আনারসের রাজধানীতে খেজুরের রস ও চাটি গুড়ের অপার সম্ভাবনা


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:২১ অপরাহ্ন, ২৫শে জানুয়ারী ২০২৪


আনারসের রাজধানীতে খেজুরের রস ও চাটি গুড়ের অপার সম্ভাবনা
খেজুরের রস সংগ্রহ করছে গাছি। ছবি- জনবাণী

টাঙ্গাইলে মধুপুর গড়ে জেঁকে বসেছে শীতের তীব্রতা। গ্রাম গুলোতে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। শুরু হয়েছে পিঠাপুলির ধুম। খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে বেড়েছে গাছিদের ব্যস্ততা। অনেকেই মৌসুম চুক্তিতে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে শুরু করেছে। গাছি আর কারিগররা খেজুর গুড় বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। গুনে মানে ভালো থাকায় চাহিদাও বাড়ছে। আশপাশের উপজেলা জেলা গুড় কিনতে আসছে লোকজন।  চিকিৎসাকরা বলছে খেজুর রস ও গুড় মানবদেহের জন্য উপকারি  তবে নিপা ভাইরাস থেকে সবার সাবধানে থাকা প্রয়োজন।


গড় এলাকার আনারসের মতো খেজুরের রস ও চাটি গুড়ের অর্থনৈতিক অপার সম্ভাবনা হতে পারে। হতে পারে গুড়ের জন্য বিখ্যাত এলাকা। মধুপুরের লাল মাটি কৃষি ফসলের জন্য  উর্বর উপযোগী থাকায় ধারণা করা হচ্ছে এ অঞ্চলে হতে খেজুরের চাষ। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর চাষ হলে মধুপুর গড় খেজুরের রস ও গুড়ের জন্য বিখ্যাত হবে উঠবে এমনটাই ধারনা সংশ্লিষ্টদের।


টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে আনারসের রাজধানীতে চলছে খেজুরের রস সংগ্রহ আর গুড় তৈরি । কুয়াশা ঢাকা ভোরে মাটির হাড়িতে ভরছে লাল মাটির খেজুরের টপটপে রস। কাঁধে নিয়ে ছুটছেন রসের হাড়ি। বড় কড়াইয়ে কাঁচা রস ঢেলে আগুনে জাল করছেন শীতের সকালে। আগুনের তাপে জলীয় বাষ্পে ঘন হচ্ছে রসের কড়াই। চারপাশ ঘ্রাণে মৌ মৌ ছড়িয়ে পড়েছে। যতই সময় ঘনিয়ে আসছে দেখা দিচ্ছে  ঘন রসের ঝোলাগুড়। মাটির চাটির উপরে কালো পলি বিছিয়ে ঢেলে দিচ্ছে গরম সিদ্ধ রসের ঘন ছানা। একটু পরেই জমাট বেঁধে রূপ নেয় গুড়ে। দারুন রঙ আর পরিবেশ সম্মত উপায়ে তৈরি হচ্ছে খেজুর গুড়। মেডিসিন কেমিক্যাল না দেওয়ায় মধুপুরের পাহাড়িয়া এলাকার পিরোজপুর গ্রামের তৈরিকৃত এ গুড়ের চাহিদা বেড়েই চলছে। প্রতিকেজি গুড় সাড়ে চারশ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। গুড় কিনতে আশপাশের উপজেলা থেকে আসছে লোকজন।


গড় এলাকার আনারসের বাগান, বিল, বাইদ ও পুকুর পাড়ের বিভিন্ন খেজুর গাছের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি করতে উত্তর বঙ্গ থেকে আসছেন কয়েকজন গাছি। তারা চুক্তি ভিত্তিক গাছ নিয়ে গুড় তৈরি করছে। লাল মাটির সুমিষ্ট গুড় নিয়ে গ্রামে চলছে পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম। পুরো শীত চলবে গুড় তৈরি এমনটাই জানালেন গাছিরা।


পিরোজপুর গ্রামের জোয়াহের আলী (৫৫) জানান, অন্যান্য জেলার গুড়ের চেয়ে লাল মাটির গুড় স্বাদে গুনে ঘ্রাণে আলাদা। ভেজাল মুক্ত  হওয়ায় স্থানীয়দের চাহিদা বেড়েছে। এমন গুড় পেয়ে খুশি স্থানীয়রা।


তারা মিয়া (৪৫) জানান, তার ১৫টি খেজুর গাছ এ বছর রস সংগ্রহের জন্য গাছিদের কাছে চুক্তি ভিত্তিক দিয়েছে। ভালো রস আসছে। এ রস নিয়ে গাছিরা তাদের গ্রামে গুড় তৈরি করছে। প্রতিকেজি গুড় সাড়ে চারশ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।


আবুল হোসেন (৫৪) জানান, বাজারের গুড়ের চেয়ে তাদের এলাকার তৈরিকৃত গুড় গুণেমানে স্বাদে গন্ধে অনেক ভালো। এ জন্য দূর দূরান্ত থেকে লোকজন গুড় কিনতে আসছে।


খেজুরের রস ও গুড় তৈরির কারিগর মহসিন মিয়া (৫০) জানান, রাজশাহী থেকে টাঙ্গাইলের মধুপুরে গাছ কাটতে এসেছি। এই জেলায় আমরা ১২ বছর ধরে শীত মৌসুমে গাছ কেটে রস সংগ্রহ ও রস থেকে গুড় তৈরি করি। খেজুরের রস অনেক ভালো। আমাদের সংগ্রহ করা রস ও গুড়ের মান ভালো থাকায় এর চাহিদা বেশি। তার মতে মধুপুরের খেজুরের রসের গুণগত মান অনেক ভালো।


উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান বলেন,  খেজুর রসে উপকারিতা আছে তেমনি ভাবে ক্ষতিও আছে। নিপা ভাইরাসের আক্রমনের হাত থেকে রক্ষার জন্য ১০০ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সিদ্ধ করে খেতে হবে। 


কালের পরিক্রমায় খেজুর গাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে রসের পরিমান মোটামুটি ভালো পাচ্ছে। আহরিত রসের খেজুরের  গুড় পেয়ে খুশি আনারসের জনপদের মানুষেরা। যদি আনারসের মতো খেজুরের চাষ করা যায়, তবে আনারসের মতো খেজুর গুড়েরও সুনাম ছড়িয়ে পড়বে দেশ ও বিদেশে এমনটাই আশা স্থানীয়দের।