টোল-ট্যাক্সের প্রকাশ্য ডাক নেই, গোপনে চলে আদায়
রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে বছরে টোল-ট্যাক্সের ৫ কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮:২৩ অপরাহ্ন, ২৬শে জুন ২০২৪
কক্সবাজার রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদে টোল-ট্যাক্স আদায়ে প্রকাশ্য ডাক না হওয়ায় কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। পরিষদের সদস্যরা অভ্যন্তরীণ রেজুলেশন করে টোল-ট্যাক্স আদায় করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। যার ফলে সরকার প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। নিয়মবহির্ভূত অনেকটা নাম মাত্র অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা করে প্রতি বছর আনুমানিক পাঁচ কোটির অধিক টাকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ভাগবাটোয়ারা করে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদে প্রকাশ্য ডাকের মাধ্যমে টোল-ট্যাক্স আদায় প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও কচ্ছপিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদে তা সম্পূর্ন ব্যতিক্রম। এনিয়ে রামুর সচেতন মহল ও ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
জানা যায়, সীমান্ত দিয়ে রামুর কচ্ছপিয়ায় অবাধে ঢুকছে গরু-মহিষ, সুপারী, সিগারেট সহ বিবিধ বার্মিজ পন্য। সেই সুবাদে কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন বর্তমান সময়ে একটি বানিজ্যিক জোনে পরিনত হয়েছে। এ সুযোগে আইনের মারপ্যাঁচকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে টোল ট্যাক্সের নামে অনৈতিকভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ ইসমাঈল নোমান ও মেম্বারবৃন্দ। সরেজমিনে পরিদর্শনে জানা যায়, কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে কচ্ছপিয়ার বড় জাংছড়ি আবুল কাছিমের দোকান সংলগ্ন, ফাক্রিরকাটা মোরাকাছা মনজুরে দোকান সংলগ্ন ও গর্জনিয়া বাজার সিএনজি স্টেশন এই তিন স্থানে গেইট বসিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের রশিদের মাধ্যমে গরু-ছাগল সহ বিবিধপণ্য থেকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: রাখাইনে পরিস্থিতি থমথমে, সীমান্তজুড়ে গোলা-গুলির আতঙ্ক
প্রতি গরু থেকে ৩ শত, ছাগল ২ শত সহ বিবিধ কৃষিপণ্য থেকে ব্যাপকহারে টোল-ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে। তথ্যানুযায়ী প্রতি সপ্তাহে শুধুমাত্র গরুর চালান থেকেই অন্ত্যত ১০ লাখের অধিক টোল-ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও বার্মিজ সুপারি ও উৎপাদিত কৃষিপন্য থেকেও কয়েক লক্ষ টাকা টোল আদায় করা হয়। হিসেব অনুযায়ী প্রতি বছরে ৬ কোটির অধিক টোল-ট্যাক্স আদায় করছে কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। যার পুরোটা যাচ্ছে ব্যক্তিগত কোষাগারে। অথচ সরকারীভাবে প্রকাশ্যে ডাক দেয়া হলে বিশাল অংকের রাজস্ব সরকারী কোষাগারে জমা হত বলে দাবী করছেন স্থানীরা। এসমস্ত নিয়মবহির্ভূত অনিয়ম-অসঙ্গতির জন্য প্রশাসনের নিরবতাকে দায়ী করছে সচেতন মহল। এদিকে কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদে প্রকাশ্যে টোল-ট্যাক্স এর ডাক আহবান করা হলে এই অর্থবছরের জন্য ১কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ডাক নির্ধারণ হয়। এদিকে কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদেও যদি একইভাবে টোল-ট্যাক্স এর প্রকাশ্য ডাক আহবান করা হয় তাহলে উক্ত ডাক কয়েক কোটিতে ঠেকবে বলে আশা করেন স্থানীয় সচেতন মহল।
টোল-ট্যাক্সের নামে নিয়মবহির্ভূত পরিষদের এ অর্থ আদায়কে সম্পূর্ণ অবৈধ চাঁদাবাজি হিসেবে উল্লেখ করেন রামু উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুল মালেক সিকদার। তিনি জানান, অর্থলোভী কিছু জনপ্রতিনিধিদের এ সমস্ত অনৈতিক কর্মকান্ড সরকারের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুন্ন করবে।
কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ ইসমাঈল নোমান জানান, পূর্বে পরিষদের মিটিংয়ে এজেন্ডার মাধমে সকল সদস্য-সদস্যাদের রেজুলেশনের ভিত্তিতে টোল-ট্যাক্স আদায়ের সিদ্ধান্ত গৃহিত হত। এলাকার উন্নয়নের খাতিরে তিনিও নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের মত তার পরিষদেরও প্রকাশ্যে টোল-ট্যাক্স এর ডাক আহবান করতে চান বলে জানান।
আরও পড়ুন: কারাগারে পরিচয়, সিন্ডিকেটে অস্ত্র চোরাচালান করে চক্রটি
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, সার্বিক বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থাগ্রহন করা হবে। এদিকে কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদে সরকারীভাবে টোল-ট্যাক্স এর প্রকাশ্য ডাক আহবানের দাবী জানিয়ে রামু উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টিআকর্ষণ করছেন স্থানীয় জনসাধারন।
এমএল/