পঞ্চগড়ে ভালবাসায় সিক্ত সাফজয়ী নারী ফুটবলার ইয়ারজান
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮:৩৯ অপরাহ্ন, ৩০শে মার্চ ২০২৪
ফুলেল ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ জয়ী অনুর্ধ্ব ১৬ নারী ফুটবলার ইয়ারজান বেগম। শনিবার (৩০ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে নিজ গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামে ফেরেন তিনি। এসময় স্থানীয়রা ফুল ছিটিয়ে এবং ফুলের তোড়া দিয়ে তাকে বরণ করে নেন। সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ জয়ী অনুর্ধ্ব ১৬ কাপ জেতার পরে দীর্ঘ তিন মাস পরে বাসায় ফিরলেন ইয়ারজান। সন্তানকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মা রেনু বেগম সহ পরিবারের সদস্যরা। সন্তানকে জড়িয়ে ধরে চুমু খান মা রেনু বেগম। পরে ইয়ারজান তার মা, বাবা দাদা দাদী ও তার ফুটবল কোচের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেন। নিজ এলাকায় ফিরে স্থানীয় স্বজনদের এমন ভালবাসায় মুগ্ধ ইয়ারজান।
ইয়ারজান বেগম বলেন, সাফ খেলার পরে প্রথম বাসায় আসলাম। আমার খুব ভালো লাগছে। আমি কখনই কল্পনাই করিনি আমার বাসায় এতো লোক আসবে। আমি সকলের কাছে দোয়া কামণা করি সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন জাতীয় দলে খেলে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারি। আপাতত আমি ক্লাব লীগে খেলার জন্য সিরাজ ক্লাবের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। আপাতত সেখানে খেলবো।
ইয়ারজানের মা রেনু বেগম বলেন, দীর্ঘদিন পরে মেয়েকে কাছে পেলাম আজ। আমার মেয়ে সেদিন (সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে) ভালো খেলেছে। আমি সবার কাছে আমার মেয়ের জন্য দোয়া চাই। সে যেন আগামীতে ভালো খেলতে পারে। ইয়ারজানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কারো সন্তান যদি দীর্ঘ দিন বাইরে থাকে তার যে কি বেদনা যার সন্তান আছে সেই বোঝে। এই তিনটা মাস ইয়ারজানকে ছাড়া কিভাবে যে কেটেছে তা বলে বোঝাতে পারবোনা। আমার মেয়ে যে খেলেছে দেশের হয়ে আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন। সে যেন আরো ভালো করে খেলতে পারে। জাতীয় দলের হয়ে খেলে দেশের সুনাম বয়ে নিয়ে আসতে পারে।
আরও পড়ুন: আবারও বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
ইয়ারজানের কোচ ও টুকু একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক টুকু রেহমান বলেন, সারা দেশ জানে ইয়ারজান যে সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে ভালো খেলছে। সে বাংলাদেশকে একটি ট্রফি এনে দিয়েছে। সেরা গোল রক্ষকের পুরস্কার পেয়েছে। এটা আমি টুকু ফুটবল একাডেমী ও পঞ্চগড়ের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই। আপনারাও আপনাদের সন্তানদের ফুটবল প্রশিক্ষণে পাঠান। তারাও যেন ভালো খেলোয়ার হয়ে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারে।
এদিকে ইয়ারজানের বাসায় ফেরার খবর পেয়ে শনিবার সকাল থেকে তার বাসায় আসতে শুরু করেন শত শত স্থানীয় লোকজন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেন শুধু ইয়ারজানের সাথে দেখা করার জন্য। ইয়ারজান বাসায় পৌছার পরপরই পুরো বাড়ি মানুষজনে ভরে যায়। পরে ইয়ারজান প্রতিবেশি স্থাণীয়দের সাথে কুশল বিনিময় করেন। ইয়ারজানের সাফল্যে খুঁশি এলাকাবাসীরাও।
হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নুর ই আলম বলেন, আমাদের এই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ইয়ারজান দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে এজন্য তাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে ধন্যবাদ জানাই টুকু ফুটবল একাডেমীকে যারা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে তাকে ভালো ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে এমন খেলোয়ার তৈরি করেছেন। ইয়ারজান তার মেধার পূর্ণ বিকাশ ঘটিয়েছে এজন্য সে খেলায় ভালো করেছে। তার জন্য শুভকামণা রইল।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে চাষ হচ্ছে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ দানাদার কিনোয়া
জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, আমরা ইয়ারজান সহ সাফজয়ী অনুর্ধ্ব ১৬ এর চার নারী ফুটবলারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধণার আয়োজন করবো। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইয়ারজানের জন্য একটি পাঁকা বাড়ী স্বাস্থ্য সম্মত শোচানাগার করে দিয়েছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃতি খেলোয়ারদের জন্য শুভ কামণা রইল।
এদিকে এর আগে, শনিবার (৩০ মার্চ) সকালে বাস যোগে পঞ্চগড়ে পৌছান ইয়ারজন ও তার কোচ টুকু রেহমান। পরে শনিবার দুপুরে টুকু ফুটবল একাডেমীর আয়োজনে তাকে নিয়ে একটি পিকআপে করে পঞ্চগড় শহর জুড়ে আনন্দ মিছিল করা হয়।
উল্লেখ্য, রবিবার (১০ মার্চ) নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ অনুর্ধ্ব ১৬ এর ফাইনাল খেলায় ভারতকে পেনাল্টি শ্যুট আউটে ১(৩)-১(২) গোলে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়।
এমএল/