গণপূর্তের দুর্নীতির মাস্টার নির্বাহী প্রকৌশলী আজমল


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ০৬:৫৬ অপরাহ্ন, ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫


গণপূর্তের দুর্নীতির মাস্টার নির্বাহী প্রকৌশলী আজমল
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া ।

# প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের ঘনিষ্ঠজন হওয়ার সুবাদে দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছেন, 

 কিশোরগঞ্জে থাকা অবস্থায় অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত হয়ে টাকার বিনিময়ে নিয়মিত হয়

# নিজস্ব ঠিকাদারী নিয়োগ করে শত কোটি টাকা লোপাট

# বিদেশে অর্থ পাচারসহ বহুমুখী অপরাধে জড়িত

# ঘুপচি বিজ্ঞাপন দিয়ে নামে বেনামে কোটি কোটি টাকা লুট 


কোনো ছাড় নয়

-   ড. ইকবাল মাহমুদ, সাবেক চেয়ারম্যান, দুদক


 

গণপূর্ত অধিদপ্তরে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলী আজমল হকের বিরুদ্ধে আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার মেডিকেল গণপূর্ত বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তবে অজ্ঞাত কারণে তিনি সব সময়ই থেকেছেন ধরাছোয়ার বাইরে। আর অনেকটা প্রাইজ পোস্টিং হিসেবে বর্তমানে তিনি গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন। গণপূর্তের সূত্র বলছে, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে বেশ দাপট দেখিয়েছেন আজমল হক। খোলামেলাভাবে দুর্নীতি করলেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নিজেকে শাস্তিমুক্ত রাখতে পেরেছেন এই নির্বাহী প্রকৌশলী।


অভিযোগ আছে, আজমল হক দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ বিদেশে অর্থ পাচারসহ বহুমুখী অপরাধে জড়িত। এর আগে কিশোরগঞ্জে থাকা অবস্থায় অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত হন তিনি। তবে আওয়ামী ঘরানার গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকারের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়মিত হন তিনি। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের ঘনিষ্ঠজন হওয়ার সুবাদে রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ মেডিকেল গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন এই দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী। সেখানে তার অধীনে প্রায় হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে। এসব প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ তার নিজস্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করিয়ে শত শত কোটি টাকা লোপাট করেছেন তিনি। 


নির্বাহী প্রকৌশলী আজমল হক সাবেক সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকারের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় তিনি সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেন। তিনি গণপূর্তের বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে তার নির্ধারিত বরাদ্দের বাহিরে ঘুপচি বিজ্ঞাপন দিয়ে নামে বেনামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এমনকি কাজ না করেই ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করার অভিযোগে শোকজও খেয়েছিলেন তিনি। অথচ গণপূর্ত অধিদফতর তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি।


অভিযোগ রয়েছে, তিনি ঠিকাদারদের কাজ দেওয়ার কথা বলে অগ্রিম ২০% কমিশনের টাকা নিয়েও তাদের কাজ দেননি। টাকা নিয়ে কাজ না দেওয়ায় ঠিকাদারদের হাতে লাঞ্চিত হতে হয় এই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে। তিনি ঠিকাদারদের সাথে সিন্ডিকেট করে ২০% কমিশনের বিনিময়ে কাজ দিয়ে থাকতেন। কমিশন ছাড়া কোন ঠিকাদারকেই কাজ দেননি। গণপূর্তের দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতি মন্ত্রণালয়ের নজরে আসলে তাকে বদলি করা হয় অন্য ডিভিশনে। এছাড়া তিনি এপিপি থেকে বরাদ্দের প্রকল্প পাশের ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ২০ শতাংশেরও বেশি নিতেন। কমিশন না দিলে ফাইল আটকে রাখতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।


এদিকে, আরেকটি সূত্র জানায়, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজমল হক সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় স্টাফ অফিসার বানিয়ে কাছাকাছি নিয়েছেন তাকে।


সূত্র জানায়, নির্বাহী প্রকৌশলী আজমল হক অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যেমে প্রায় শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। রাজধানীর গুলশানে আলিশান ফ্ল্যাট কিনেছেন যেটি মূলত তার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেওয়া। ধানমন্ডিতে ৮ কাঠার একটি প্লট কিনেছেন তিনি। ঠিকানা: রোড-২৭/বি, বাসা নং-১৮৯/এ/সি, ধানমন্ডি-৩২। যার বাজার মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা।


এছাড়া রামপুরা বনশ্রীতে রয়েছে ৩ তলা বিশিষ্ট আলিশান বাড়ী। যার ঠিকানা-ডি, বাসা নং- ৭৯/১/ডি। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। রাজধানীর বাসাবো বৌদ্ধ মন্দিরের পাশে সুগন্ধা ভিলার ৩য় তলায় ১৩শ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন স্ত্রীর নামে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮০ লাখ টাকা। এছাড়া তার স্ত্রীর নামে বসুন্ধরা সিটি মার্কেটের চতুর্থ তলায় ডি ব্লকে দোকান নং-৩৪/ডি এবং ৪৫/ডি এই ২টি দোকান ক্রয় করেছেন, যার বাজার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা।


মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজারের পাশে একটি বাড়িসহ রাজধানীতে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট এবং জমি কিনেছেন। তার রয়েছে ব্রান্ড নিউ হ্যারিয়ার লেকসাস গাড়ি। গ্রামের বাড়িতে কয়েক’শ বিঘা ফসিল জমি ক্রয় করেছেন। এছাড়া কানাডায় তার বন্ধুর কাছে হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন তিনি। তার স্ত্রীর ব্যাংক একাউন্টে রয়েছে কোটি কোটি টাকা যা তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে।


এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে প্রকৌশলী আজমল হককে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও উত্তর মেলেনি।


এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো ছাড় নয়।  


আরএক্স/