পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর সাথে নিজ ছেলের বিয়ে দিলেন শিক্ষিকা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর সাথে নিজ ছেলের বিয়ে দিলেন শিক্ষিকা

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শামসুন্নাহারের বিরুদ্ধে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে নিজের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে এলাকা জুড়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। একজন শিক্ষিকার এহেন দায়িত্ব জ্ঞানহীন কাণ্ডে হতবাক হয়েছে সুশীল সমাজ। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকতাদের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।

স্থানীয়রা জানায়, গত ২০ মার্চ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের ছোটশলুয়া গ্রামের বিলপাড়ার দিনমুজুর অসোক আলীর মেয়ে শারমীন খাতুন (১১) বেগমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী একই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা শামসুন্নাহার তার ছেলে যদুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আব্দুর রহমানের বিয়ে দেন । প্রথম কয়েকদিন বিষয়টি গোপন থাকলেও নব্য বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে ঘটা করে শশুর বাড়ী ছোটশলুয়া গ্রামে বেড়াতে আসলে তা জানাজানি হয়ে যায়। এনিয়ে সচেতন মহলে নানা সমালোচনা।

খবর পেয়ে সরেজমিনে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বেগমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে হাতে মেহেদী রং নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে দেখা যায় বাল্য বিবাহের শিকার স্কুলছাত্রী শারমিন খাতুনকে। বিয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে অপকটে স্বীকারে বলে, ‘গত এক সপ্তাহ আগে ম্যাডামের ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। বর্তমানে সে (আমার স্বামী) আমাদের বাড়িতে আছে। আমি বাড়ীতে এসে স্কুলে ক্লাস করছি।’

একই ক্লাসে শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে তখন ক্লাস নিচ্ছিলেন অভিযুক্ত শিক্ষিকা শামসুনাহার। পঞ্চম শ্রেণির স্কুল ছাত্রীর সঙ্গে নিজের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলের বাল্য বিবাহ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার নিজ বাড়ীর অবস্থা খুব একটা ভাল না। বিশেষ করে তার মায়ের খুব শরীর খারাপ। মায়ের ইচ্ছা নাতি ছেলের বউ দেখার। মুলত মায়ের ইচ্ছা পূরণ করার জন্যই তিনি নিজের ছেলের সঙ্গে তারই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ে দিয়েছেন। তবে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়নি। বেগমপুর দাখিল মাদরাসার শিক্ষক ও বেগমপুর ইউনিয়নের কাজি মফিজুল ইসলাম ধর্মীয়রীতি মেনে বিয়ে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বেগমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিয়ের বিষয়টি জানেন না বলে প্রতিবেদককে জানান। এসময় তিনি আরও বলেন, ‘একজন স্কুল শিক্ষিকার এধরনের অপরাধ কাম্য নয়।’ 

বিয়ের কাজি মফিজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এ ধরনের কোন বিয়ে তিনি পড়াননি। তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’

এই বাল্য বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বেগমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘বেগমপুর ইউনিয়নকে বাল্য বিবাহ মুক্ত করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ বদ্ধপরিকর। একজন স্কুল শিক্ষিকা কিভাবে এই ধরনের কাজ করতে পারে আমার বুঝে আসে না।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান জনবাণীকে বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে হবে। আর এই বিষয়টি আমাদের দেখার দায়িত্ব না।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামীম ভুইয়া জনবাণীকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘটনার সত্যতা পেলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।

এসএ/