মহানন্দায় পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা, শত শত শ্রমিক বেকার


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


মহানন্দায় পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা, শত শত শ্রমিক বেকার

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় ১৮ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে সীমান্ত নদী মহানন্দা। যা ভারত থেকে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশের এই সীমান্তে প্রবেশ করেছে। 

 মহানন্দার স্রোতে ভেসে আসা নুড়ি পাথর এবং বালি উত্তোলন করে এই এলাকার প্রায় পঞ্চাশ হাজার শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করছেন । কিন্তু অসাধু ব্যাবসায়িদের অপরিকল্পিত ভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে পর্যটন কেন্দ্রীক গড়ে ওঠা কিছু নান্দনিক স্থাপনা এবং নদীর তীর ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম। সে কারনে বদলে যাচ্ছিল নদীর গতিপথ। 

এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও নদীর তীর সংরক্ষণের স্বার্থে  মহানন্দার ৫ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে পাথর উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গত ৮ মার্চ একটি চিঠির মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। এতে বেকার হয়ে পড়েছে কিছু শ্রমিক ও ব্যবসায়ি। তারা পাথর উত্তোলনের দাবী তুলেছেন । এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মহানন্দার তীরবর্তী এলাকায় পাথর উত্তোলনের ফলে পুরনো ডাক বাংলো ভবন,পিকনিক কর্ণার, কেন্দ্রীয় গোরস্থান, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান, তেঁতুলিয়া থানা ভবন, পুরাতন বাজার, শিবমন্দির সহ প্রায় ৭শত একর আবাদি জমি ভেঙ্গে গিয়ে নদীর সাথে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।  ডাকবাংলো থেকে পুরাতন বাজার পর্যন্ত ৫ কিঃমি এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১২’শ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত সিসি ব্লক নির্মাণ বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে হুমকির মুখে পড়েছে। এভাবে অপরিল্পিত পাথর উত্তোলন চলতে থাকলে মহানন্দা নদীতে ভাঙ্গন সৃষ্টি হবে। অদুর ভবিষ্যতে মুল শহরও হুমকির মুখে পড়বে। অনদিকে নদী হারিয়ে ফেলছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। সীমান্ত নদী হওয়ায় এই নদীর তীর রক্ষা করার জন্য বিজিবির গুরুত্বপুর্ণ ভ’মিকা রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের অভিযোগ পাথর উত্তোলন বন্ধের নির্দেশনার চিঠি সরাসরি পাঠানো হলেও অদৃশ্য কারণে গ্রহণ করেননি বাংলাদেশ বর্ডারগার্ড (বিজিবি) তেঁতুলিয়া কোম্পানী সদর। পরে হোয়াটসএ্যাপে ম্যাসেজ দেয় হয়। তবে বিজিবি বলছে এখনো তারা কোন চিঠি পাননি । 

এদিকে পাথর উত্তোলন বন্ধের কারনে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাথর শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এলাকার পাথর শ্রমিক ও ক্ষুদ্র পাথর ব্যবসায়ীরা স্থানীয় জন প্রতিনিধি সহ প্রশাসনের নিকট মহানন্দা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে পাথর উত্তোলণ চালু রাখার জন্য দাবী জানিয়েছেন তারা। 

তেঁতুলিয়া উপজেলার পুরাতন বাজার এলাকার পাথর ব্যবসায়ী শাহাদাৎ হোসেন জানায়, তার পাথর কোয়ারীতে কাজ করে প্রায় ৮শ শ্রমিক। এরা গ্রুপ করে প্রতিদিন নদীর অববাহিকা থেকে পাথর উত্তোলন করে আসছে । হঠাৎ করে এই এলাকায় পাথর সংগ্রহ বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়েছে এসব শ্রমিক ও তাদের পরিবার।দর্জি পাড়া গ্রামের শাহেরা বেওয়া বলেন, মহানন্দার পাথর বাছাই ও নেটিং করে আমাদের সংসার চলে, হঠাৎ করে পাথর তোলা বন্ধ হয়ে পড়ায় আমরা কর্মহীন হয়ে পড়েছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা জনবাণীকে বলেন, মহানন্দা নদীতে অপরিকল্পিত ভাবে তীর ঘেষে পাথর উত্তোলনের ফলে  তীর সংরক্ষণের বাঁধে একাধিক স্থানে ফাটল ধরেছে। কোথাও কোথাও বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে ভেঙ্গে পড়ছে। এই সীমানার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সামাজিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য সীমান্ত ঘেষে ১৮ কিলোমিটার বহমান মহানন্দা নদীর মাত্র ৫ কিঃমিঃ এলাকায় পাথর উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি এলাকা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। স্বাধীনতার তীর্থ ভ’মি ৭১ এর মুক্তাঞ্চল তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো সহ পর্যটন নগরী তেঁতুলিয়ার ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সংরক্ষনের স্বার্থে এটি বিবেচনা করে সকলের সাথে কথা বলে এই সীদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে।

এসএ/