পুলিশি নির্যাতনে কারাগারে হাজতির মৃত্যুর অভিযোগ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


পুলিশি নির্যাতনে কারাগারে হাজতির মৃত্যুর অভিযোগ

বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা মামলার এক আসামির মৃত্যু হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর গতকাল রোববার বুকে ব্যথায় মারা যান আসামি জহিরুল হাওলাদার (২৩)। কিন্তু, মানতে নারাজ মৃতের স্বজনরা। তাঁদের দাবি কারাগারে নির্যাতনের কারনে মারা গিয়েছেন তিনি। 

মৃত জহিরুল বরিশালের মেহেদিগঞ্জেরে চরফেনুইয়ার বৃদ্ধ দেলোয়ার হোসেন হত্যা মামলার ১২ নম্বর আসামি ছিলেন। গত ১২ জানুয়ারি তাঁকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

কারাগারসূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল সাড়ে ১০ টায় হঠাৎ করে বুকে ব্যথা ওঠে জহিরুলের। এরপর তাঁকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে জহিরুলের মৃত্যুকে অস্বাভাবিক দাবি করে স্বজনদের অভিযোগ, থানায় ও কারাগারে নির্যাতন করা হয়েছে বলেই মারা গেছেন জহিরুল। তাঁরা বলছেন, ২৩ বছরের একটি ছেলে বুকে ব্যথা উঠে হঠাৎ করে মারা যেতে পারে না। তাঁকে পুলিশ নির্যাতন করেছেন।

মৃত্যুর ৪/৫ দিন আগে জেলের ভেতর কে বা কারা জহিরুলকে জোর করে একটি ইনজেকশন দেবার পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি, দাবি স্বজনদের। 

তবে পুলিশ এ বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। হাসপাতাল ও কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা সম্ভব হচ্ছে না।

জহিরুলের বড়ভাই মোহাম্মদ আলী আকবর বলেন, ‍“আমার ভাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না। ঢাকা থেকে বাড়িতে বেড়াতে আসছিল। এ সময় জহিরুলকে ১২ নম্বর আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।”

আলী আকবর বলেন, “পিবিআইয়ের লোকজন আমার ভাইকে গ্রেপ্তার করে আদালতে না দিয়ে ওকে নির্যাতন করে। ব্যাপক মারধর করে। সেই থেকেই জহিরুল অসুস্থ ছিল।”

মৃতের ভাই আরও বলেন, “৪/৫ দিন আগে কারাগারের মধ্যে কিছু লোক জহিরুলকে জোর করে চেপে ধরে ঘাড়ে ইনজেকশন দেয়। এ খবরটা জহিরুল আমাদেরকে জেল থেকে ফোন করে জানিয়েছিল। গত রোববার সকালে ফোন দিয়ে জহিরুল মারা গেছে বলে কারাগার থেকে জানানো হয়।”

আলী আকবরের দাবি জহিরুলের যে বয়স, তাতে যেভাবে মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে, সেটা বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। তাঁকে অমানবিক নির্যাতন করে মারা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। 

মৃত জহিরুলের ভগ্নিপতি মোহাম্মদ জুয়েল বলেন, “জহিরুল কোনো সময় কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল না। মার্ডার করছে এক গ্রুপ, আর আসামি করছে নিরাপরাধ লোকজনের।”

জুয়েল বলেন, “ঢাকায় স্ক্রিন প্রিন্টের দোকান আছে জহিরুলের। বাদী পক্ষ পুলিশের টাকা পয়সা খাইয়ে জহিরুলরে নির্যাতন করিয়েছে। জহিরুলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিচার চাই।”

বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের অ্যাম্বুলেন্স চালক মোহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, “সকালে যখন হাজতিকে গাড়িতে উঠানো হচ্ছিল, তখন তাঁর মুখ থেকে ফ্যানা বের হচ্ছিল। কারাগারে বসেই মারা গেছে এই হাজতি।”

বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের রক্ষী উত্তম বলেন, “আমরা তো আর ডাক্তার না। যতটুকু শুনেছি সেটা হচ্ছে বুকে ব্যথা উঠে মারা গেছেন এই ব্যক্তি।”

কারাগারের ডেপুটি জেলার আল মামুন খান বলেন, “জহিরুল হাওলাদার নামের এই কয়েদি বেশ কয়েকদিন ধরে অসুস্থ ছিল। হঠাৎ করেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।”

বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, “কারাগারে মৃত হাজতি কোনো হামলার স্বীকার হয়নি বা নির্যাতিত হয়নি। এমনটা হবার কোনো সুযোগ নেই। আগে তাঁকে কেউ নির্যাতন করেছে কি না, সে বিষয়টিও আমাদের নজরে আসেনি।’ প্রশান্ত কুমার বলেন, ‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থেকে সব বিষয় দেখছেন। হাজতির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”

পিআইবি বরিশালের সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, “তিন ম্যাস আগে এই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তখন মেডিকেল ফিটনেস দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এখন নির্যাতনের পর মৃত্যু হয়েছে, এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। এটি পুরোপুরি অসত্য।”

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, “হাসপাতালে আনার আগেই ওই হাজতির মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ছাড়া মৃত্যুর কারণ বলা যাচ্ছে না।”

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৬ মে মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে কৃষক দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে জাহিদুল ইসলাম হাওলাদার বাদি হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১০ জনের বিরুদ্ধে মেহেদিগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার ১২ নম্বর আসামি ছিলেন জহিরুল। দেলোয়ার হোসেন মৃত জহিরুলের প্রতিবেশী ছিলেন।

এসএ/