পরিশ্রম সমান তবুও মজুরি কম


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


পরিশ্রম সমান তবুও মজুরি কম

প্রতিবছর সরকারি-বেসরকারিভাবে জাঁকজমকপূর্ণে ৮ই মার্চ আন্তজার্তিক নারী দিবস অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। দিবসটি উপলক্ষে সারাদেশে নারী-নির্যাতন বন্ধ, নারীর অধিকার, মজুরিসহ নানা বিষয়ে সম-অধিকার নিয়ে সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কিন্তু এতো আয়োজন করা হলেও শহরের তুলনায় মফস্বল অঞ্চলে বাস্তবতা একে বারে ভিন্ন। আজও নারীরা তাদের অধিকার ও মজুরী বৈষম্য এবং নারী নির্যাতনে ন্যায় বিচার এখনও দুর হয়নি। এভাবে নারী শ্রমিকরা যুগের পর যুগ নির্যাতন সহ্য করে হলেও জীবন-জীবিকা তাগিতে পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে-ঘাঠে হাঁড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করলেও মিলছে না সমমান মজুরী।

আন্তজার্তিক নারী দিবস হলেও থেমেই নেই কুড়িগ্রাম জেলার নারী শ্রমিকরা। অনেকইে জানেন না নারী দিবস কি ? তারপরেও দু-মুঠো খাবারের জন্য নারীরা মাঠে-ঘাঠে ঘাঁম ঝরানো কট্টর পরিশ্রম করা তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।

প্রতিদিনেই উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দলবেঁধে নারী কাজে যোগ দিচ্ছেন। নারী শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নারী এখনো নির্যাতন শিকারসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুকছেন। সেই সাথে এখনো রয়েছে মজুরি বৈষম্যের চিত্র পাওয়া যায়। নারীরা তুলে ধরেন তাদের কষ্টের কথা। তারা দাবী করেন মাঠে-ঘাঠে পুরুষদের সাথে সমান ভাবে কাজ করে আসলেও নারী সমান মজুরি থেকে বঞ্চিত। নারীদের সুরক্ষা ও ন্যায্য অধিকার (মজুরির) বিষয়ে প্রতিবাদ করেও তাঁরা কোনো ভাবেই আশানুরুপ ফল পাচ্ছেন না বলে একাধিক নারী শ্রমিক ক্ষোভ জানিয়েছেন। এখন তাঁরা জীবন-জীবিকার তাগিতে কম মূল্যে মাঠে-ঘাটে কাজ করে যাচ্ছে। সেই সাথে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন, বিশেষত নারী শ্রমিকেরা বোরো ও আমন ফসলের পরিচর্যা, ধানের চারা রোপণ, ধান ও মাটি কাটা, ইটভাটায় এবং রাজমিস্ত্রীর কাজ করে থাকেন। সাধারণত সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করলে এক দিনের কাজ ধরা হয়। স্থানীয়ভাবে এক দিনের পুরুষ শ্রমিকের মজুরি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এ হিসাবে একজন নারী শ্রমিকেরও ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার পাওয়ার কথা, কিন্তু তাঁরা সমান কাজ করে মজুরী পান ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।



ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা এলাকার নারী শ্রমিক বিশো বালা বেওয়া (৫৬) জানান, ১৮ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। অনেকে কষ্টে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। কোন রকমেই এক সন্তান নিয়ে সংসার চলছে। তাই শ্রমিকের কাজ করি। কখনো বোরো ধানের জমিতে। নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি সময় ধরে কাজ করে। কাজের মধ্যে পুরুষেরা বিশ্রামের বিরতি নিলেও নারী শ্রমিকরা তেমন বিশ্রাম নেয় না, কিন্তু পুরুষ শ্রমিকরা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা মজুরি পেলে আমরা নারীরা পাই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

ক্ষোভ জানিয়ে জানান,নারী দিবস কি আমরা জানি না। আর নারী সিবস পালন করলেও আমাদের লাভ নেই। আমরা জানি কাজ করলে পেটে ভাত ,কাজ না করলে থাকতে হবে উপবাস। তাই জীবন জীবিকার তাগিদে সকাল ৯ টা বাজলেই পুরুষদের সঙ্গে কাজ করতে যাই। কাজ থেকে ফিরে আসি একই সময়ে, কিন্তু পুরুষেরা দৈনিক মজুরি পান ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। আমরা পাই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। সমমান টাকা চাইলে কাজে না দেওয়ার হুমকি দেয় মালিকপক্ষ। তাই বাধ্য হয়ে কম মূল্যে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই নারীরা যেন সমান মজুরি পাই এ জন্য সরকারের কাছে জোড় দাবী জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে উন্নয়ণ কর্মী ঝরনা বেগম বলেন, পুরুষের শ্রমও বা মজুরী বৈষম্যের যে ব্যবস্থাপনা। সরকার পক্ষ থেকে মজুরী বৈষম্য নেই। সরকার এটা চায় নারী-পুরুষ সমান ভাবে মজুরী পাক। এটি মালিক পক্ষের কারণে মজুরী বৈষম্য তৈরী হয়েছে। মালিক পক্ষই পুরুষকে এক ভাবে মজুরী দিচ্ছে এবং নারীদেরকে এক ভাবে মজুরী দিচ্ছে। আর নারীরাও তাদের অধিকার কি জানেন না। একজন উন্নয়ন কর্মী হিসাবে বলবো এনজিও, স্থানীয় সরকার যদি এটি মনিটরিং করে তাহলে আশাকরি মজুরী বৈষম্য থাকবে না।

নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার জানান, বিভিন্ন এলাকায় পুরুষ শ্রমিকদের সাথে মাটি সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন। তারপরও নারী শ্রমিকেরা মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। মজুরি বৈষম্য দূর করতে সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করা খুবেই জরুলী। সেই সঙ্গে অতি জরুলী ভিত্তিতে নারী শ্রমিকদের মজুরী বৈষম্য দুর করার জন্য সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন।

মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছা:সোহেলী পারভীন জানান, ৮ই মার্চ আন্তজার্তিক নারী দিবসে আমি একজন নারী হিসাবে নারী শ্রমিকরা যেন সম পরিমান মজুরী পান সেই দাবী জানাচ্ছি। সরকার নারী-নির্যাতন বন্ধসহ নারীদের উন্নয়নসহ গ্রামীন নারীদের ক্ষমতায়ন ও উদ্যোক্তা তৈরীর লক্ষ্যেও জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। নারীরা যেভাবে পুরুষদের সাথে হাঁড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করছে তারা এ কাজের সঠিক মূল্য পান এজন্য সকলের সচেতন হওয়া উচিত। 

এসএ/