ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উড়ে গেল সমুদ্রপাড়ের শতাধিক দোকান


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:৩৭ অপরাহ্ন, ২৭শে মে ২০২৪


ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উড়ে গেল সমুদ্রপাড়ের শতাধিক দোকান
ছবি: প্রতিনিধি

ঘূর্ণিঝড় রেমাল প্রথমত কক্সবাজারে কোন ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি করতে না পরলে পরবর্তিতে তান্ডব চালিয়েছে। ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর পর পরই কক্সবাজারে শুরু হয় ঝড়ো হওয়া। যে ঝড়ো হওয়ায় সৈকতপাড়ের শতাধিক দোকানপাট উড়ে গেছে। আগ্রাসী সাগরের ভয়ঙ্কর ঢেউয়ে উপড়ে গেছে ঝাউ গাছ।


ঘূর্ণিঝড় রোমল পরবর্তী কক্সবাজারে ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়া চলছে। রবিবার (২৬ মে) রাত ১০ টা থেকে শুরু হওয়া এই ভারী বর্ষণ সোমবার (২৭ মে) দুপুর ১২ টা পর্যন্ত অব্যাহত আছে। থেমে থেমে চলা এ ভারী বর্ষণের সাথে ঝড়ো হওয়া ও বজ্রপাত। সোমবার সকালে ঝড়ো বাতাস। সৈকতে উড়ছে বালু। অনেক সময় ঝড়ো বাতাসে উপড়ে পড়ছে গাছপালা। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেয়া ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামানোর ঠিক পরপরই শুরু হয় এই তান্ডবলীলা। ঝড়ো বাতাসে উড়ে গেছে সৈকতপাড়ের বিভিন্ন দোকানপাট। শুধু একটি দুটি পয়েন্টে নয়, সৈকতের ৫ টি পয়েন্টের শতাধিক দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শেষ সম্বলটুকু রক্ষায় তুমুল বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাস উপেক্ষা করে দোকান রক্ষার চেষ্টা করছেন অনেকেই।


সৈকতের লাবণী পয়েন্টের চায়ের দোকানি তুহিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় কক্সবাজার অতিক্রম করার পর এভাবে তুমুল বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাস আগে কোন দিন দেখিনি। এই প্রথম ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহ তান্ডব স্বচক্ষে দেখলাম। আমার দোকানের ছাউনি বাতাসে উড়ে গেছে আর পানির বোতল থেকে শুরু করে চিপসের প্যাকেট উড়ে কোথায় গেছে জানিনা।


আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপে ভেঙেছে গাছ-পালা ও ঘরবাড়ি


চটপটির দোকানদার আমান উল্লাহ বলেন, লাবনী পয়েন্টের ১০টি দোকানের ছাউনি থেকে শুরু মালামাল উড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন বাকি যা আছে তা রক্ষা করার চেষ্টা করছি।


শামুক-ঝিনুকের ব্যবসায়ী আবু বলেন, ত্রিপল দিয়ে মালামাল রশি দিয়ে বেঁধে ছিলাম। কিন্তু বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাসে সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় ২০ হাজার টাকার মালামাল বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে।


বেলা ১১ টার পরপরই শুরু হয় জোয়ারের। সর্বোচ্চ উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। উপকূলের ঝাউ বনে তান্ডব শুরু করে। উপড়ে ফেলে বেশ কিছু বড় বড় বৃক্ষ। ভয়ঙ্কর ঢেউয়ের তোপে তলিয়ে গেছে শহর রক্ষা বাঁধ।


এমন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে বেপরোয়া পর্যটকদের সামলাতে বেশ হিমসিম খায় কর্তৃপক্ষ। ভয়ঙ্কর ঢেউয়ের মাঝেও সমুদ্রস্নানে নামছেন এদের অনেকেই। বারবার মাইকিং করেও কোনভাবে সরানো যাচ্ছে না তাদের। শেষমেষ ভয়ংকর ঢেউ থেকে পর্যটকদের জীবন রক্ষায় লাঠি হাতে তুলে নেন বিচের কর্মীরা।


আরও পড়ুন: ভারী বর্ষণে কক্সবাজারের ৩০ গ্রাম প্লাবিত


কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. মাসুদ রানা বলেন, গত দুইদিন ধরে পর্যটকদের কাছে অনুরোধের কোনো শেষ রাখেনি। বারবার হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করেছি, সমুদ্রস্নান থেকে বিরত থাকুন, পানি থেকে উঠে যান। কিন্তু জলোচ্ছাসের সর্বোচ্চ সীমার মাঝেও সমুদ্রস্নানে নামছেন পর্যটকরা। এই মুহুর্তে তাদের জীবন রক্ষায় আমাদের শক্তি প্রয়োগ করা ছাড়া আর কিছুই বাকি ছিল না। তারপরও বার বার অনুরোধ করছি, কিন্তু কোন কিছুই মানতে চান না এই ভ্রমণপিপাসুরা।


কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের উপ সহকারী আবহাওয়াবিদ তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, রবিবার (২৬ মে) দুপুর ১২ টা থেকে সোমবার (২৭ মে) দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে ৯৩ মিলিমিটার। আগামি আরও ২/৩ একই ধরণের বৃষ্টি অব্যহত থাকবে। এর ফলে পাহাড় ধ্বসের আশংকা রয়েছে। সাগরের পানি স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে এখনও ২ ফুট উচ্চতায় রয়েছে। ফলে সাগরবর্তী এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করবে।


বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে কক্সবাজারের অন্তত ৩০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ও জনপ্রতিনিধিগণ। এর মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরাটেক, কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতি পাড়া, মোস্তাকপাড়া, ফদনার ডেইল, নুনিয়ারছড়া, মহেশখালী উপজেলার ধলাঘাটা ও মাতারবাড়ি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব উপকূলের লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন। যাদের রান্না করা খাবার বিতরণ করছে প্রশাসন।


আরও পড়ুন: কক্সবাজারে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে সাধারণ মানুষ


এদিকে, ভূমিধ্বসের আশংকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারিতে নিরাপদে আশ্রয় নিতে প্রচারণা চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান জানিয়েছেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণদের নিরাপদে আশ্রয় নিতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও জনপ্রতিনিধিগণ কাজ করছেন। তবে সহজে নিরাপদে আশ্রয় না নিলে তাদেরকে জোরপূর্বক সরানো হবে।


এমএল/