আজও তুমুল জনপ্রিয় সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সলপের ঘোল


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


আজও তুমুল জনপ্রিয় সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সলপের ঘোল

সিরাজগঞ্জে উল্লাপাড়ায় ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু মিষ্টি পানীয় খ্যাতি পেয়েছে ‘সলপের ঘোল’ নামে। শুধু চলনবিল ও যমুনা নদীবেষ্টিত এই জনপদে নয়, দূরদূরান্তে ছড়িয়ে আছে সলপের ঘোলের সুনাম। বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা এই ঘোল কিনতে ভিড় করছেন।

ব্রিটিশ শাসনামল থেকে উল্লাপাড়ার সলপ স্টেশনকে কেন্দ্র করে ঘোল, দধির ব্যবসার প্রচলন রয়েছে। ১৯০৫ সালে সলপ রেলস্টেশনে নির্মাণ কাজ শুরু হয় তবে স্টেশনের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয় ১৯২০ সালে। ১৯২২ সালে সলপ ঘোল এন্ড দই ঘর গোড়াপত্তন করেন প্রয়াত সাদেক আলী খান। শতবর্ষের ঐতিহ্য আগলে রেখে এই ব্যবসার হাল ধরেছেন সাদেক খানের ২ ছেলে আব্দুল খালেক খান ও মালেক খান। প্রতিদিন ভোরে গ্রামের খামারিদের কাছ থেকে সংগৃহীত গরুর দুধ আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা জ্বাল দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময় জ্বাল দেওয়ার পর পাত্রে করে সারা রাত রেখে দেওয়া হয় সেই দুধ। সকালে জমে থাকা সেই দুধের সঙ্গে চিনি ও অন্য উপকরণ মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই সুস্বাদু পানীয়। বর্তমানে প্রতি লিটার ঘোল ৬০ টাকা, মাঠা ৮০, টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য সময়ে প্রতিদিন ১৫-২০ মণ ঘোল বিক্রি হয়। তবে রমজানে বেচা বিক্রি বাড়ে কয়েকগুণ।  সলপের ঘোল কিনতে আসা সিজান ও ওয়াহিদ। 

তাদের কাছে ঐতিহ্যবাহী ঘোল সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, সলপের ঘোলের স্বাদ অতুলনীয়। প্রায়ই আমরা বন্ধুরা সুস্বাদু ঘোল কিনতে আসি। ঘোলের মান অনুযায়ী দাম তুলনামূলক সস্তা। রমজানে চাহিদা বেশি থাকায় সকালেই চলে আসছি ঘোল নিতে। মো. ইমরান হোসেন তরুণ উদ্যোক্তা, গাজীপুরের মতো জায়গায় সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন পণ্যের ব্র্যাণ্ডিং করে থাকেন। তাঁতের শাড়ী,লুঙ্গি,গামছা, থ্রি পিচ বিক্রির পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ মিষ্টি, দধি ও সলপের ঘোল বিক্রি করেন গাজীপুরে। 

তিনি জানান, সিরাজগঞ্জের ছেলে হওয়ার সুবাধে জন্মভূমির প্রতি গভীর অনুরাগ অনুভব করি। সেই থেকে পথচলা শুরু বিভিন্ন পণ্য নিয়ে। সলপের ঐতিহ্যবাহী ঘোলের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি এখানে। অল্প দামে ভালো মানের ঘোল, মাঠা পেয়ে গ্রাহকদের বেশ চাহিদা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে রমজানে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে এই সুস্বাদু ঘোলের,প্রতিদিনই থাকে অর্ডার। পর্যাপ্ত স্টোরেজ সিস্টেম না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী বেশি পরিমাণ ঘোল সরবরাহ করতে পারছি না। 

স্থানীয় প্রবীণ বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেন, একসময় এই সলপের তৈরি ঘোল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। প্রতিদিনের তৈরি ঘোল উল্লাপাড়ার সলপ রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে সকাল ৯টার মধ্যে কলকাতা গিয়ে পৌঁছাত। কালের বিবর্তনে ঘোলের এমন বিস্তৃত বাজার না থাকলেও এখনো এর চাহিদা রয়েছে দেশে-বিদেশে। 

"সলপ ঘোল ঘর এন্ড সাদেক খান দই ঘর" এর স্বত্বাধিকারীরা আবদুল মালেক খান জানান, এই ব্যবসার সঙ্গে এখন অনেক মানুষ জড়িত। আমাদের কারিগররা কাজ শিখে দোকান দিয়েছেন। ঘোলের জন্য অনেকে দূরদূরান্ত থেকে এই এলাকায় আসছেন। এখান থেকে ঘোল পাইকারি দরে কিনে নিয়ে ব্যবসা করে সমৃদ্ধ হচ্ছেন। আমাদের ঘোল পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ সহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছে পাইকাররা। রমজানে বিশেষ চাহিদার ফলে প্রতিদিন ২ ভাইয়ের দোকানে খুচরা ও পাইকারি প্রায় ২০০ মণ ঘোল বিক্রি হয়। রমজানে সলপের ছোট বড় সকল দোকান মিলে দৈনিক প্রায় ৪০০ মণ বিক্রি হচ্ছে। এ বছর এই সলপের ঘোল ১০০ বছর পূর্ণ করলো। যা আমাদের কাছে আনন্দের ও গর্বের। 

তিনি আরও জানান, আমাদের দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। দক্ষ কারিগর তৈরিতে সরকারীভাবে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে আমরা উপকৃত হবো। এতে আমাদের শতবর্ষের মিষ্টান্ন শিল্পের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটবে। এই ঘোলের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতিবছর বৈশাখ মাসের প্রথম শুক্রবারে এই এলাকায় ঘোল উৎসবের আয়োজন করা হয়। সিরাজগঞ্জের প্রভাতী সংঘ প্রতিবছর এ উৎসবের আয়োজন করে। 

এসএ/