ঈদে দু:স্থদের জন্য ভিজিএফের চাল বিতরণের আগেই ২০ বস্তা উধাও
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৩৩ অপরাহ্ন, ৫ই এপ্রিল ২০২৪
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে কামরাবাদ ইউনিয়নের চাল বিতরণের আগেই চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে ভিজিএফের ৫০ কেজির ২০ বস্তা চাল বিক্রির অভিযোগ উঠেছে । সংবাদ পেয়েই বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাতে সরিষাবাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মুহ. সাদ্দাম হোসেন কামরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে যান।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সকাল থেকে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে নানা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। সরকার প্রদত্ত যে চালের হকদার সমাজের হতদরিদ্র শ্রেণীর মানুষ, তা তাদের ঘরে না পৌঁছে কেন জলাশয়ে ‘ডুব’ দিয়েছে আর গুদামে ‘আত্মগোপন’ করেছে, তা অতি পরিষ্কার। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্তরাই যে চোরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, তা বুঝতে না পারার কোনো কারণ নেই। দেশে নানা কিসিমের চোর আছে। তবে সরিষাবাড়ীতে চাল চোরেরা এতটাই নির্লজ্জ ও বিবেকহীন যে, হতদরিদ্রদের প্রাপ্য চাল আত্মসাতে তারা বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেনি।
খোজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকার গরিব দু:স্থ ও অসহায়দের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকল্পে দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে ভিজিএফ কর্মসূচী চালু করেছে। এই ভিজিএফ'এর চাল বরাদ্দে এবং বিতরণে উঠেছে ব্যাপক দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ। এতে সরকারের ভাবমূর্তী যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি বঞ্চিত হচ্ছেন অসহায় দু:স্থরা। এই দুর্নীতি অনিয়মের সাথে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যান সহ কয়েকজন সিন্ডিকেট। পত্র পত্রিকায় ভিজিএফ চাল বরাদ্দে, বিতরণে নিন্মমাণের চাল এবং ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ শিরোনামে অগনিত সংবাদ প্রকাশ হতে দেখা যায়। কিন্তু পত্রিকায় খুব একটা দেখা যায় না যে, সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুল: পুলিশ হাসপাতাল স্টাফদের ঈদ উপহার তুলেদেন পুলিশ সুপার
প্রত্যক্ষ দর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার ইফতারের আগে আমাদের এলাকার ঘাটে আমরা দেখি যে, আব্দুল্লাহ ফাইটার দিয়ে সরকারী চালের বস্তা নিয়ে যাচ্ছে। পরে জালেকের গোডাউনে নিয়ে সেখানে বস্তা ব্লিড দিয়ে খুলে তাৎক্ষনিক প্লাষ্টিকের বস্তায় চাল তুলে ফেলেছে। পরে আমরা মতি ভাইকে জানাই। তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছে। উপজেলা থেকে অফিসার আসতে আসতে চাল বিক্রি হয়ে গেছে। পরে এসিল্যান্ড স্যার সবার কাছ থেকে ঘটনার বিষয়ে জেনেছে এবং চাল চুরি যাতে না হয় তার জন্য গোডাউনের তালা উপরে তালা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মতি মন্ডল জানান, আমি খবর পেয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার,আমাদের এম্পি স্যার সহ দলের কয়েক জনকে অবগত করি। পরে রাত ৯ টা থেকে সাড়ে নয়টায় এসিল্যান্ড সাহেব এসে দেখে গেছে। শুক্রবার প্লাস্টিকের কয়েকটি বস্তা আবার পরিষদে নিয়ে এসেছে শুনলাম। গরীবের চাল গরীবের মধ্যে বিতরনের জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
এদিকে কামরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জিএস জানান, আমার এখানে ২৫৯৫ জন সুবিধাভোগীদের কার্ডে ১০ কেজি চাল বিতরণ করা হবে। ৫০ কেজির ২০ বস্তা চাল উধাও এই প্রশ্ন করা হলে তিনি অস্বীকার করে বলে আপনার সাথে পরে কথা এবং দেখা হবে।
আরও পড়ুন: মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথেই প্রাণ গেল স্বামী-স্ত্রীর
এ দিকে কামরাবাদ ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশের দফাদার মিলন দাস জানান, রাতে এসিল্যান্ড স্যার এসেছিল। আমাকে বলেছে আপনি মাল তোলার সময় ছিলেন, আমি বলেছি না ছিলাম না। আমি জামালপুর ছিলাম। পরিষদ থেকে মাল যেটা বের হয়েছে সম্পুর্ন বিষয় আমি স্যারকে সবার সামনে বলেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শওকত জামিল জানান, এ বিষয়ে আমি কোনো অভিযোগ পাইনি। ভি জি এফ বিতরণ এর আগে ট্যাগ অফিসার স্টক (উক্ত ইউনিয়ন এর বরাদ্দকৃত চালের পরিমাণ) মিলিয়ে বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। বরাদ্দকৃত ভি জি এফ চাল বিক্রয় সম্পূর্ণ অইন বহির্ভূত। এমন কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মুহ. সাদ্দাম হোসেন শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দুপুর ৩ টায় মুঠোফোনে জানান, অভিযোগ পেয়ে আমি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই সেখানে কেউ নেই। পরে স্থানীয় ব্যক্তি ও চকিদারের কাছে বিস্তারিত শুনি। ঘটনার কিছুটা সত্যতা আছে। ২০ বস্তা না হলে ৫/৭ টি বস্তা মনে হয়। আর যে নামিয়েছে আমি তার সাথেও কথা বলেছি। আমি সিনিয়র স্যারদের জানিয়েছি। দেখি তারা কি ব্যবস্থা নেয়।
এমএল/