নেকাব খুলতে রাজী না হওয়ায় ভাইবা নেওয়া হয়নি ইবি শিক্ষার্থীর


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৩০ অপরাহ্ন, ২১শে জানুয়ারী ২০২৪


নেকাব খুলতে রাজী না হওয়ায় ভাইবা নেওয়া হয়নি ইবি শিক্ষার্থীর
ফাইল ছবি।

মংক্যচিং মারমা, ইবি প্রতিনিধি: সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ভাইবায় নেকাব খুলতে রাজী না হওয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের(ইবি) এক শিক্ষার্থীর ভাইবা নেয়নি ভাইবা বোর্ডের শিক্ষকরা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী খাদিজা মোবাশশিরা তুবা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। 


বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ ডিসেম্বর ১ম বর্ষের সেমিস্টার ফাইনালের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন খাদিজা মোবাশশিরা তুবা নামের এক শিক্ষার্থী নেকাব পড়ে অংশ নেয়। এসময় ভাইভা বোর্ডের শিক্ষকরা তার পরিচয় নিশ্চিতের জন্য নেকাব খুলতে বলেন। তখন তিনি নেকাব খুলতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু তাকে ভাইভা বোর্ডের সব সদস্যদের সামনে নেকাব খুলতে বলেন শিক্ষকরা। শেষ পর্যন্ত নেকাব না খোলায় ভাইভা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান শিক্ষকরা। ঘটনার দিন ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগে প্রফেসর ড. কাজী আখতার হোসেন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি শিমুল রায়, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা ও বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম।


আরও পড়ুন: ইবিতে পুনরায় চালু হলো সোমবারের অফলাইন কার্যক্রম


ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তুবা বলেন, গত ১৩ ডিসেম্বর আমাদের ফার্স্ট ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভা ছিলো। আমি আগে থেকেই নেকাব করি তো ওইদিন নেকাব করেই ভাইভায় গিয়েছিলাম। তো স্যাররা বললো আমাকে নেকাব না খুললে ভাইভা দিতে দিবে না। তারপর আমি নেকাব খুলতে অসম্মতি জানাই। আইডিন্টিফিকেশনের জন্য নারী শিক্ষক দিয়ে চ্যাকিং এর ব্যাপারে বলেছিলাম। একজন ম্যাম উপস্থিত থাকার পরেও আমাকে আলাদাভাবে নারী শিক্ষক দিয়ে আইডিন্টিফাই করতে অসম্মতি জানায় ভাইভা বোর্ড।


তিনি আরও বলেন, শিক্ষকরা এমনও বলেছে যে নেকাব না খুলে ভাইভা নিতে দিবে না এবং পরীক্ষায় ফেইলও করতে পারো সেজন্য। আমি বারবার রিকুয়েষ্ট করার পরও স্যাররা এ বিষয়ে সম্মত হয়নি। স্যারদের মূলত উদ্দেশ্য ছিলো যেনো আমি নেকাব খুলে ভাইবা দেই। তাদের আইডিন্টিফিকেশনের কোনো ইনটেনশনও ছিলো না। 


এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের শিক্ষক ভাইভা বোর্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, ভাইবা বোর্ডে তাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান থেকে একাধিকবার বোঝানো হয়েছে। প্রথম দফায় বোঝানোর প্রায় ২৫ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় এসেও সে নেকাব খুলতে অস্বীকৃতি জানায়৷ পরবর্তীতে আমরা তার বাবাকেও ইনফর্ম করি, তিনি তার সন্তানকে আরেকটি সুযোগ দিতে বলেন। সে অনুযায়ী ক্যাম্পাস খোলার পর ১৭ জানুয়ারি সে ৩ জন বান্ধুবি নিয়ে ভাইবা দিতে এলেও পরিচয় শনাক্তে অস্বীকৃতি জানায়। সেদিনও সে চাইলে ভাইভা দিতে পারতো কিন্তু সে রাজি না হওয়ায় তার ভাইবা নেওয়া হয়নি।


বিভাগটির আরেক শিক্ষক উম্মে সালমা লুনা বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা তো এডমিশন টেস্টে মুখ, কান খুলেই এক্সাম দিয়েছেন। আমাদের ক্লাসরুমেও অনেক শিক্ষার্থী নেকাব করেন, আমরা কখনোই তাদের বিরূপ কিছু বলি না। এখন ভাইবার দিন ওই শিক্ষার্থীকে দুই দফায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট বোঝানো হয়েছে। কিন্তু সে রাজি হয়নি। 


নারী শিক্ষক দিয়ে আইডেন্টিফাই করার প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রশাসনের কাছ থেকে এরকম লিখিত কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। প্রশাসন যদি এব্যাপারে কোন নির্দেশনা দেয় তবে আমরা অবশ্যই তা পালন করবো।


আরও পড়ুন: ইবিতে ৬টি ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা 


তবে রেজাল্ট দেওয়ার আগ পর্যন্ত তার ভাইবা দেওয়ার সুযোগ থাকবে বলে জানান বিভাগের সভাপতি শিমুল রায়। তিনি বলেন, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করেছি কিন্তু তাকে রাজি করাতে পারিনি। আমরা তাকে বলেছিলাম যে ভবিষ্যতে যদি নারী শিক্ষিকা কেউ না থাকে, তখন তাকে সেভাবেই ভাইবা দিতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য কখনোই তার নেকাব খোলানো ছিল না। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল তাকে স্টুডেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা।


এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলিনা নাসরিন বলেন, মানুষ ধর্ম কর্ম করবে আমরা সেখানে বাধা দিবো না। তবে যে-কোনো ফ্যাকাল্টিই হোক না কেনো তাকে ভাইবায় আইডিন্টিফাই করার ব্যবস্থায় আসতে হবে। যেভাবেই হোক না কেনো। অনেকে আছে যারা ফিমেল টিচার ছাড়া করতে চায় না সেক্ষেত্রে ফিমেল টিচারকে দিয়ে করানো হবে। আর তখন ফিমেল টিচার না থাকে সেক্ষেত্রেও বিকল্প ব্যবস্থা আছে। এক্ষেত্রে তার বান্ধবী বা কোনো ম্যামকে এনে তা করা যাবে। এইজন্য যে আমরা পরীক্ষা নিবো না বা পরীক্ষা নেয়া যাবে না এমন না বিষয়টা। 


আরএক্স/