গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে : মির্জা ফখরুল


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে : মির্জা ফখরুল

সাইফুর তালুকদার, সিলেট: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম উচ্চারণ করা হয়নি, তাজ উদ্দিনের কথা উচ্চারণ করা হয়নি। এমন কি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীকে আড়ালে রেখেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধ এদেশের আপামর জনাতা করেছে; একজন ব্যক্তি বা একক কোনো দল নয়।আমাদের বীর সৈনিকরা যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন ৫০ বছর পরও সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। তাই সকলকে ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মত ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।

শনিবার ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিলেট দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। '৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎক্ষালীন সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে সিলেট অঞ্চলকে মুক্ত করার দিনটি জাতীয়, দলীয়, দেশাত্মবোধক ও গণসংগীত পরিবেশন এবং সমাবেশের মাধ্যমে পালনের উদ্যোগ নেয় বিএনপি।

তিনি বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দিচ্ছে না। উন্নয়ন ও মেগা প্রকল্পের কথা বললেও, দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে, অর্থনীতি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। দেশে বিচার ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। করোনায় মারা গেছে বহু লোক, টিকা নিয়ে দূর্নীতি হয়েছে। কিছু ফ্লাই ওভার হচ্ছে, কিন্তু রাস্তাঘাট খারাপ হয়েছে। বিশ্বে র‍্যাবের সদস্যদের আমেরিকার নিষিদ্ধ করেছে, দেশে মুক্ত নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরেও আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য বাসযোগ্য একটি ভূমি রেখে যেতে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের স্বপ্ন ছিলো একটি গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। এ দেশে দারিদ্র্য মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। গুটিকয়েক মানুষ সরকারের ছত্রছায়ায় কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। দেশে আজ গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে। যার প্রমাণস্বরূপ- জনগণের ভোটে বার বার নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রীকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসিয়ে কারাবাস করিয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন মুমূর্ষু অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশেও যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীন ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। প্রয়োজনে একাত্তর সালে যেভাবে দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবব্ধ হয়ে পাক হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশবাসী, ঠিক সেইভাই যুদ্ধ করে বর্তমান অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি- সেই দিন আর বেশি দূরে নয়।

বিএনপি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন জাতীয় কমিটি, সিলেট বিভাগের আহবায়ক ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- বিএনপি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম।

এদিকে, সিলেট মুক্ত দিবসে বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে নিজেদের মধ্যে হট্টগোলে জড়িয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সমাবেশস্থলে প্রাঙ্গণে করেছেন ভাঙচুর। এসময় সমাবেশস্থলের সামন থেকে এক পক্ষ অন্যপক্ষকে চেয়ার নিয়ে ধাওয়া করলে উত্তেজনা রাস্তা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এসময় সুরমা মার্কেট ও তালতলা এলাকারা ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দোকানপাট লাগিয়ে দেন। অপরপক্ষও চেয়ার নিয়ে প্রথম ধাওয়াকারীদের দিকে ধেয়ে যায়। পরে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আধাঘণ্টার প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।

নগরীর রেজিস্টারি মাঠে আয়োজিত সমাবেশস্থলে দলটির দুই পক্ষের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। সিলেট মুক্ত দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে গঠিত সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটি এই সমাবেশের আয়োজন করেছে।

দুপুর ২টা ৪০ মিনিটের দিকে সভা শুরুর আগে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অনুসারীর সাথে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের অনুসারীরা তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এরপরই শুরু হয় হট্টগোল। একপক্ষ অন্যপক্ষের দিকে সমাবেশ স্থলে থাকা চেয়ার ছুড়তে থাকে। প্রায় ১০ মিনিট ধরে চলা বিশৃঙ্খলার পর শান্ত হন নেতা-কর্মীরা। এ সময় সমাবেশ মঞ্চে বসা ছিলেন বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় পর্যায়ের তিন নেতা।