৪ ইস্যুতে লেজেগোবরে অবস্থা, নতুন বছরেও ফেল চসিক!


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


৪ ইস্যুতে লেজেগোবরে অবস্থা, নতুন বছরেও ফেল চসিক!

বড় বড় বুলি আর হাঁকডাকেই সার। নতুন বছরেও প্রত্যাশিত গতি নেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কাজে। জনগুরুত্বপূর্ণ চারটি ইস্যুতে রীতিমতো কোমর বেঁধে নামার ঘোষণা দিলেও, কাজে নেমে হয়েছে লেজেগোবরে অবস্থা। হতাশ নগরবাসীর মনে প্রশ্ন উঠেছে তাই, নতুন বছরেও কি জনগুরুত্বপূর্ণ এসব ইস্যুতে ফের ফেল মারতে যাচ্ছে চসিক?
  
জানা যায়, নতুন বছর ঢোকার পর নগরীর চারটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছিল চসিক। কিন্তু ঘোষণাতেই সার একের পর এক ইস্যু নিয়ে মাঠে নেমে কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। বরং টিসিবির পণ্য বিক্রিতে অনিয়ম ও ভাষা রক্ষার অভিযান থেকে সরে যাওয়ার অভিযোগে চসিকের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। ইংরেজি সাইনবোর্ড সরাতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধারা প্রশ্ন তুলেছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর ‘দৃঢ়তা’ নিয়ে।

চসিকের ঘোষিত ওই চারটি গুরুত্বপূর্ণ ‘মিশন’ হলো- আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ভাষা রক্ষায় চট্টগ্রাম থেকে ইংরেজি ভাষার সাইনবোর্ড উচ্ছেদ, পলিথিনমুক্ত নগরী গড়ে তোলা, বর্ষার আগে চসিকের অধীনে থাকা ২১টি খাল উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান ও পরিষ্কারে গতি আনা এবং স্বল্পমূল্যের কার্ডধারী দরিদ্র পরিবারে টিসিবির পণ্য বিক্রি।

কিন্তু গত কিছুদিনে একের পর এক ‘বড় মিশনে’ নেমে লক্ষ্যপূরণ করতে পারেনি নগরীর অন্যতম প্রধান সেবাসংস্থা চসিক। কাউন্সিলরদের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রির কাজে কিছুটা গতি দেখা গেলেও সেটা নিয়েও উঠেছে বিস্তর অভিযোগ। লালখানবাজার ওয়ার্ডে টিসিবির কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন খোদ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। তাছাড়া নগরীর অনেক দরিদ্র পরিবার কাউন্সিলরদের কাছ থেকে টিসিবির কার্ড পায়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

টিসিবির কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম বলেন, লালখানবাজারের যে বিষয়টা সেটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। তাছাড়া টিসিবির কার্ডে পণ্য বিক্রিতে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রি শেষে যদি পণ্য থেকে যায় তাহলে মোবাইল নাম্বার দিয়ে পণ্য বিক্রি করতে বলেছি আমরা। এখানে স্বজনপ্রীতির কোনো সুযোগ নেই। কাউন্সিলরদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাদের প্রয়োজন তারাই যেন এ সেবা পায়।

মূলত ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে চট্টগ্রামে তিন লাখ ৩৪ হাজার পরিবার স্বল্পমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে পারছেন। এসব পরিবার ফ্যামিলি কার্ড দেখিয়ে ৪৬০ টাকার বিনিময়ে দুই কেজি চিনি, দুই কেজি মসুর ডাল ও দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন। 

মুখ থুবড়ে পড়া চসিকের আরেকটি মিশন হলো ‘ভাষা রক্ষার অভিযান’। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ৫০টির বেশি স্পটে অভিযান চালিয়েছে চসিকের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে ইংরেজি ভাষার সাইনবোর্ড খুব একটা সরানো যায়নি এসব অভিযানে। পরে এ অভিযানে সফলতা না আসায় মেয়রের সমালোচনা করে চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘ভাষা রক্ষার অভিযান’ শুরু হয়। পরে রমজান উপলক্ষে এ অভিযান সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে নগরীতে এক সংবাদ সম্মেলনে চরম হতাশা প্রকাশ করেন বাংলা ভাষা প্রচলন উদ্যোগের আহ্বায়ক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ইংরেজি সাইনবোর্ড মুছে ফেলতে মেয়রের প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ আছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। এটার জন্য যে দৃঢ়তা থাকা দরকার তা হয়তো মেয়রের নেই।

একইভাবে গত বছরের শেষ দিকে নগরীর চকবাজারসহ তিনটি কাঁচাবাজার পলিথিনমুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল চসিকের পক্ষ থেকে। এছাড়া চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নগরীর সব বাজার পলিথিনমুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হলেও সেটিও বাস্তবায়িত হয়নি। পরে চসিকের পরিবেশ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পলিথিন উৎপাদনের কারখানাগুলো বেছে নিয়ে সেখানে পরিবেশ অধিদপ্তর ও চসিক যৌথ অভিযান চালাবে। তবে এখনও পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কার্যকর কোনো তালিকা প্রস্তুত হয়েছে কি-না তা সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি চসিক সংশ্লিষ্টরা।
চসিকের এক কর্মকর্তা জানান, নিজ নিজ ওয়ার্ডের পলিথিনের কারখানা চিহ্নিত করতে স্থানীয় কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুতও করা হয়েছে। যা পরিবেশ অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ বলেন, সম্প্রতি টিসিবির কাজের চাপে পলিথিনবিরোধী সাঁড়াশি যে অভিযান চালানোর কথা তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তবে নগরীর বিভিন্ন বাজারে রুটিনমাফিক অভিযান অব্যাহত আছে।

নগরীতে এ সমস্যাগুলোর পাশাপাশি উৎকন্ঠা বাড়াচ্ছে ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো। মূলত খাল উদ্ধারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কড়া হুঁশিয়ারির পর নড়েচড়ে বসে চসিক। সে লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ইব্রাহিমের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গত ফেব্রুয়াতিতে। এমন বাস্তবতায় নগরীর ষোলশহর ওয়ার্ডে বীর্জা খাল সংলগ্ন এলাকায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ও ৬ মার্চ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে চসিক।

তবে চসিক কর্মকর্তারা বলছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরের ৩৬ খালের পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের বাইরে ২১টি খালের তালিকা প্রস্তুত করেছে চসিক।  ২১টি খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ কিলোমিটার। যা পরিষ্কারে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে চসিক।

তবে চসিকের দাবির সঙ্গে মাঠের বাস্তবতার বরাবরই ফারাক রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মূল খালগুলোর পাশাপাশি বদ্ধ অবস্থায় আছে শাখা খালগুলোও। ড্রেন ও নালাগুলোও আর্বজনায় ভরে গেছে। 

চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী বলেন, চসিকের অধীনে যে খালগুলো রয়েছে সেগুলো পরিষ্কারে কাজ চলমান আছে। তাছাড়া শাখা খালগুলো পরিষ্কারে আমাদের স্পেশাল টিম কাজ করছে। কিন্তু বেশিরভাগ খাল ও নালা পরিষ্কারের পর আবারও আর্বজনায় ভরে যাচ্ছে। মানুষকেও সচেতন হতে হবে।

এসএ/