কালের সাক্ষী কুড়িগ্রামের জাহাজ ঘর


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


কালের সাক্ষী কুড়িগ্রামের জাহাজ ঘর

বৃটিশ শাসনামলে ১৯২৭ সালে কুড়িগ্রাম পুরাতন শহরে জাহাজ আকৃতির একটি ঘর প্রতিষ্ঠিত করেন তৎকালীন সময়ের বিশিষ্ট সমাজসেবী, ব্যবসায়ী, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব  যিনি কংগ্রেসের সহিত সরাসরি জড়িত ছিলেন, তিনি হচ্ছেন প্রসিদ্ধ আইনজীবি ঈশান চন্দ্র বকসির পুত্র সতীশ চন্দ্র বকসি(১৮৯২-১৯৪১ইং)। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ঘরটি জাহাজ ঘর নামে পরিচিতি লাভ করে যা আজও বিদ্যমান। বৃটিশ আমলের কংগ্রেস লিডারগন যথা যতীন চক্রবর্তী, কাজী ইমদাদুল হক, প্রতাব রায়, খান বাহাদুর খইমুদ্দিন চৌধুরী, হাফেজ মিয়া যাঁরা সতীশ বাবুর অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি খেলাধুলোর প্রতি এই বন্ধুমহলে ব্যপক আগ্রহ ছিল।

সে সময়ে তাঁরা সকলেই নিয়মিতভাবে জাহাজ ঘরে একত্রীত হতেন, বৈঠক করতেন, সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনাসহ ক্রীড়া ও সংস্কৃতিকে কিভাবে সমৃদ্ধ করা যায় সেজন্য জনগনের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। পরবর্তীতে সতীশ বকসি ওরফে ব্যাঙ বাবু বর্তমান সান্দার পাড়ায় ১০(দশ) বিঘা জমির উপর একটি ফুটবল মাঠ প্রতিষ্ঠা করেন। মাঠটি সে সময়ে সতীশ পার্ক নামে পরিচিত ছিল। তখন সতীশ পার্কে নিয়মিত ফুটবল খেলা হতো। "খাঁন বাহাদুর খৈমুদ্দিন শিল্ড"খেলা সে সময়ে খুব-ই প্রসিদ্ধ ছিল। কলকাতা, কোচবিহার, রংপুর থেকে টিম আসতো ফুটবল খেলতে। কুড়িগ্রাম টাউন ক্লাব এসব খেলায় অংশগ্রহণ করতো। 

১৯৫৪ সালের বন্যায় সতীশ পার্ক নদীগর্ভে বিলীন হয়। পরবর্তীতে তৎকালীন কুড়িগ্রাম মহকুমা প্রশাসক গহর জামান চৌধুরী একটি খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠিত করেন যার নাম দেয়া হয় গহর পার্ক। বর্তমানে মজিদা কলেজটি গহর পার্কে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তৎকালীন কংগ্রেস লীডারগণ জনগনের বিনোদন ও জনগণকে সংগঠিত করার ব্যাপারটি চিন্তা করে ঐতিহাসিক নাটক মন্চায়নের তাগিদ অনুভব করেছিলেন। সে সময়ে একটি সৌখিন নাট্যদল গঠন করা হয় জাহাজ ঘরে। নাট্যদলে ছিলেন পুলিম বকশী, হেরম্বয় চক্রবর্তী, প্রদুৎ কুমার দত্ত, শতীশ বকসী সহ অনেক গুনি নাট্যশিল্পী। নাটকের পোষাক, সাজসরঞ্জাম কলকাতা থেকে ক্রয় করতেন সতীশ চন্দ্র বকসী। জাহাজ ঘর থেকে অস্থায়ী নাট্যশালা স্থানান্তরিত হয়ে পােশই বিনাপানি নাট্যমঞ্চ নামে প্রতিষ্ঠিত হয় যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সতীশ বকসী। বিনাপানি নাট্যমঞ্চে (বৃটিশ আমলে) নিয়মিত নাটক হতো। পরে সতীশ  বকসী বিনাপানি নাট্যমঞ্চকে সিনেমা হল হিসেবে চালু করেন, নাম দেয়া হয় বিনাপানি সিনেমা হল।

এই সিনেমা হলটি কুড়িগ্রাম জেলার প্রথম সিনেমা হল। পরে নাম পরিবর্তীত হয়ে হলটির নাম হয় ঝিনুক সিনেমা হল। সতীশ চন্দ্র বকসীর বড় ছেলে অজয় কুমার বকসী (যিনি বড় খোকা নামে পরিচিত ছিলেন) কুড়িগ্রাম শহরে প্রথম রিক্সা চালু করেছিলেন ১৯৬৪ সালে। রিক্সাটির নাম ছিল চলন্তিকা। রিক্সাচালক ছিলেন পেশকার মিয়া(পেশকার মিয়ার ভাষায় বীর মুক্তিযোদ্ধা পেশকার মিয়া, সনদের চেষ্টা করে পাননি) যিনি এখনও বেঁচে আছেন।

এসএ/