রেকর্ড পরিমাণ টাকা পাওয়া গেল পাগলা মসজিদের দানবাক্সে
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:০২ অপরাহ্ন, ২১শে এপ্রিল ২০২৪
কিশোরগঞ্জ সদরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে দিন দিন বাড়ছে দানের টাকার পরিমাণ। প্রতিবার দান সিন্দুক (দানবাক্সে) খুলে মিলেছে টাকা, বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
শনিবার (২০ এপ্রিল) মসজিদের ১০টি দানবাক্স থেকে সকল রেকর্ড ভেঙে পাওয়া গেছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা।
আরও পড়ুন: প্রেমিকাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে চিঠি
সাধারণত ৩ মাস পর পর পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খোলা হলেও এবার ৪ মাস ১০ দিন পর সকালে পাগলা মসজিদে ৯টি দানবাক্স ও একটি ট্রাঙ্ক খোলা হয়। মূলত মসজিদের ১০টি দানবাক্সে পাওয়া যায় রেকর্ড ২৭ বস্তা টাকা। দিনভর গণনা শেষ রাত দেড়টার দিকে জানানো হয় টাকার পরিমাণ।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ কেএম শওকত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শনিবার সকাল ৮টা থেকে টানা ১৭ঘণ্টা গণনার পর টাকার পরিমাণ জানা গেছে। টাকা ছাড়াও পাওয়া গেছে বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার। ভোরে মসজিদের ৯টি সিন্দুক ও একটি স্টিলের ট্রাঙ্ক খুলে বের করা হয় ২৭ বস্তা টাকা।
ভোরে পাগলা মসজিদে গিয়ে দেখা গেছে, বড় বড় লোহার সিন্দুক খুলে বের করে আনা হচ্ছে টাকা। একটি কিংবা দুটি নয়, গুণে গুণে ৯টি লোহার সিন্দুক আর একটি ট্রাঙ্ক থেকে পাওয়া এসব টাকা। পরে বস্তায় করে নেয়া হয় মসজিদের দ্বিতীয় তলায়। সেখানে মেঝেতে ঢেলে চলে গণনার কাজ। প্রতি তিন মাস পর এমন দৃশ্য দেখা যায় কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে। এবার ৪ মাস ১০ দিনের ব্যবধানে মসজিদের দান সিন্দুক খোলা হয়।
শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের বিভিন্ন স্থানে রাখা নয়টি দান সিন্দুক ও একটি অস্থায়ী ট্রাঙ্ক থেকে টাকা সংগ্রহ করা হয়। দানবাক্সে পাওয়া টাকা গণনার কাজে অংশ নেন পাগলা মসজিদ নূরানী কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার ১১২ শিক্ষার্থী, রুপালী ব্যাংকের ৫০ জন কর্মকর্তা কর্মচারিসহ দুই শতাধিক মানুষ। এর আগে ৯ ডিসেম্বর সবশেষ মসজিদের দান সিন্দুক থেকে পাওয়া গিয়েছিলো ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। বড় বড় লোহার সিন্দুক খুলে বের করে আনা হয় টাকা।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, দানের টাকা জমা রাখা হয় মসজিদের নামে খোলা একটি ব্যাংক একাউন্টে। প্রায় ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাগলা মসজিদের টাকা নয়ছয় করার কোনো সুযোগ নেই। সুক্ষ্মভাবে প্রতিটি টাকার হিসাব রাখা হয়। প্রতিবার টাকাগুলো গুনে ব্যাংকের হিসাবে জমা রাখা হয়।
আরও পড়ুন: পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল ২৭ বস্তা টাকা
জনশ্রুতি আছে, কোন এক সময় একজন আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা চরে। ওই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর এখানে নির্মিত মসজিদটি পাগলা মসজিদ হিসেবে পরিচিতি পায়। পাগলা মসজিদে মানত করলে মনের আশা পূর্ণ হয়। এমন ধারনা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ এ মসজিদে দান করে থাকেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এখানে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে।
গত বছর পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক থেকে পাওয়া যায় ২১ কোটি, ৫৬ লাখ, ২ হাজার ৩৫৮ টাকা। তবে মসজিদের তহবিলে মোট কত টাকা জমা আছে সেটি প্রকাশ করেনি, মসজিদ কমিটি।
জেবি/এজে