চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রশাসন
শিক্ষা বোর্ড ও সরকারি কলেজে ফ্যাসিস্ট নওফেলের সাজানো টিম বহাল তবিয়তে
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫

#৫ থেকে ১৩ বছর কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা
#ফ্যাসিস্টের সুবিধাভোগী ইলিয়াস শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান হয়ে লুটপাটের আয়োজন
#বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদের ক্ষোভ
মোহাম্মদ এরশাদ, চট্টগ্রাম: ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর চট্টগ্রামের মানুষের চাওয়া ছিল চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে একজন সৎ কর্মকর্তা চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ লাভ করবেন। কিন্তু চট্টগ্রামে শিক্ষা ক্যাডারে চেয়ারম্যান হওয়ার মত অনেক যোগ্য কর্মকর্তা থাকলেও তাদের কেউ চেয়ারম্যান হতে পারেনি। চেয়ারম্যান পদে আচমকা নিয়োগ পেলেন আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলে সুবিধাপ্রাপ্ত একদূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা।
২০১১ সালে সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী নাহিদের এপিএস বাড়ৈ এর হাত ধরে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হন বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ।
এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি পেয়েছেন একের পর এক পুরস্কার। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের উপসচিব, ও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক এর মত গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রায় ৬ বছর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
আমাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী নওফেল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এমআর আজিম এর সুপারিশে তাকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পটিয়া সরকারি কলেজ এর উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন। পরে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ খালি হলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ এর সভাপতি মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী ও একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার ডিওলেটার নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন দেন( ডিও লেটার এর কপি আমাদের হাতে আছে)। কিন্তু৫ তারিখ এর পল্টি মেরে সেই বৈষম্যের শিকার হয়ে যায় । কথিত আছে ফুলগাজীর এক আমলাকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে তিনি চেয়ারম্যান পদে আসেন।
এদিকে চেয়ারম্যান হওয়ার একসপ্তাহ না যেতে প্রফেসর ইলিয়াস শিক্ষা বোর্ডের আওয়ামী আমলে দূর্নীতিবাজ ওসমান সিন্ডিকেট এর ওসমানকে নিয়ে লুটপাট এর আয়োজন করে ফেলেছে।
১. রীট জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত ওসমান, জাহাঙ্গীর, ও সাখাওয়াত এর শাস্তি মওকুফের জন্য ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন বলে বোর্ড সূত্রে জানা যায়।
২. চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এক সময়ের ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগ অভিযুক্ত কম্পিউটার শাখার কর্মচারী উৎপল চন্দ্র বিশ্বাস এর চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে বিশ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছে।
৩. ফলাফল জালিয়াতি মামলার আসামি বোর্ডের সাবেক সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খান এর স্থগিতকৃত পেনশন ছেড়ে দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যানকে দশলাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন চেয়ারম্যান এর ঘনিষ্ঠ ওসমান গনি।
৪. চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের আজিজ, কাশেম ওসমান সিন্ডিকেট এর সহায়তায় বোর্ডের শুন্য পদে নিয়োগের জন্য বিভিন্ন এলাকার বিশজনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকার বেশি সংগ্রহ করেছেন।
৫. যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেফতারকৃত দৈনিক ভিত্তিক ইলেকট্রিশিয়ান রুবেল এর চাকরি দেওয়ার নামে নেন দুই লক্ষ টাকা।
এদিকে ফ্যাসিস্ট আমলের সুবিধাভোগী ইলিয়াস এর লুটপাটের খবরে চট্টগ্রামের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা অবিলম্বে প্রফেসর ইলিয়াস উদ্দিন কে সরিয়ে একজন সৎ কর্মকর্তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে পদায়ন এর দাবি করেন। তারা বলে তার এই পদায়নে ২৪ এর ছাত্রবিপ্লবের চেতনার সাথে বেইমানীর শামিল। এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বহাল তবিয়তে ফ্যাসিস্ট এর দোসর বোর্ডের ৮ কর্মকর্তা ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর নওফেলের ঘনিষ্ঠ বিপ্লব গাঙ্গুলি এখন ও বহাল তবিয়তে বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে আছেন। তিনি একজন স্বঘোষিত চাঁদাবাজ। বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন এর নামে চাঁদা আদায় তার নেশা বলে জানান ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষক। সে ৭ বছর ধরে বোর্ডে কর্মরত।
চন্দনাইশ পৌরসভার মেয়র খুন সহ একাধিক মামলায় পলাতক আসামি মাহবুবুল আলম খোকার ছোট ভাই দিদারুল আলম উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে এখন ও বহাল আছে। তিনি ফ্যাসিস্ট জমানার আশীর্বাদ নিয়ে বোর্ডে আসে।
৫ বছর ধরে বোর্ডে কর্মরত এখন ও বহাল আছে। নারায়ন চন্দ্র নাথ এর ফলাফল জালিয়াতির সাথে অনেকে তার সংশ্লিষ্টতা আছে বলে জানা যায়। ফ্যাসিস্ট সরকারের এমপি দীপংকর তালুকদার এর ছোট বোন সম্পাতা তালুকদার ১৩ বছর ধরে বোর্ডের সহকারী সচিব। চাঁদপুর এর রতন মজুমদার সিন্ডিকেট এর ঘনিষ্ঠ আবুল বাশার ৬ বছর ধরে বোর্ডের উপবিদ্যালয় পরিদর্শক। ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত নারায়ণ সিন্ডিকেট এর সদস্য প্রফেসর এমদাদ হোসাইন ৪ বছর ধরে বোর্ডের উপপরিচালক হিসাব ও নিরীক্ষা পদে আছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার জিকু দত্ত লেকচারার হয়ে উপরের পদে কর্মরত। যা বোর্ড অর্ডিন্যান্স এর লঙ্ঘন।
সরকারি কলেজ ও মাউশিতে ফ্যাসিস্ট এর দোসররা এদিকে চট্টগ্রাম এর শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অফিস মাউশি চট্টগ্রাম, অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ফ্যাসিস্ট এর দোসর। সেই ৯ বছর ধরে এই চেয়ারে কর্মরত।এমপিওর নামে কলেজ শিক্ষক দের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি টাকা।
এদিকে ফ্যাসিস্ট আমলে সুবিধাপ্রাপ্ত হাসিনার দোসর মুসলিম চৌধুরীর ছোট ভাই নওফেলের আশীর্বাদপুষ্ট মুজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী এখনও বহাল তবিয়তে চট্টগ্রাম কলেজে, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ডা: জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকুর আত্মীয় পরিচয়ে নওফেলের আশীর্বাদে কামরুল ইসলাম সরকারি মহসিন কলেজ এর অধ্যক্ষ পদে, সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর ইউনুসের ছোট বোন বেনু আরা সরকারি মহসিন কলেজ এর উপাধ্যক্ষ পদে বহাল তবিয়তে আছে।
চট্টগ্রাম কলেজ এর উপাধ্যক্ষ সুব্রত বিকাশ বড়ুয়া চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষক ছিল। বিভিন্ন সহকর্মীকে কথায় হুমকি ও নির্যাতন করত।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার রুমমেট পরিচয় দিয়ে তিনি উপাধ্যক্ষ হন। ফ্যাসিস্ট এর দোসর রনজিত কুমার নাথ গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ এর অধ্যক্ষ। পলাতক হাসিনার বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়ার হাত ধরে অধ্যক্ষ হন। গাছবাড়িয়া কলেজের উপাধ্যক্ষ সুব্রত বড়ুয়া ও বিপ্লব বড়ুয়ার ঘনিষ্ঠ দোসর বলে জানা যায়।
এদিকে দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দ্রুত অপসারণ দাবি করেন চট্টগ্রামের বৈষম্যের শিকার একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে ফ্যাসিস্ট এর দোসরকে অপসারণ করতে হবে। দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ করতে হবে নয়তো আমরা কঠোর কর্মসূচি দেব।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জুবায়ের এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কোন ফ্যাসিস্ট এর দোসর এর বিষয়ে ছাড় নয়, আমরা যাচাই করে দ্রুত ব্যবস্থা নিব।
আরএক্স/