জাবিতে মধ্যে রাতে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা, আহত দুই


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:০৭ অপরাহ্ন, ১৫ই জুলাই ২০২৪


জাবিতে মধ্যে রাতে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা, আহত দুই
ছবি: প্রতিনিধি

'তুমি কে আমি কে?' রাজাকার' 'রাজাকার', স্লোগানে মধ্যরাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ এসময় স্লোগান দেয়ার কারণে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় জাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। এতে আহত হয়েছে দুই শিক্ষার্থী, একজনকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


রবিবার (১৪ জুলাই) রাত সাড়ে ১১ টায় 'আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে' এমন খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা একটি প্রতিবাদী মিছিল নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনে আসেন।


এসময় শিক্ষার্থীদের তুমি কে, আমি কে? রাজাকার রাজাকার; মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র কারো বাপের না, চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’,  ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারো বাপের না’ আমার ভাই আটক কেন? জবাব চাই, জবাব চাই ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা গেছে। 


আরও পড়ুন: ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’


রবীন্দ্রনাথ হলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া "তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার" স্লোগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের হলেও এমন স্লোগান দেয়ার পরিকল্পনা করেন ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা৷ এমন সময় মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের মো. সাঈফ খান ৪৯ ব্যাচের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে একটি ম্যাসেজ দেন। নিচ তলার ১২৪ নং কক্ষ থেকে স্লোগান পুরো হলে ছড়িয়ে পড়ে৷


শিক্ষার্থীরা সমস্বরে স্লোগান দিতে শুরু করলে পলিটিকাল ব্লক থেকে (২০১৮-১৯ সেশন) ৪৮ ব্যাচের সিনিয়ররা এসে তাদের সবাইকে হলের ডাইনিংয়ে আসতে বলে। ১২৪ নং কক্ষ থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের কাউসার আলম আরমান, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আশিক ও ইংরেজি বিভাগের জাহিদকে আসতে বলা হয়। এসময় স্লোগান দেয়ার কারণে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ডাইনিংয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও মোবাইল ফোন চেক করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনে জড়ো হয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।


এসময় ডাইনিং হলে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডাইনিং হলে ডেকে আনার পর শিক্ষার্থীদের 'রাজাকার' স্লোগান দেয়ার কারণ জিজ্ঞেস করা হয়। এসময় 'শিবির' সন্দেহে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন নিয়ে ম্যাসেঞ্জারের ম্যাসেজ চেক করা হয়৷ এসময় দীর্ঘসময় পর্যন্ত ডাইনিং হল থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পান হলের শিক্ষার্থীরা৷ পরে সন্দেহজনক কিছু না পেয়ে তাদের স্লোগানের জন্য ক্ষমা চাইতে বলা হয়৷ ছাত্রলীগের নেতারা এসময় হল প্রভোস্ট অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদারকে সেখানে নিয়ে আসেন৷ হল প্রভোস্টের উপস্থিতিতে ৪৯ ব্যাচের  শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে ক্ষমা চান। এরপর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।


আরও পড়ুন: কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আজই লিভ টু আপিল



এসময় হলের বাইরে অবস্থানরত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, রাত ১১টায় আমরা খবর পাই আমাদের কয়েকজন আন্দোলনকারী সহযোদ্ধাকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা খবর পেয়ে সহকর্মীদের উদ্ধার করতে এসেছি। কোটা আন্দোলন সারাদেশের শিক্ষার্থীদের একটি যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। এ আন্দোলনে অংশ নিয়ে কেউ যদি নির্যাতনের শিকার হয় তা শক্ত হাতে মোকাবেলা করা হবে৷ হল প্রভোস্টের উপস্থিতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় জাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আহসান লাবিব ও সোহাগী সামিয়া নামে দুই শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয় এবং তাদের সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।


জাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, আমরা বলেছিলাম নির্যাতন কান্ডে যারা জড়িত সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদেরকে শনাক্ত করতে। কিন্তু হল প্রভোস্ট ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সাথে মিটিং করেন। এর আগেও ধর্ষণকান্ডে জড়িতদের নিরাপত্তা দিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করে দিয়েছিলেন এই নাজমুল হোসেন তালুকদার। ভিসি ১৭ এপ্রিল আল্টিমেটাম দিলেও তার কথা তিনি রাখতে পারেন নি। প্রতিনিয়ত মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাই এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে চললেও প্রশানের নেই কোনো কার্যকর হস্তক্ষেপ। আজকের এই ঘটনায় দায় প্রশাসন কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।


আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল প্রভোস্ট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে নির্যাতন করতে সহোযোগিতা করেন। তাই আজ সকাল সাড়ে ১১টায় প্রভোস্টের পদত্যাগ চেয়ে প্রতিবাদ মিছিল করবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।


এসব ব্যাপারে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, হলের সামনে  শিক্ষার্থীদের মিছিলের কথা শুনে আমি কিছুক্ষণ আগে হলে এসেছি৷ তবে ঘটনা বিস্তারিত বুঝতে পারিনি। সম্ভবত কোনো স্লোগান দেয়াকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে৷ আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি।


জেবি/এসবি