কারাগারে পরিচয়, সিন্ডিকেটে অস্ত্র চোরাচালান করে চক্রটি


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩:৫৩ অপরাহ্ন, ২৬শে জুন ২০২৪


কারাগারে পরিচয়, সিন্ডিকেটে অস্ত্র চোরাচালান করে চক্রটি
ছবি: জনবাণী

কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার কাজী জাফর ছাদেক রাজু  ও সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের ধাউনখালি এলাকার হুমায়ূন কবির মাদক সংশ্লিষ্ট মামলা কারাগারে গিয়েছিলেন। আর কারাগারে পরিচয় হয়েছিল মাদক মামলায় থাকার ফটিকছড়ির জাবেদ নামের এক জনের সাথে। কারাগারে পরিচয় ও সখ্যতার সূত্র ধরে তিন জন কারাগার থেকে বের হয়ে জড়িয়ে পড়ে অস্ত্র চোরাচালানে। খাগড়াছড়ির একটি চক্রের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করার কাজটি করে এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা।


বুধবার (২৬ জুন) অস্ত্র ও গুলিসহ কক্সবাজারের রাজু ও হুমায়ূনকে আটকের পর র‌্যাব এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।


আরও পড়ুন: সেন্টমার্টিনে চিকিৎসা সেবা বিপর্যয়ের আশংকা


র‌্যাব জানিয়েছেন, ফটিকছড়ির জাবেদ সহ এই সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যদের আটক করা সম্ভব হলেই খাগড়াছড়ির অস্ত্র চক্রের সদস্যদেরও শনাক্ত করা সম্ভব হবে।


মঙ্গলবার রাতের বিভিন্ন সময় কক্সবাজার সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের ধাউনখালি এবং শহরের কলাতলীর মেরিন ইকো রিসোর্ট থেকে রাজু ও হুমায়ুন নামের এই দুইজনকে আটক করে র‌্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, একটি থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল এবং গুলি উদ্ধার করা হয়।


আটক কাজী জাফর ছাদেক রাজু (৪০) কক্সবাজার শহরের মধ্যম বাহারছড়ার আবদুস সবুর চৌধুরীর ছেলে এবং হুমায়ূন কবির (২৪) ধাউনখালী এলাকার কবির আহমদের ছেলে।


র‌্যাব ১৫ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী জানিয়েছেন, গোয়েন্দা শাখার তথ্যের ভিত্তিতে পিএমখালীর ধাওনখালি গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে হুমায়ুন কবির নামে একজন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে তার শয়নকক্ষের খাটের তোষকের নিচ থেকে ২ রাউন্ড গুলি ও ১টি বিদেশী পিস্তল সহ  আটক করা হয়। অস্ত্রের উৎস সম্পর্কে  জিজ্ঞাসাবাদে হুমায়ুন জানায় এই অস্ত্রগুলো সে কলাতলীর রাজু নামক এক ব্যক্তির নিকট থেকে সংগ্রহ করে থাকে। এর ভিত্তিতে কাজী জাফর সাদিক রাজুর মালিকানাধীন কলাতলী-মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে অবস্থিত মেরিন ইকো রিসোর্টে অভিযান পরিচালনা করে রাজুর বিশ্রাম কক্ষ থেকে এটি থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল ও ৫ রাউন্ড গুলি রাজুকে আটক করা হয়।


র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রাজু জানিয়েছে উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো মূলত খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বাংলাদেশে চোরাচালান করা হয়। খাগড়াছড়ির স্থানীয় একটি চক্র এই অবৈধ অস্ত্র  চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত। তারা তাদের বিভিন্ন এজেন্ট এর মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে এই অস্ত্রগুলো সরবরাহ করে থাকে। এই চক্রটি ৮০-৯০ হাজার টাকা মূল্যে একটি বিদেশি পিস্তল তাদের এজেন্টের নিকট বিক্রি করে। পরবর্তীতে অস্ত্রগুলো বিভিন্ন হাত বদলে প্রান্তিক পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের নিকট দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা মূল্যে বিক্রয় করা হয়। রাজু ফটিকছড়ির জাবেদ নামক এক ব্যক্তির মাধ্যমে এই অস্ত্রগুলো খাগড়াছড়ি থেকে সংগ্রহ করে থাকে এবং হুমায়ুন সহ আরো কিছু ব্যক্তির মাধ্যমে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প, রামুর গর্জনিয়ার চোরাকারবারি চক্র ও মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের নিকট দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা মূল্যে এ সকল বিদেশি অস্ত্র দীর্ঘদিন ধরে বিক্রয় করে আসছিল।


আরও পড়ুন: বিকল্প পথে সেন্টমার্টিন নৌ যোগাযোগ স্বাভাবিক হচ্ছে


তিনি বলেন, রাজু ও হুমায়ুন আরো জানায় ২০২০ সালে মাদক মামলার গ্রেপ্তার হয়ে রাজু, হুমায়ুন এবং ফটিকছড়ির জাবেদ একই কারাগারে ছিলেন। সেখানে তাদের পরিচয় এবং সখ্যতা গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে তারা জামিনে বের হয়ে এই অস্ত্র ব্যবসা শুরু করেন। রাজু এবং হুমায়ুনের তথ্যে যে সকল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নাম উঠে এসেছে তাদের ধরে অভিযান চলছে। এবং এব্যাপারে মামলা করে আটকদের কক্সবাজার সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।


জেবি/এজে