চুয়াডাঙ্গায় খেজুরে রস ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০১ অপরাহ্ন, ৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪
শাহাদাৎ হোসেন লাভলু: দেশে জুড়ে শীতের শুরুতে নগর থেকে শহরে মিঠাপুলি খাওয়ার ধুম পড়েছে। খাঁটি খেজুরের গুড়ের তৈরি পুলিপিঠা খেতে কার না ভালো লাগে, শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে খেজুর রস খাবার সাধ একটু আলাদা, খেজুর রসের তৈরি পায়েস খেতে কার না ভালো লাগে।
চুয়াডাঙ্গার শহর, গ্রাম, পাড়া-মহল্লা সব জায়গাতেই পিঠাপুলি খাবারের ধুম পড়েছে শীতের শুরু থেকেই। আর সেই পিঠাপুলি যদি তৈর হয় খেজুরের গুড় দিয়ে তাহলে তো আর কথায় নেই। খেজুরের গুড়ের মুখোরচক পিঠাপুলির বাড়তি স্বাদ যেন আরো বেড়ে যায়।
বাংলাদেশে খাঁটি খেজুরের গুড়ের সন্ধানে কেউ যদি একটু খোঁজ করে তাকে অবশ্য চুয়াডাঙ্গার জেলার কথা মাথায় রাখতে হবে । এখানে প্রতি কেজি ভালো খেজুরের গুড় বিক্রি হয় ২ শত টাকা দরে এই গুড়ের ভার বিক্রি হয় ১৬০০ থেকে ২২০০ টাকা দরে।
মাঘ মাসের বিকেল বেলা গাষিরা সব কাজ শেষে মাটির ভাঁড় আর দা হাতে মাঝায় রশি পেচিয়ে উঠে পড়েন খেজুর গাছে। রস সংগ্রহের পর তৈরি করা হয় খেজুরের গুড়। প্রতিবছরই শীতের শুরুতেই জেলার বিভিন্ন গ্রামে বাড়ি বাড়ি দেখা মিলে খেজুরের রস দিয়ে তৈরি গুড়।
প্রতিদিনই এসব গুড় গ্রাম থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে হাঁটে-বাজারে বিক্রি করছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা চুয়াডাঙ্গায় এসে খেজুরের গুড় কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এসব পাইকারি ব্যবসায়ীদের অধিকাংশ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার গুড় ব্যবসায়ীরা।
চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ খেজুর গুড়ের হাট এখনে বেশ জমজমাট। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ , পাবনা, সাভার, সিলেট, চট্রগ্রাম, বরিশাল, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসে এই হাটে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা গুড় ব্যবসায়ীদের পদচারণায়, সপ্তাহে হাটের দুই দিনে মুখর হয়ে ওঠে হাটচত্বর। ক্রেতা বিক্রেতার মাঝে চলে দাম কষাকষি। গুড় কেনার পর মাটির ভাঁড় সারি সারি ভাবে সাজিয়ে তোলা হয় ট্রাকে। আর এসব ট্রাকে খেজুরের গুড় চলে যায় দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে।
হাঁটে গুড় কিনতে আসা পাইকারি ক্রেতা-ব্যবসায়ীরা বলছেন গত বছরের তুলনায় এবার খেঁজুরের গুড়ের দাম একটু চড়া। তবে আমদানির তুলনায় চাহিদা বেশি হলে সব জিনিষেরই দাম বাড়ে।
আরও পড়ুন: মাঘের শীতে কাঁপছে দেশ, সর্বনিম্ন চুয়াডাঙ্গায় ৬.৬ ডিগ্রি
খেজুর গুড়র ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। এমনটাই বলছেন গুড় বিক্রেতারা। আলমডাঙ্গা নওদা হাঁপানিয়া গ্রামের গাছি রমজান আলী বলেন এবার আমি ৪ শতাধিক গাছ উঠিয়েছি ।
চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে সপ্তাহের যে দুদিন হাট বসে সে দুদিনই এই হাট থেকে ২৫ থেকে ৩০টি ট্রাক নিয়ে খেজুর গুড় দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। পাইকারি ব্যাপারীরা কেজি দরের চেয়ে ভাঁড় হিসেবে গুড় দাম করে কিনতে অধিক আগ্রহী।
ডিঙ্গেদহ বাজারের বাসিন্দা খেজুরের গুড় বিক্রেতা কামরুজ্জামান সেলিম জানান, শীত মৌসুমের সময় তিনি খেজুরের গুড় চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ হাটে পাইকারি বিক্রি করেন। ছোট ভাঁড় ৮০০ টাকা থেকে সাড়ে ১০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মাঘ মাসে বাঘ কাঁপে, শীতে কাঁপছে ঢাকা
স্থানীয় সাধারণ গুড় বিক্রেতাদের দাবি বাইরের জেলার পাইকারি বিক্রেতারা গুড় কিনতে এসে যেন কোন প্রকার হয়রানীর শিকার না হয় সে দিকটা প্রশাসন যদি একটু সুনজর রাখে তাহলে ঐতিহ্যবাহী এই গুড়ের হাট আরও জমে উঠবে।
সুন্নত আলী বলেন, এক ভার রস থেকে আধা কেজি গুড় সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে বর্তমান বাজার মূল্যে আমরা ২০০ টাকায় ১ কেজি গুড় বিক্রি করছি এবং এক গ্লাস রসের মূল্য আমরা দশ টাকা নিয়ে থাকি।
জেবি/এসবি