বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে ছেলেকে হত্যা করে বাবা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে ছেলেকে হত্যা করে বাবা

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগে নিজের আড়াই মাসের শিশু ইকবালকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বাবা ইখলাদের বিরুদ্ধে। বুধবার (৩০ মার্চ) সকালে শিশুটি অসুস্থ হলে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুরে শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে রেফার্ড করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে রাজশাহীতে নেয়ার পথে শিশু ইকবালের মৃত্যু হয়। পুলিশ এঘটনার পর অভিযুক্ত বাবা ইখলাসকে থানা হেফাজতে নিয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ।

সপরিবার নিয়ে ইখলাম চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মাঝেরপাড়ার কামাল উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়ায় থাকে। ইখলাম আলমডাঙ্গা উপজেলার আঠারোখাদা গ্রামের ইখলাছ উদ্দিনের ছেলে।

বাড়িতে বসবাসকারী ভাড়াটিয়ারা জানায়, দুবছর যাবত আমাদের সাথে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে আসছে ইখলাম। ইখলাস তার শিশু সন্তানকে কখনোই কোলে নিতো না। সে দিনে বাড়িতে থাকলেও রাত্রে কখনোই থাকতো না। গত ৫ দিন যাবত যে রাত্রী যাপন করে আসছিল। বুধবার সকালে মাঝেরপাড়ায় ভাড়াবাড়িতে শিশুপুত্র ইকবালের পায়ে বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে পিতা ইখলাছ উদ্দিন। পরে তাকে সদর হাসপাতালে নিলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসক। রাজশাহী নেয়ার পথে শিশু ইকবালের মৃত্যু হয়। পরে মরদেহ নেয়া হয় শিশুর নানাবাড়ি আলমডাঙ্গা উপজেলার সোনাতনপুর গ্রামে।

সেখান থেকে শিশু ইকবালের মরদেহ উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। সন্ধ্যা ৭টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের একাডেমি মোড় থেকে অভিযুক্ত পিতা ইখলাছ উদ্দিনকে আটক করা হয়। তবে ঘটনাস্থল চুয়াডাঙ্গা সদরে হওয়ায় পরে আটককৃত ইখলাছকে সদর থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুটির মা মিতা খাতুন বাদি হয়ে স্বামী ইখলাসকে একমাত্র আসামী করে মধ্যরাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। এরপর পুলিশ ইখলাসকে গ্রেফতার দেখায়।

সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদী ইউনিয়নের আঠারোখাদা গ্রামের ইখলাছ উদ্দিন চারবছর আগে জেহালা ইউনিয়নের সোনাতনপুরের আব্দুল মোমেনের মেয়ে স্বামী পরিত্যাক্তা মিতালী খাতুন মিতাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

ইখলাছের প্রথম স্ত্রী আঁখি খাতুন নিঃসন্তান, বাড়িতে থাকেন। বিয়ের পর থেকে দ্বিতীয় স্ত্রী মিতাকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরে থাকেন ইখলাছ। গত কয়েক মাস যাবৎ ইখলাছ উদ্দিন তার দ্বিতীয় স্ত্রী মিতাকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মাঝেরপাড়ার পলাশ উদ্দিনের বাড়িতে বাসাভাড়া থাকেন। আড়াইমাস আগে তাদের কোলজুড়ে আসে পুত্রসন্তান। নাম রাখা হয় ইকবাল। গতকাল বুধবার সকাল ৮টার দিকে মাঝেরপাড়ায় ওই বাড়িতে শিশু ইকবাল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শিশুটিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসক। সেখানে নেয়ার পথে মারা যায় শিশু ইকবাল। 

শিশু ইকবালের মা মিতালী খাতুন মিতা অভিযোগ করে বলেন, আমার অন্য এক জায়গায় বিয়ে হয়েছিলো। পারিবারিক কলহের কারণে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। আমার আগের পক্ষের দুই ছেলে হাসান ও হোসাইন আমার পিতার কাছে থাকে। চারবছর আগে প্রথম স্ত্রীর কোনো সন্তান না হওয়ায় ইখলাছ আমাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে সে আমাকে সন্দেহ করতে থাকে। পরে আমাদের কোলজুড়ে আসে এক ছেলে সন্তান। ওই ছেলে তার নয় বলে জানায় ইখলাছ।

মিতা আরও বলেন, বুধবার সকালে বাড়ির কাজ করছিলাম। সেসময় ইখলাছ ছেলেকে কোলে নেয়। হঠাৎ সুস্থ ছেলে কেঁদে ওঠে। পরে গিয়ে দেখি আমার ছেলের বাম পা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এর আগেও সিরাপের মধ্যে কোন বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দেয়েছিল। পরে সেই ওষুধ খাওয়ানোর পর আমার ছেলে বমি শুরু করে। এরপর কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। 

ইখলাছের নিকট জানতে চাইলে সে টিকা দেয়ার স্থান থেকে রক্ত বের হচ্ছে বলে জানায়। পরে ডাক্তারের কাছে নিলে ডাক্তার জানায়, টিকা দেয়ার স্থান থেকে কোনো রক্ত বের হয়নি। ছেলের বাম পায়ের অন্য স্থানে একটি ইনজেকশন পুশ করার চিহ্ন রয়েছে। সেখানে ফুলে গেছে। আমার ছেলেকে বাম পাশে বিষ মিশ্রিত ইনজেকশন পুশ করে হত্যা করা হয়েছে বলে মিতা অভিযোগ করেন।

মিতা বলেন, ১৫ দিন আগে আমার ছেলে ইকবাল অসুস্থ হলে তাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে অমিডন নামের একটি সিরাপ কিনে চারদিন খাওয়ায়। ৫ দিনের দিন সেই সিরাপ থেকে বিষের গন্ধ পাই। সন্দেহ হলে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করি। কে বা কারা আমার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওষুধে বিষ মিশিয়ে রেখেছিলো সে সময় বুঝতে পারিনি।

বাড়ি মালিকের সহধর্মিণী শিল্পী খাতুন ও প্রতিবেশি শরিফুলের স্ত্রী লতা খাতুন বলেন, সকালে শিশু ও শিশুর মায়ের কান্নায় ছুটে আসি। এসে দেখি শিশুটি খুব কান্না করছে এবং শিশুটির পা দিয়ে রক্ত ঝরছে। শিশুটির পায়ের টিকা দেয়ার স্থানের পাশে একটি ফুটা। গত ৪ দিন আগে শিশু ইকবালকে টিকা দেয়া হয়। টিকা স্থান শুকিয়ে গেছে। পাশে আরও একটি ইনজেকশনের ফুটা দেখে সন্দেহ হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন,  বুধবার সকালে শিশু ইকবালকে আমার কাছে নিয়ে আসা হয়। শিশুটির খিচুনি হচ্ছিলো। শিশুটির মা অভিযোগ করেছিল কেউ ওষুধের মধ্যে কেউ বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল। সেটা খেয়ে ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিশুটির শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়। তবে, শিশুটির পায়ে কোনো ইনজেকশন দেয়া হয়েছে তা ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না। বেঁচে থাকলে রক্ত পরীক্ষা করে বলা যেতো। 

তার আগেই তো শিশুটি মারা গেলো চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাইদ বলেন, ইকলাছকে আলমডাঙ্গা থানা থেকে চুয়াডাঙ্গা থানায় নেয়া হয়েছে। নিহত শিশুর মরদেহের সুরতহাল শেষে আজ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে। রাতেই এ ঘটনায় মামলা একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে বোঝা যাবে এটা হত্যা কিনা।  

এসএ/