মুন্সীগঞ্জের উৎপাদিত কপি চারা বিক্রি হচ্ছে সারাদেশে
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:৫৭ অপরাহ্ন, ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৩
![মুন্সীগঞ্জের উৎপাদিত কপি চারা বিক্রি হচ্ছে সারাদেশে](https://janobani.com/big_image/1695027452.jpg)
মুন্সীগঞ্জের উৎপাদিত উন্নতমানের কপি চারা বিক্রী হচ্ছে সারাদেশে। কৃষকের নিবিড় পরিচর্যায় বেড়ে উঠা এ সমস্ত শীতকালীন সবজি, কপির চারা একদিকে যেমন স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা মিটাচেছ সেই সাথে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্নস্থানে ।
কপি চারা রোপণের ২১ দিনের মধ্যেই বিক্রির উপযোগী হয় আর স্বল্প সময়ে এ ব্যাবসা লাভজনক হওয়ায় এ পেশায় যোগের পর যোগ ধরে টিকে রয়েছে কয়েকশত পরিবার ।
ভাদ্র মাস আসলেই শুরু হয় এ কপি চারা উৎপাদন যা চলে কার্তিক মাস পর্যন্ত। এখান হতে চারা নিয়ে রোপণ করা কপি চারাগুলো শীত মৌসুমে পূর্ণাঙ্গ রূপ নিয়ে এই কপি বিক্রি হবে খুচরা বাজারে। মুন্সীগঞ্জ জেলা সদর ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার প্রায় ১৩.০৫ হেক্টর জমিতে এ বছর চারা উৎপাদন হচ্ছে বলে কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে।
সরেজমিনে, মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বেশ কয়েকটি কপির বীজতলা ঘুরে দেখা গেছে, কপির চারা উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কপি চারা চাষিরা। তবে বীজ সংকটে এবার ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। অন্যান্য বছরের তুলনায় বীজের দাম অনেকটা বেশি হওয়ায় হতাশ কপি চারা উৎপাদনকারীরা। কপি চারাকে রোদ ও বৃষ্টি হতে রক্ষার জন্য চারার উপরে ছাউনি দিয়ে চারা ঢেকে দিতে হয়। আবার একটু বৃষ্টিতেই কপি চারা নষ্ট হয়ে যায় তাই কপি খেতের পাশেই ছোট খুপরি ঘর তৈরি করে ২৪ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখেন চারা উৎপাদনকারীরা।
চারা চাষীরা বলেন, মুন্সীগঞ্জে স্থানীয়দের বীজের পাশাপাশি জাপান এবং চীন হতে আসা বীজ দিয়ে কপি চারা উৎপাদন করা হয়ে থাকে। দেশী জাতের চেয়ে বিদেশী জাতের কপি চারার চাহিদা অনেক বেশি। তবে এ বছর বীজের দাম অনেক বেশি সবচেয়ে চাহিদার বীজ জাপানি ফ্রেশ এখোন বাজারে নেই বললেই চলে। এককেজি বীজের দাম দেড় লক্ষ টাকা। গতবছর এ বীজের দাম ছিল ৭০,০০০ টাকা। বিদেশি সমস্ত বীজের কেজি ৪৫ হাজার টাকা থেকে ১লক্ষ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। মুন্সীগঞ্জে সাধরানত উৎকৃষ্ট বীজ থেকে চারা উৎপাদন করায় এই চারার মান অনেক ভালো হয়ে থাকে।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার কেপিরবাগ, ভট্টাচার্যের বাগ, দেওয়ানবাজার, রামসিং, কালচি পাড়া, দেওসার , রামপাল, ধলাগাওঁ, সিপাহিপাড়া এলাকায় পাশের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পাইকপাড়া, আবদুল্লাহপুর, সোনারং টঙ্গিবাড়ী ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় এই চারা উৎপাদিত হয়ে থাকে।
সদর উপজেলার কেবিবাগ এলাকার কপিচাষীরা বলেন,অন্যান্য বছর যে পরিমাণ জমিতে চাষ করি এবার তার তিন ভাগের এক ভাগ জমিতে চাষ করছি। বাজারে বীজ পাচ্ছিনা। বীজের জন্য ঘুরছি অপেক্ষায় আছি জমি তৈরি করে রেখেছি বীজ পেলেই পূর্নদমে চাষাবাদ শুরু করবো।
গ্রামের চাষীরা বলেন, এক কেজি জাপানি ফ্রেশ বীজের দাম ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এক পিছ দানার দাম পরে দেড় টাকা। এক কেজি বীজ ভালো গজালে এক লক্ষ চারা হবে। সে হিসাবে একপিস চারার দাম পরে দেড় টাকা। অন্যান্য বছর আমরা সাধারণ ৭০-৮০পয়সায় প্রতি পিছ চারা বিক্রি করতাম। অথচ এ বছর একপিছ চারা উৎপাদন করতে খরচ পরছে দেড় টাকা।
কপি চারা উৎপাদন শ্রমিক সফিক বলেন, ৩ মাস চারা উৎপাদনের কাজ করি। প্রতিমাসে ২৫,০০০টাকা বেতনে কাজ করি। এ কাজে অনেক পরিশ্রম। দিন রাত চারা পর্যাবেক্ষনে রাখতে হয়। রোদ বৃষ্টিতে চারা নষ্ট হয়ে যায়। কেবল সুর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় চারাকে রোদ খাওয়াতে হয় । বাকি সময় ঢেকে রাখতে হয়।
সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাকির হোসাইন বলেন, শীতকাল সামনে রেখে দেশী জাতের কার্তিকা, আইট্টা, কেটে, ষাইটশা ও চালানি ষাইটশা জাতের কপির চারা উৎপাদন হয় এখানে। অন্যদিকে শীতের শুরুতে তাইওয়ান, জাপানিজ জাতের (হাইব্রিড) কপিচারা উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে সিরাজি, হেমাজি, ফ্রেশ, ¯নো হোয়াইট, লিনজা।দেশী জাতের দানার তুলনায় বিদেশি জাতের দানার দাম কয়েকগুণ বেশি। ফলে এর উৎপাদন ব্যয়ও বেশি। অন্যদিকে বিদেশি হাইব্রিড জাতের কপি দেখতে হৃষ্টপুষ্ট হলেও দেশী জাতের কপি খেতে সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা ক্রেতা পর্যায়ে বেশি। কপির দানা থেকে চারা উৎপাদনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত নিবিড়ভাবে সম্পন্ন করতে হয়। এ সময় আবহাওয়ার তাপমাত্রা ওঠানামা করলে রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, এই মৌসুমে মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় কপিচারাসহ বেগুন টমেটোর চারা উৎপাদন হয়ে থাকে। এর মধ্যে এ জেলায় খুব উৎকৃষ্ট মানের কপি চারা উৎপাদন হয় যা সারাদেশে বিক্রী হয়ে থাকে । মূলত এ বছর আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় ১৩.০৫ হেক্টর জমিতে কপিচারাসহ অন্যান্য চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। এ জেলায় প্রচুর উর্বর কৃষি জমি থাকায় কৃষক সকল মৌসুমেই বিভিন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদন করে থাকেন। তবে কপির চারা এটি ‘মুন্সীগঞ্জ স্পেশাল’। দেশের কোথাও এই চারা এমনভাবে তুলতে পারে না। কারণ স্পর্শকাতর এই চারা তোলা এক বিশেষ যোগ্যতা। তাছাড়া মাটি ও আবহাওয়া একটি বিষয়।
মাঠকর্মীরা সর্বদা চারা উৎপাদনে কৃষকদের এই ব্যাপারে সুপরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। বীজের দাম বেশি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তর মূলত কৃষকদের মধ্যে নতুন প্রযুক্তি ও নতুন জাত সম্প্রসারণ নিয়ে বেশি কাজ করে থাকেন। তাছাড়া কৃষকদের ভালো বীজ ও সার ব্যবহার কীটনাশক বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে আমরা বীজের দাম বেশি নিলে বিভিন্ন উপায়ে বীজ বিক্রেতাদের চাপ প্রয়োগ করে থাকি ।
আরএক্স/
বিজ্ঞাপন
পাঠকপ্রিয়
আরও পড়ুন
![জামায়াত-শিবিরের হামলায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন গাজীপুর সিটির কাউন্সিলর কাজল](https://janobani.com/resizer?img=%2Fbig_image%2F1722073855.jpg&h=250&w=450)
জামায়াত-শিবিরের হামলায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন গাজীপুর সিটির কাউন্সিলর কাজল
![নাশকতার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর গ্রেফতার](https://janobani.com/resizer?img=%2Fbig_image%2F1722002954.jpg&h=250&w=450)
নাশকতার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর গ্রেফতার
![নরসিংদী কারাগার থেকে পলাতক জঙ্গি সোনারগাঁয়ে গ্রেফতার](https://janobani.com/resizer?img=%2Fbig_image%2F1721911246.jpg&h=250&w=450)
নরসিংদী কারাগার থেকে পলাতক জঙ্গি সোনারগাঁয়ে গ্রেফতার
![সাভারে ক্ষতিগ্রস্ত স্পট গুলো পরিদর্শন করেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি](https://janobani.com/resizer?img=%2Fbig_image%2F1721904887.jpg&h=250&w=450)
সাভারে ক্ষতিগ্রস্ত স্পট গুলো পরিদর্শন করেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি
![‘কক্সবাজারে ডিসি, এসপি অফিস, থানা, বিমান সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনা ছিল’](https://janobani.com/resizer?img=%2Fbig_image%2F1721826139.jpg&h=250&w=450)