পঞ্চগড়ে পল্লী বিদ্যুতের দুই কর্মী সাড়ে ৩ ঘন্টা অবরুদ্ধ
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:৫৪ অপরাহ্ন, ৩১শে মার্চ ২০২৪
পঞ্চগড়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মীদের সীমাহীন অনিয়ম, ঘুষ বানিজ্য ও দুর্নীতি আর রিডিংয়ের অতিরিক্ত বিলের কারণে নাজেহাল হয়ে পড়েছে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের সুবারভিটা এলাকার কয়েকশত গ্রাহক সাধারণ। তারা পল্লী বিদ্যুতের কর্মী ও তাদের নিয়োজিত দালালদের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। এমনকি ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা মঙ্গলবার পল্লী বিদ্যুতের দুই কর্মী ও এক দালালকে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলেও তাদের ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় রাখা হয়।
আরও পড়ুন: আবারও বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা জানায়, পল্লী বিদ্যুতের টুনিরহাট অফিসের ইনচার্জ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরেই তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। তার নিয়োজিত দালাল সোহেল রানা ও মিটার রিডার গোলাম হোসেনের কাছে তারা অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। যেমন খুশি যেমন বিল করছেন তারা। কখনো ১ হাজার টাকা আবার কখনো ৫ হাজার টাকা। মিটারের রিডিংয়ের চেয়ে অতিরিক্ত বিল করা হচ্ছে। অন্যদিকে কারণে অকারণে চলছে ঘুষ বাণিজ্য। গ্রামে যারা ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশা ভ্যান চালান তাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে জন প্রতি ৫০০ টাকা করে ঘুষ করে আদায় করে তিনজনের এই সিন্ডিকেট। দিনের পর দিন এমন অনিয়ম আর হয়রানিতে নাজেহাল গ্রামের মানুষেরা। মঙ্গলবার দুপুরে মিটার রিডার গোলাম হোসেন দালাল সোহেল রানাকে নিয়ে ওই গ্রামের হেলাল উদ্দিনের বাড়িতে গেলে তাদের দুজনকে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে টুনিরহাট অফিসের ইনচার্জ মিজানুর রহমান তাদের উদ্ধার করতে গেলে তাকেও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। বিকেলে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করেন এবং বিষয়টি পল্লী বিদ্যুতের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বসে সমাধান করার অনুরোধ করেন। এ সময় তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল দুটি স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় রাখা হয়। পরে মোটরসাইকেল দুটি বোদা থানায় পৌছে দেয়া হয়।
হেলাল উদ্দিন বলেন, আমার এ মাসের বিলে তারা উল্লেখ করেছে পূর্ববর্তী ০ ইউনিট ও বর্তমান ৩৩০ ইউনিট। অথচ বিলের সময় বিল করা হয়েছে ৪৮৯ ইউনিটের। ১৫৯ ইউনিটের বিল অতিরিক্ত করা হয়েছে। বিল তৈরির ১৮ দিন পর এখন আমার মিটারের বর্তমান রিডিং ৪১৭ কিলোওয়াট। এভাবে করেই আমাদের মতো বোকাসোকা মানুষদের প্রতারিত করে যাচ্ছে তারা। তাই আজ গ্রামের সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের ঘেরাও করে রাখে।
ওই এলাকার ওসমান গণি বলেন, যেখানে কারো ৩’শ টাকা বিল আসার কথা সেখানে আসে ৯’শ টাকা। মিটার রিডিংয়ে যা আছে তার থেকে ৫০ থেকে ১৫০ ইউনিট পর্যন্ত বেশি বিল করছে তারা। আজকে তাদের নিয়ে আমরা বিভিন্ন মিটার চেক করেছি। ধরা পড়ার পর তারা এখন বলছে ভুল হয়েছে। ওই এলাকার রেজিনা বেগম বলেন, আমাকে ভুল বুঝিয়ে একই বিল দুই বার নিয়েছে তারা।
মোহাম্মদ বুল বলেন, আমি ইজিবাইক চালাই। আমাদেরকে প্রতি মাসে ৩’শ থেকে ৫’শ টাকা পর্যন্ত প্রতি মাসে ঘুষ দিতে হয় পল্লী বিদ্যুতের লোকজনদের। সোহেলের মাধ্যমে তারা এই টাকা নেয়। টাকা না দিলে লাইন কেটে দেয়াসহ বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেয়া হয়।
পল্লী বিদ্যুতের টুনিরহাট অফিসের ইনচার্জ মিজানুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিউজ করার দরকার নেই। কিছু চা খাওয়ার টাকা দেই নিয়ে যান। ওটা সমাধান হয়ে গেছে। মেম্বার বলেছে মোটরসাইকেলে পৌছে দিবে।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে চাষ হচ্ছে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ দানাদার কিনোয়া
পল্লী বিদ্যুৎ পঞ্চগড় অফিসের ডিজিএম গোলাম রব্বানী বলেন, আমার গ্রাহকদের অনেক বিষয় ছাড় দেই। তাদের কোন অভিযোগ থাকলে আমার কাছে অভিযোগ করতে পারতো তারা। তা না করে তারা আমাদের কর্মীদের অবরুদ্ধ করেছে মোটরসাইকেল আটক করেছে। তারা তো কোনভাবেই আইন হাতে তুলে নিতে পারে না। বাইরের লোক যদি টাকা চায় তাকে টাকা দেবেন কেনো। আর পল্লী বিদ্যুতের নামে যদি কেউ টাকা নেয় তাহলে আমাকে বা থানায় অভিযোগ না করলে আমরা জানবো কেমন করে। ইতিমধ্যে অনিয়মের কারণে কয়েকজনের চাকরি চলে গেছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি।
বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. মোজাম্মেল হক বলেন, এ ঘটনায় মোটরসাইকেল দুটি থানায় এনে দিয়েছে তারা। পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ করা হয়েছে। সেটি আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
জেবি/এসবি