সৈকতে নারীকে হেনস্তাকারী যুবক ডিবি হেফাজতে
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:৩১ অপরাহ্ন, ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২৪
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দুই নারীকে ‘মারধর ও হয়রানির’ তিনটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে; এতে ঘটনাটি বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। এতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিও ফুটেজটিতে দেখা মেলা যুবকটিকে আটক করেছে।
আর যুবকটিকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়ক’ বলে দাবি করেছেন ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখানো অনেকে। তারা বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ওই নারীদের নিপীড়ন চালানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কক্সবাজারে শুরু থেকে সক্রিয় থাকা স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, যুবকটি ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নয়। আন্দোলনের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা মত ও পথের ছাত্র-জনতার স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। যুবকটিরও আন্দোলনে অংশগ্রহণ থাকতে পারে।
শুক্রবার রাতে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কস্থ ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে অভিযুক্ত যুবকটিকে আটক করা হয় বলে জানান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ( ডিবি ) পরিদর্শক জাবেদ মাহমুদ।
আটক মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম (২৩) একই এলাকার বাসিন্দা। তিনি পরিবারের সাথে ওই এলাকায় থাকেন। তাদের আদি বাড়ী চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার চুনতি এলাকায়।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে নিখোঁজ পর্যটকের ২০ ঘন্টার পর মৃতদেহ উদ্ধার
তিনি ভূক্তভোগী নারীদের বিরুদ্ধে সৈকতের উন্মুক্ত পরিবেশে বেহায়াপনা আচরণের জন্য এমন অবস্থানের কথা ভিডিও ফুটেজে বলতে শোনা গেছে। তার ফেইসবুক আইডিতে এর আগে বুধবার ( ১১ সেপ্টেম্বর ) শহরের লালদিঘীর পাড় এলাকায় ভাসমান যৌন কর্মিদের লাঠি নিয়ে তাড়িয়ে মারধর করার একটি ফুটেজ আপলোড করেছেন।
ডিবির পরিদর্শক জাবেদ মাহমুদ বলেন, সৈকতে নারী পর্যটককে মারধর ও নির্যাতনের কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। পরে পুলিশ ফুটেজগুলোতে দেখা মেলা যুবকটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন। শুক্রবার রাতে শহরের ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকায় সদর থানা ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নিয়েছে।
অভিযুক্ত যুবক এখন সদর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
শুক্রবার বেলা ১২ টার দিকে আযম খান নামের এক ব্যক্তি নিজের ফেইসবুক আইডিতে (https://www.facebook.com/share/p/G4cbmw8zLBuz9PcL/? ) তিনটি ভিডিও ফুটেজ আপলোড করে পোস্ট দিয়েছেন, “কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে শরীয়া পুলিশিং চালাচ্ছে স্থানীয় সমন্বয়কেরা। কোন নারীকে একা পেলে, কারো পোষাক পছন্দ না হলে লাঠিসোটা নিয়ে তাদের আক্রমণ করছে। কক্সবাজার এখন আফগানিস্তান। “
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, “ রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কিটকটে একা বসে থাকা এক তরুণীকে লাঠি হাতে নিয়ে ঘিরে ধরেছেন চার যুবক। তারা প্রথমে ওই তরুণী পরিচয় এবং কি কাজে এতো রাতে একা অবস্থান করছেন জানতে চান। পরে তরুণীটি ঘুরতে আসার কথা জানালে তারা সন্তুষ্ট হননি।
এক পর্যায়ে যুবকরা সৈকতের সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ তুলে ওই তরুণীকে তাড়িয়ে যেতে বাধ্য করেন। “
অপর একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, “ আরেক তরুণীকে ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু সংখ্যক কৌতুহলী মানুষ। এসব মানুষের মাঝে লাঠি হাতে নিয়ে অবস্থান করছেন কয়েকজন যুবক।
এদের মধ্যে যুবককে লাঠি দেখিয়ে ওই তরুণীকে নির্দেশ দিচ্ছেন কান ধরে উঠা-বসা করতে। পরে ভয়ার্ত ওই তরুণী উঠ-বস করতে থাকলে ঘিরে লোকজনকে অশ্লীল ভাষা মন্তব্য করতে শোনা গেছে। “
আরেকটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, “ সৈকতের ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্সে কয়েকজন পুলিশের পাশাপাশি কয়েকজন যুবকের সাথে ভূক্তভোগী এক তরুণীসহ আরও একজনকে। সাধারণ পোষাকে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ভূক্তভোগী তরুণী কান্নারত অবস্থায় অভিযোগ ও নিজের তথ্য দিচ্ছেন। এসময় নিজের নাম আরোহী বলে পরিচয় দেন। এক পর্যায়ে পুলিশ বক্সে প্রবেশ করেন আরেকটি ভিভিও ফুটেজে লাঠি হাতে আরেক তরুণীকে উঠ-বস করার নির্দেশদাতা যুবকটি।
এসময় পুলিশ কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে ওই যুবকটির প্রতি মোবাইল ফোন সেট কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলে তরুণীটিকে বলতে শোনা যায়, “ উনি আমার ফোন কেড়ে নিয়েছেন। দয়া করে ফোনটি ফেরত দিন। প্রয়োজনে মোবাইলে থাকা সবকিছু ডিলেট করে দেবো।”
এদিকে পুলিশের অভিযানে আটক মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব পর্যায়ের কেউ নন বলে দাবি করেছেন কক্সবাজারের স্থানীয় সমন্বয়কেরা।
তবে আন্দোলনের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা মত ও পথের ছাত্র-জনতার স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের তথ্য দিয়ে নেতৃত্ব পর্যায়ের স্থানীয় সমন্বয়ক শাহেদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, “ আটক যুবক জেলার সমন্বয়ক বা নেতৃত্ব পর্যায়ের কেউ নন। আন্দোলনে যেহেতু শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা শ্রেণী-পেশা, মত ও পথের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল; আটক যুবকেরও অংশগ্রহণ থাকতে পারে। তাই বলে তিনি সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না। “
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারি কেউ যদি স্ব-উদ্যোগে বা সাংগঠনিক প্রক্রিয়া ছাড়া কোন কর্মসূচী নিয়ে থাকে সেটার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দায়বদ্ধ নয় মন্তব্য করে স্থানীয় এ সমন্বয়ক বলেছেন, “ ব্যক্তির দায়ভার সংগঠন নেবে না। ব্যক্তির কর্ম-অপকর্ম ব্যক্তিকেই জবাবদীহি করতে হবে।”
জেবি/এসবি