ডিমলায় ছয়টি ভাঙা সেতুতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:১৫ অপরাহ্ন, ১৪ই নভেম্বর ২০২৩


ডিমলায় ছয়টি ভাঙা সেতুতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে
ভাঙা সেতু। ছবি: জনবাণী

নীলফামারীর ডিমলায় কয়েক বছর ধরে বন্যার পানিতে ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অন্তত ৬টি সেতু সংস্কার বা পূণঃনির্মাণ না হওয়ায় দূর্ভোগে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ বিভিন্ন স্থানে নতুন সেতু নির্মাণ করলেও নজর নেই ভাঙা সেতু পূণঃনির্মাণে। 


ক্ষতিগ্রস্ত সেতুগুলো সংস্কারে দ্রূত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী এলাকাবাসীর।


সরজমিনে দেখা যায়, বন্যার পানির চাপে ভেঙে গেছে উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের তিনটি সেতু। গত পাঁচ বছর থেকে স্থানীয়দের উদ্যোগে ভাঙ্গা সেতুতে বাশের সাকো তৈরি করেই জেলা-উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করছে ছয় গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। কৃষিপণ্য পরিবহন, অসুস্থ রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবা ও শিক্ষার্থীদের চলাচলে সবচেয়ে ভোগান্তি বেশী এই এলাকার মানুষের।


সেতু নির্মাণের জন্য খোদ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করলেও কোন লাভ হয়নি।


পূর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, সেতুগুলো ভেঙে যাওয়ায় তিস্তা চর এলাকার মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। শত শত কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে উঠাতে না পেরে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন।শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সভায় বিষয়টি জানানো হয়েছে।


উপজেলার বুড়িতিস্তা নদীর রূপাহারা এলাকায় একটি সেতু ভেঙে পড়ে আছে এক যুগ থেকে আর সিংপাড়া এলাকার সেতু ভেঙেছে ৫ বছর আগে।সেতু ভেঙে পড়ে থাকায় দূর্ভোগের শেষ নেই এলাকাবাসীর। 


সিংপাড়া এলাকার বিপ্লব, মাজেদসহ অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন বাসিন্দা জানান, সেতুটি নির্মাণের পর সাত থেকে আট বছর পারাপারের উপযুক্ত ছিল। পাঁচ বছর আগে বর্ষায় প্রথমে সেতুর দক্ষিণ পাশের একটি অংশ সামান্য দেবে যায়।স্থানীয়রা দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ তা মেরামত করেনি। পরের বছর বর্ষায় ভিমসহ সেতুর মাঝ বরাবর নদীতে দেবে যায়। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুকিপূর্ন সেতু দিয়েই যাতায়াত করছে তিন গ্রামের মানুষ। এতে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। তাদের দাবী দ্রূত ভাঙ্গা সেতুগুলো সংস্কার করা হোক।


নাউতারা নদীর ছাতনাই মিয়াপাড়া গ্রামের সেতুটি ২০২১ সালের বন্যায় ৮ ফুট দেবে হেলে পড়েছে। সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটিও সরে গেছে।


গ্রামের বাসিন্দা লালমিয়া বলেন,সেতুটি ভেঙে পড়ায় প্রায় ২ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হচ্ছে তাদের। এতে সময় এবং অর্থ দুটোই অপচয় হচ্ছে। যানবাহন ঢুকতে না পারায় এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। কেউ অসুস্থ হলে ঘাড়ে চেপে নদী পার হতে হয়।


রুপাহারা এলাকার হাবিবুর রহমান জানান, সেতুর মধ্যাংশ দেবে নদীতে হেলে পড়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় সেতুর উজানে কয়েকবছর ধরেই বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যাওয়া তিন ফসলি জমিগুলোতে আর ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। এবারো একই পরিণতি হওয়ায় কৃষকদের বুকে এখন চাপা আর্তনাদ।


রুপাহারা এলাকার সবুজ ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, এই সেতু দিয়ে তারা প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আশা করতেন। সেতু ভেঙে যাওয়ায় তাঁরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ হাসান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সেতুগুলোর তালিকা করে দ্রত সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।


আরএক্স/