ে মানববন্ধন করে। এ সময় মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা প্রতারক ঈমামের ছবিতে জুতা ও ঝাড়ু প্রদর্শন করতে দেখা যায়। অতি দ্রুত ওই ঈমামকে গ্রেফতার করে টাকা আদায়ের দাবি জানিয়েছেন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, প্রতারক ঈমাম আতিকুর রহমান নাটোর জেলার সদর উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামের মোজাহার আলীর পুত্র। তবে সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় পরিচয়পত্র ভুয়া তৈরি করে অবস্থান নিয়ে কাজ করছে বলে জানান এ এলাকার ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গেলো বছর ঐতিহ্যবাহী মালিগছ বামনপাড়া জামে মসজিদের জন্য কমিটি ঈমাম খুঁজলে এলাকার পরিচিত একজনের মাধ্যমে আতিকুর রহমানকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই সময় আতিকুর রহমান নিজের গোপন পরিচয় রেখে মিথ্যা পরিচয়ে ঈমামের চাকরি নেন। তার কিছুদিন পর ওই ইমামতির পাশাপাশি ঠিকাদারি ব্যবসা ও অসুস্থ্যতার কথা বলে সুদের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দেড় বছরে গ্রামের বিভিন্নজনের কাছে হাওলাতের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৪০ লাখ টাকা। হাওলাত নিয়েছেন মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাছ থেকেও। এসব টাকা ভুক্তভোগীরা দেয়ার চাপ দিলে গত ৪ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে পালিয়ে যান ওই ইমাম। প্রায় ৪০ লাখ টাকা এভাবে হাতিয়ে রাতে অন্ধকারে ইমামের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় টাকার শোকে চোখের পানি ফেলছেন ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে আনোয়ারুল ইসলাম জানান, মালিগছ বামনপাড়া জামে মসজিদের আমি একজন মুসল্লী। গত বছর ৩০ জুনে আমাদের মসজিদে আতিকুর রহমান নামের ঈমামকে নিয়োগ দেয়া হয়। ওনার জাতীয় পরিচয় ভিত্তিতে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি এ এলাকার মানুষের সাথে নিবিরভাবে মিশে সম্পর্ক তৈরি ‘মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কথা বলে গোপনে গোপনে অনেক মানুষের কাছে টাকা নেন। কিন্তু যার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, তা অন্যজনকে জানাতে নিষেধ করেছেন। এভাবে তিনি প্রায় ১৮/২০ জনের কাছ থেকে লাভ দেয়ার কথা বলে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেছেন।
আরেক ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম জানান, ঈমাম আতিকুর রহমান মসজিদে দায়িত্ব নেয়ার পর মাস পর আমাকে জানালেন, ভাই আমি তো ঠিকাদারি ব্যবসা করি। আপনারা আমাকে একটু সহযোগিতা করেন। বললাম, হুজুর কি সহযোগিতা করবো। তখন তিনি জানান, আমি দিনাজপুর বিরলে ৪২ কিলোমিটার রাস্তার কাজ, সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় ঠিকাদারি করছি, টাকা দিয়ে সহযোগিতা করলে ভালো হতো। বিষয়টি জানার পর ভাবলাম, যেহেতু আমাদের মসজিদের ইমাম, তিনি তো প্রতারণা করবেন না। তাই আমি তাকে হাওলাত বাবদ ৩ লাখ টাকা দিয়েছিলাম।
ভুক্তভোগী শাহিনা বেগম জানান, হুজুর (ইমাম) আমার বাসায় ভাড়া থাকতেন। আমার পরিবার থেকে তিনি ২ লাখ ২১ হাজার টাকা হাওলাত নিয়েছেন। রাতের অন্ধকারে সে ৪ সেপ্টেম্বরে পালিয়ে গেছে।
মসজিদের কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের বলেন, এই ঈমাম এমন প্রতারক হবে তা আমরা জানতাম না। তিনি আমাদের মসজিদের ঈমামতি, বিভিন্ন মাহফিলে ওয়াজ করেছেন। তা দেখে আমরা খুব বিশ্বাস করেছিলাম। সে আমাদের এখানে বিভিন্নজনের কাছে টাকা পয়সা নিয়ে এভাবে রাত ৩/৪ টার সময় উধাও হয়ে যাবে তা ভাবতে পারিনি। আমরা এ প্রতারক ইমামকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। আমরা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিচ্ছি। তেঁতুলিয়া থানাতেও অভিযোগ দিয়েছি।
ভজনপুর ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার কাজিম উদ্দিন জানান, এলাকাবাসীসর কাছে আমি শুনেছি বিষয়টি। একজন ঈমাম হয়ে কিভাবে এতোগুলো মানুষের কাছ টাকা ধার নিয়ে পালিয়ে যেতে পারে তা ভাবতে পারছি না।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এ সংক্রান্তএকটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তা তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তেতুঁলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বী জানান, এটি একটি বড় ধরনের অপরাধ। আমার কাছে ভুক্তভোগীরা এসেছিল তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি আমরা দেখছি এবং এবিষয়ে থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
জেবি/এসবি