ভারতের বর্ডার খুলে দেওয়ার গুজবে হিন্দুদের ভিড়
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:২১ অপরাহ্ন, ১০ই আগস্ট ২০২৪
সীমান্তের গেট খুলে দিয়েছে এমন গুজবে হাজার হাজার মানুষের দিনভর জট লালমনিরহাটের গোতামারী সীমান্তের শুন্যরেখা পয়েন্টে।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) দিনভর লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী সীমান্তের ৯০৯ নং পিলার এলাকায় জমায়েত হয় সংখ্যালঘুরা।
জানা গেছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদফা দাবিতে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও দেশ ত্যাগের পরেই গা ঢাকা দেয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। সারাদেশের মত লালমনিরহাটেও অফিস ও দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে বাদ পড়েনি সংখ্যালঘু সংম্প্রদায়ের আওয়ামীলীগ নেতাদের বাড়ি। তবে আওয়ামীলীগে সম্পৃক্ত নয় এমন সংখ্যালঘু পরিবারের উপর হামলার খবর পাওয়া যায়নি। যারা হামলার শিকার হয়েছেন তারা রাজনৈতিক ভাবে আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত ছিলেন।
আরও পড়ুন: নীলফামারীতে ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন
আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলার ঘটনায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে সাধারন সংখ্যালঘুদের মাঝে। আতংক বা গুজবে কান না দিতে বিএনপি জামায়াত এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা পাড়ায় মহল্লায় পথসভা, শো ডাউন ও পাহারা দিচ্ছেন।
এ দিকে শুক্রবার সকালে গোতামারী সীমান্তের ৯০৯ নং পিলার এলাকায় ভারতীয় সীমান্ত খুলে দেয়া হয়েছে সংখ্যালঘুদের জন্য। এমন গুজবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার সংখ্যালঘু ওই সীমান্তের শুন্যরেখায় জমায়েত হন। সেখানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও ভারতীয় পুলিশসহ ভারতের গনমাধ্যমকর্মীরা। তবে সীমান্তে প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিএসএফ সদস্যরা। কেউ পাড়ি জমাতে পাড়েনি বলে জানা গেছে।
তবে সীমান্তে জমা হওয়া সংখ্যালঘুরা কোন ধরনের ব্যাগ বা আসবাবপত্র কিংবা পরিবারের অন্যসদস্যদের সাথে নেননি। তারা ভিড় জমালে ও ভারতে যেতে তারা সমবেত হননি বলেও জানান অনেকেই।
সংখ্যালঘুদের একটি দায়িত্বশীল সুত্র দাবি করেছে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা ও ভারতীয় নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুদের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। তাদের সমাবেশ না হলেও ভারতীয় বিভিন্ন গনমাধ্যম এটাকে দেশ ছাড়তে সংখ্যালঘুরা সীমান্তে ভীড় জমিয়েছেন।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে মার্চ ফর জাস্টিসে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি, পুলিশের বাধা
ভারতীয় গণমাধ্যমের এমন খবরকে গুজব বলে দাবি করেছেন ওই সীমান্তের সংখ্যালঘু পরিবারগুলো। ওই সীমান্তের বাসিন্দা বিউটি রানী বলেন, আমাদের গ্রামের কোন ধরনের হামলা হয়নি। শুনেছি কোথাও কোথাও হয়েছে। তবে যাদের উপর হামলা হয়েছে তারা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ছিলেন। সংখ্যালঘু হিসেবে নয়। আওয়ামীলীগ করায় তাদের উপর হামলা হয়েছে। অনেক মুসলমান আওয়ামীলীগ নেতার বাড়িতেও হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা।
নীলফামারীর ডিমলার বাসিন্দা সবিতা রানী বলেন, শুনেছি বর্ডার খুলে দেয়া হয়েছে তাই এসেছি। যদি সুযোগ পাই তবে চলে যাব। আমার বাড়িতে হামলা না হলে প্রতিবেশি আওয়ামীলীগ নেতার বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। এতে ভয়ে আমরা অনেক আতংকিত।
যোগেশ চন্দ্র নামে একজন বলেন, শুনেছি বর্ডার খুলে দিয়েছে তাই দেখতে এসেছি। এখানে বেশির ভাগ মানুষ দেখতে এসেছে। ভারত গেলে তো নুন্যতম এক ব্যাগ বা বস্তা সাথে থাকত কিংবা পরিবারের অন্যরাও থাকত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংখ্যালঘু সংম্প্রদায়ের নেতারা বলেন, আমরা ভারতে পাড়ি জমাতে চাই না। নিজের পৈত্রিক ভিটা কেন ছাড়ব। আমরা এসেছি, যাতে সকলে মিলে দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করা যায়। এজন্য সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সহায়তা চাই। বিএনপি জামায়াতের নেতারা আমাদের আশ্বাস্থ করেছেন নিরাপত্তা দেয়ার। তাই আমরা ফিরে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধন
বিএসএফের বরাত দিয়ে এসব নেতারা আরও বলেন, বিএসএফ বলেছে ভারতে আসতে হলে সপরিবারে এবং আসবাবপত্র নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সীমান্তের শুন্যরেখায় নুন্যতম ৭২ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।
খবর পেয়ে ওই সীমান্তে চলে আসেন বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য লালমনিরহাট ১ আসনের এমপি প্রার্থী ব্যারিষ্টার হাসান রাজীব প্রধান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটি মুলত একটি গুজব। ভারতকে ক্ষিপ্ত করে পাশে পেতে আওয়ামীলীগ এমনটা করছে। সীমান্তের শুন্যরেখায় যারা অবস্থান করছেন তারা কেউ একটি ব্যাগও সাথে নেননি। আমরা তাদেরকে শান্ত থাকতে বলেছি, নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে তারা সীমান্ত থেকে ফিরে এসেছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ বলেন, দিনভর আমি নিজেও এ সীমান্তে রয়েছি। যারা এসেছেন তাদের কোন নেতা নেই, তারা কেন এসেছেন শুন্যরেখায় সেটাও তারা জানেন না। আমি স্থানীয় নেতাদের সাথে কথা বলেছি তারাও কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। এরা সীমান্ত পাড়ি দিলে নিরাপত্তার জন্য যা থাকা দরকার সেটুকুও নেই তাদের সাথে। সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কেউ পাড়ি দিতে পারেনি বা পারবেও না। আমরা আগামী কাল শনিবার সংখ্যালঘু নেতাদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছি। আলোচনার পরে জানা যাবে এটি গুজব কি না?
এমএল/