স্বামীর পরকিয়ার প্রতিবাদ করায় গৃহবধূকে তিন মাস গৃহবন্দি রেখে নির্যাতন


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


স্বামীর পরকিয়ার প্রতিবাদ করায় গৃহবধূকে তিন মাস গৃহবন্দি রেখে নির্যাতন

গৃহবধূকে তিন মাস ধরে গৃহবন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। যৌতুক ও স্বামীর পরকিয়ার বিষয়ে প্রতিবাদ করার পর থেকে ওই গৃহবধূকে গৃহবন্দি করে নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। 

নওগাঁর পত্নীতলায় নজিপুর পৌরসভার হরিরামপুর পশ্চিমপাড়ায় আমিরা বেগম (২৮) নামে এক এক গৃহবধূর সাথে এই ঘটনা ঘটেছে। ওই গৃহবধূ ওই মহল্লার ব্রুনাই প্রবাসী ফারুক ইসলাম ওরফে ফেন্সির (৪২) স্ত্রী। 

প্রতিকার চেয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেওকোন ফল হচ্ছে না বলে ভুক্তভোগী আমিনা বেগমের মা লাইলি বেগম অভিযোগ করেছেন। তবে পুলিশের মন্তব্য আমরা কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। এদিকে দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে ওই গৃহবধূর দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে।

অভিযোগে জানা গেছে, প্রায় ৮ বছর আগে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের ভেড়ম সোনাদিঘী গ্রামের মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে ফারুক ইসলাম ফেন্সির সঙ্গে পত্নীতলা উপজেলার আকবরপুর ইউনিয়নের বনী গ্রামের লুৎফর রহমানের মেয়ে আমিনা বেগমের বিয়ে হয়। মেয়ের সুখের জন্য বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে নগদ ২ লাখ টাকাও দেয়া হয়েছিল। বিয়ের দুই বছর পর ফারুক তার স্ত্রী আমিনাকে বেড়ানো কথা বলে ব্রনাই নিয়ে যান। সেখানে প্রায় আট মাস ছিলেন আমিনা। এর মধ্যে আরও যৌতুক চেয়ে আমিনার ওপর বিভিন্ন নির্যাতন চালান স্বামী ফারুক। একপর্যায় তাকে ব্রুনাই থেকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এর কয়েক বছর পর ফারুক দেশে ফিরে এসে নওগাঁর নজিপুর পৌরসভার হরিরামপুর পশ্চিমপাড়ায় জমি কিনে সেখানে চারতলা ভবন নির্মাণ শুরু করেন। বাড়ি করতে গিয়ে ফারুক ফের মোটা অংকের যৌতুক দাবি করেন। এর মধ্যে তাদের ঘরে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তাদের মধ্যে ফারহানা ফিন্নির বয়স ৫ ও ফারিয়া আক্তার রাখি ২ বছরের। মেয়ের সংসারের সুখের কথা চিন্তা করে আমিনার মা লাইলী বেগম নিজরে সমস্ত জায়গা-জমি বিক্রি করে আরও ২৯ লাখ টাকা জামাতাকে প্রদান করেন। বাড়ি হয়ে যাওয়ার পর ওই বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে শাশুড়ি লাইলী বেগমসহ স্ত্রী-সন্তানকে রেখে আবার ব্রুনাই ফিরে যান ফারুক। এসময় এক ব্যক্তিকে ব্রুনাই নিয়ে যান ফারুক। এরপর থেকে ওই ব্যক্তির স্ত্রীর সাথে ফারুক পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এরপর থেকে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। গত তিন মাস বাসার মূল দরজা সবসময় তালাবদ্ধ রেখে সন্তানসহ আমিনাকে গৃহবন্ধি করে রাখা হয়েছে। বড় মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হলেও সে ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারছে না। এমনকি তাদের ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হচ্ছে না। গত সোমবার বড় মেয়ে ফারহানা ফিন্নি স্কুলে যাবে দরজা খুলে দেওয়ার কথা বললে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই বাসার ম্যানেজার বেলালসহ আরও কয়েকজন ওই গৃহবধূকে মারপিট করে। এতে তার নাক ফেটে রক্ত বের হয়। নির্যাতনের পর গৃহবধূকে চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। 

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ আমিনা বেগম বলেন, ‌‘এই বাড়িটা নিষ্কন্টক করতে এবং পরকীয়ার ব্যাপারে প্রতিবাদ করায় ব্রুনাই থেকে আমার স্বামী ফারুক তার পরবিারের লোকজন দিয়ে আমার উপর নির্যাতন চালিয়েছে। আমাকে বাসায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। কারো সাথে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। বাসার বাহিরে যাওয়ার চেষ্টা করলেই মারপিট করে আবার ঘরে নিয়ে বন্দি করা হয়েছে।’ 

স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান মধ্যস্থতায় সংসার চালানোর জন্য মাসে ১২ হাজার টাকা করে আমাকে দিবে বলে সিদ্ধান্ত দেওয়া হলেও গত তিন মাস ধরে আমাকে মাত্র ৫ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। সন্তানের লেখাপড়া–খরচসহ সংসার চালাবো কি দিয়ে। এর সুষ্ঠ বিচার চাই বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

পত্নীতলা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গাফ্ফার বলেন, ‘গত চার মাস আগে ওই পরিবারের বিষয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে ভরণপোষণ ও বাচ্চাদের পড়াশুনা বাবদ মাসে ১২ হাজার টাকা করে গৃহবধূ আমিনাকে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তারা মেনেও নিয়েছেন। এছাড়া যেহেতু ওই গৃহবধূর স্বামী বিদেশ থাকেন তিনি দেশে ফিরে এলে তারা তাদের মতো সিদ্ধান্ত নিবেন। গৃহবন্দি বা নির্যাতন বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি।’

এ বিষয়ে ওই গৃহবধূর স্বামী ফারুক ইসলাম ওরফে ফেন্সি ব্রুনাই থাকায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুল আলম শাহ বলেন, ‘ওই পরিবারের বিষয়ে থানায় লিখিত কোন অভিযোগ দেওয়া হয়নি। গৃহবধূকে নির্যাতন করা হয়েছে মর্মে তার মা (লাইলি বেগম) মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে দুজন পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তারা কোন প্রমাণ দিতে পারেননি। এরপরেও লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এসএ/