পর্দার খেলাপ হওয়ায় চাকরি ছাড়লেন জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা জান্নাত-ই হুর


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


পর্দার খেলাপ হওয়ায় চাকরি ছাড়লেন জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা জান্নাত-ই হুর

পর্দার খেলাপ হওয়ায় বিসিএস ছেড়ে গৃহিণী সন্তানদের সময় দিতে ও কর্মস্থলে পর্দার খেলাপ হওয়ায় চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ মৎস্য কর্মকর্তার স্ত্রী, গৌরীপুর উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা জান্নাত-ই হুর সেতু। সেই সাথে সরকার একজন সৎ, মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা হারালো।

ময়মনসিংহের গৌরীপুরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জান্নাত-ই-হুর সেতু। কর্মস্থলে পর্দার খেলাপ এবং চাকরির কারণে সন্তানদের ঠিকমতো সময় দিতে পারতেন না তিনি। এ জন্য সরকারি কর্ম কমিশনের চাকরি ছেড়ে পুরোদমে গৃহিণী হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘পর্দা করে চাকরি করা যাবে বিষয়টা এমন না। আমি যে চাকরিটা করি সেখানে শুধু মহিলারাই কাজ করেন না। সেখানে পুরুষরা চাকরি করেন। তাছাড়া, কৃষক ও মাঠে গিয়ে অনেক সময় কাজ করতে হয়। যে কারণে অনেক সময় পর্দার খেলাপ হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার সন্তানরা বাবা-মায়ের স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ওদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। নানান দিক চিন্তা করেই চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাছাড়া আমাদের জীবনে উচ্চাকাঙ্ক্ষা না থাকায় তেমন কোনো চাহিদা নেই। তেমন আর্থিক সংকটও নেই। তাই চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি।’

‘আমাদের বড় মেয়ের বয়স ৯ বছর। মেজ মেয়ে ৫ বছর ও ছোট মেয়ের বয়স ১৮ মাস। বড় মেয়ের জন্মের পর আমার শাশুড়ি মা লালন-পালন করতেন। এখন আরও দুজন বাচ্চা ছোট হওয়ায় বৃদ্ধা শাশুড়ি মা একা পেরে উঠেন না। এদিকে আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরি করি। পেশাগত কারণে খুব ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিস করতে হয়’, যোগ করেন সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জান্নাত-ই হুর।

কর্মজীবন থেকে বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে সহকর্মীদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নিয়েছেন এই নারী কর্মকর্তা।

শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার রাণীশিমুল গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে সেতু। ২০১১ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিশারিজ ম্যানেজমেন্টে এমএস সম্পন্ন করেন। একই বছর ২৯তম বিসিএস (মৎস্য) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। সে বছরই সহপাঠী সানোয়ার রাসেলের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামী রাসেল বর্তমানে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত।

সেতুর চাকরি ছাড়ার বিষয়ে স্বামী সানোয়ার রাসেল বলেন, ‘সব সন্তানই চায় বাবা-মা বেশি সময় ধরে তাদের কাছাকাছি থাকুক। বিশেষ করে মায়ের সান্নিধ্যে আনন্দে থাকে তারা। সারা দিন কাজ শেষে দুজন বাসায় ফিরে সন্তানদের দেখে মন খারাপ হতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রী আগে থেকেই বলত, সন্তানদের জন্য সে চাকরি ছেড়ে দিতে চায়। আমিও তাকে বাধা দিইনি। কারণ সে ঘরে ও বাইরে দ্বিগুণ পরিশ্রম করছে। এখন থেকে সংসারের যাবতীয় ব্যয় বহন করার দায়িত্ব আমার। স্বামী হিসেবে আমি আমার স্ত্রীর চিন্তা ও দর্শনকে সম্মান জানাই।’

এদিকে চাকুরির স্থলে নারীর  ধর্মীয় রীতি নীতি মানা, নারীর চাকুরি করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, পুরুষ শাসিত সমাজে নারীর অনুশাসন, চাকুরির দায়িত্ব কর্তব্যের বাইরে কোন কাজ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে কিনা, সংসার সামলানোর দায়িত্ব একা নারীর কিনা এসকল বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় হতে অনুসন্ধানের প্রয়োজন বলে দাবী নাগরিক সমাজের।

এসএ/