নওগাঁয় হিজাব পরার অপরাধে ২০ ছাত্রীকে পেটালেন শিক্ষিকা আমোদিনি


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


নওগাঁয় হিজাব পরার অপরাধে ২০ ছাত্রীকে পেটালেন শিক্ষিকা আমোদিনি

নওগাঁর মহাদেবপুরে হিজাব পরে স্কুলে আসার অপরাধে কমপক্ষে ২০ জন মাধ্যমিক ছাত্রীকে লাঠি দিয়ে পেটালেন শিক্ষিকা আমোদিনি পাল। গত বুধবার দুপুরে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দাউল বারবারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। পিটুনি খেয়ে ছাত্রীরা স্কুল ছেড়ে বাড়ি চলে যায়। 

বিষয়টি তারা তাদের অভিভাবকদের জানালে এলাকায় দারুণ তোলপাড় শুরু হয়। অভিভাবকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এর জের ধরে কয়েক’শ অভিভাবকেরা বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে ওই স্কুলে গিয়ে এর প্রতিবাদ জানান। অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে না পেয়ে তারা স্কুলের আসবাবপত্র ভাংচুর করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের দুটি ভ্যান ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, ‌‘বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। তবে এবিষয়ে থানায় কোন মামলা হয়নি।’ 

নির্যাতনের শিকার ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আফরিন অভিযোগ করে যে, গত বুধবার দুপুরে জাতীয় সঙ্গীতের পর লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনি পাল কেন হিজার পরে স্কুলে এসেছে এ কথা জিজ্ঞাসা করে ইউক্যালিপটাস গাছের ডাল দিয়ে তাদেরকে প্রহার করেন। শিক্ষিকা তাদেরকে জানিয়ে দেন যে, ‘স্কুলে কোন পর্দা চলবে না। ঢং করে আসছো। বাসায় গিয়ে বোরখা পড়ে থাকো। যখন তোমরা মহাদেবপুর বাজারে যাবে তখন পর্দা করবে। স্কুলে আসলে মাথার কাপড় ফেলে আসবে। তিনি ছাত্রীদের হিজাব খুলে ফেলার জন্য টানাটানি করেন। এমনকি যারা হিজাব ছাড়া শুধু মাস্ক পরে এসেছিল তাদের মাক্সও খুলে দেন। তিনি হুমকি দেন যে, ‘কাল থেকে যদি হিজাব ও মাস্ক পরে আসো তাহলে পিটিয়ে তোমাদের পিঠের চামড়া তুলে নেয়া হবে। 

সাদিয়া জানায়, লাইনের কয়েকজন ছাত্রীকে মারতে মারতে তার কাছে এসে তাকে মারতে থাকলে লাঠি ভেঙ্গে যায়। অন্যদের মধ্যে দশম শ্রেণির ছাত্রী ঐশি, সুমাইয়া, তিথি, লাকি, নবম শ্রেণির মোনাসহ কমপক্ষে ২০ জন ছাত্রীকে পেটানো হয়। 

সাদিয়ার মা সাবেরা বেগম বলেন, তার মেয়ে স্কুল থেকে এসে কান্নাকাটি করে বলেন হিজাব পরার জন্য ম্যাডাম মেরেছে। 

তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা বড় হয়েছে। তারাতো পর্দা করবেই। স্কুলে গিয়েই ভদ্রতা শিখবে। তা না শিখিয়ে যদি এরকম মারপিট করে তাহলে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা কোথায়?’ তিনি তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার স্বার্থে অভিযুক্ত শিক্ষিকার অপসারণ দাবি করেন। 

দশম শ্রেণির ছাত্রী উম্মে সুমাইয়া আকতারের মা মরিয়ম নেছাও জানালেন একই কথা। তার মেয়ে সুমাইয়া ও তার ক্লাসমেট তিথি জাতীয় সঙ্গীতের পর স্কুলে গেলে তারা কেন হিজাব পরে স্কুলে গেছে সেই অপরাধে শিক্ষিকা আমোদিনি পাল তাদেরকে পিটানোর জন্য শিক্ষক বদিউল আলমকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে বাদিউল মাস্টার সুমাইয়া ও তিথিকে লাঠি দিয়ে পেটায়। এই ঘটনার পর তার মেয়ে ক্লাস না করে বাড়ি এসে কাঁদতে থাকে। 

ঘটনার সত্যতা জানার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষিকা আমোদিনি পালের ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় পাবার পর তিনি ফোন কেটে দেন। পরে বার বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

অভিযুক্ত অপর শিক্ষক বদিউল আলম জানান, হিজাব না পরায় ছাত্রীদেরকে শিক্ষিকা আমোদিনি পাল মারধর করেছেন। তিনি নিজে কাউকে মারেননি বলেও দাবি করেন।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্ম্মণ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, স্কুলে হিজাব পরে আসায় শিক্ষিকা আমোদিনি পাল ৫/৬ জন ছাত্রীকে মারধর করেছেন। ঘটনার দিন তিনি স্কুলের কাজে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে এসে বিষয়টি জেনেছেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। এ বিষয়ে তাকে শোকজ করবেন বলেও জানান। 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান হিজাব পরায় স্কুলছাত্রীদের পিটানোর কথা স্বীকার করে বলেন, আগে তাকে শোকজ করি। তারপর ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

অভিভাবকেরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা স্কুল ঘেরাও করেন কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষিকা স্কুলে অনপুস্থিত ছিলেন। একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার তৎপরতা চালাচ্ছেন। ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে ছাত্রীদের হেনস্থা করার বিষয় প্রমাণ হলেও তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকার জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা অবিলম্বে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

এসএ/