সিলেটে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট, আন্দোলনে পাম্প মালিকরা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


সিলেটে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট, আন্দোলনে পাম্প মালিকরা

সিলেটে দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি তেলের সংকট চলছে। জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও এর কোনো সমাধান হচ্ছে না। এ অবস্থায় আজ বুধবার থেকে সিলেটে আন্দোলনে ডাক দিয়েছেন সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও এর সঙ্গে জড়িতরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক বছর ধরে সিলেটে জ্বালানি তেলের সংকট চলছে। ফিল্ডগুলোতে উত্তোলন বন্ধ ও চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে পরিবহন সমস্যায় এ সংকট দেখা দেয়। কোনোভাবেই জ্বালানি তেলের এ সংকট কাটানো যাচ্ছে।

২০২১ সালে এ নিয়ে একদিন ফিলিং স্টেশনগুলোতে ধর্মঘটও পালন করেন সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা। সর্বশেষ ২৪ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমানের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এক সপ্তাহের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেন সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা। এ সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবেন বলেও ওইদিন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তারা।

এ সময় দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কোনো সমাধান না হওয়ায় এবার জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা আন্দোলনে নামছেন। তাই আন্দোলনের প্রথম দিন আজ বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। এতেও কাজ না হলে পেট্রোল পাম্পগুলোতে ধর্মঘটসহ কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা আসবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।

দক্ষিণ সুরমার কয়েকটি পাম্পে জ্বালানি তেল প্রায় নেই বলে জানিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় পেট্রোল পাম্প, সিএনজি, এলপিজি, ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল হোসেন আহমদ আলমগীর।

তিনি বলেন, বিষয়টি জানিয়ে ৬ মার্চ জ্বালানি সংশ্লিষ্ট পাঁচটি সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস অ্যাজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ এলপিজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং ট্যাংক-লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত সিলেট বিভাগীয় পেট্রোল পাম্প সিএনজি এলপিজি, ট্যাংক-লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, সিলেটে গত একবছর ধরে স্থানীয় পর্যায়ে জ্বালানি তেলের উৎপাদন বন্ধ। যে কারণে তেল সংকটে পড়েছেন এখানের ব্যবসায়ীরা। গত বছরের অক্টোবরে সিলেটে জ্বালানি তেলের তীব্র সঙ্কট দেখা দিলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় বৈঠক করে আন্দোলনের হুমকি দেওয়ার পরে তেলের সরবরাহ কিছুটা বাড়ানো হয়। তবে পর্যাপ্ত ছিল না এ সরবরাহ।

এদিকে ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে আবারও সিলেটে তেলের সঙ্কট দেখা দেয়। এই সংকটের জন্য সংশ্লিষ্টরা সিলেটে উৎপাদন বন্ধ, চট্টগ্রামে তেলশূন্যতা ও রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ওয়াগন আসার অনিয়মকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেটে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ লিটার জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান সরবরাহ মাত্র ৩ থেকে সোয়া ৩ লাখ লিটারের মতো। এ তেল সিলেটের চারটি ডিপোর মাধ্যমে ভাগ হয়। এর জন্য কোনো কোম্পানিই তাদের গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করতে পারেন না। সিলেটের পেট্রোল পাম্পগুলাতে জ্বালানি তেল আসে চট্টগ্রাম থেকে। সিলেটে তেল সরবরাহ রেলের ওয়াগন নির্ভর। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, রেল বিভাগের উদাসীনতাও সিলেটে তেলের তীব্র সঙ্কটের একটি অন্যতম কারণ।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এক বছর আগেও সিলেটের গ্যাস ফিল্ডগুলোর খনি থেকে উত্তোলিত কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন করে সিলেটের পাম্পগুলোতে সরবরাহ করা হতো। সেসময় সিলেটে কখনো জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দেয়নি। গত এক বছরের বেশি সময় থেকে সিলেটের গ্যাসফিল্ড থেকে পাম্পে জ্বালানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে সিলেটের পাম্প মালিকদেরকে ওয়াগনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি সরবরাহ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস অ্যাজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, আমাদের আর কিছু করার নেই। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা বাধ্য হয়ে আজ সিলেটের রাস্তায় ট্যাংক-লরি দাঁড় করিয়ে বিক্ষোভ করবো। এরপরই ধর্মঘটসহ কঠোর আন্দোলনের ডাক আসবে।

এসএ/