টাকা চুরির অপবাদে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রকে খুটিতে বেঁধে নির্যাতন


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


টাকা চুরির অপবাদে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রকে খুটিতে বেঁধে নির্যাতন

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দোস্ত গ্রামে টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে পঞ্চম শ্রেণীর স্কুলছাত্রকে প্রকাশ্যে খুটির সাথে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় বাবা-মেয়েকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে দোস্ত গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে করে দর্শনা থানা পুলিশ। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে দর্শনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আহমেদ আলী বিশ্বাস জনবাণীকে বলেন, সোমবার দুপুরে বাবা-মেয়েকে আটক করা হয়েছে। বিকেলে নির্যাতনের শিকার শিশুটির মা ফাতেমা খাতুন বাদি হয়ে দুজনের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা রেকর্ডের পর তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হবে। 

অভিযুক্তরা হলেন, দোস্ত গ্রামের মায়ের দোয়া ফ্যাশন হাউজের মালিক মৃত নুরুল হকের ছেলে আলী আহমদ ও তার মেয়ে রুমানা আক্তার রুমা।

 এর আগে গতকাল রোববার (১০ এপ্রিল) দুপুরে দোস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্র (১১) টিফিনের সময় পাশের মায়ের দোয়া ফ্যাশন হাউজে খাবার কিনতে যায়। এসময় টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে সামান্য মারধর করে দোকানের বাশের খুটির সাথে বেধে রাখে মালিকপক্ষ। পরে ওই স্কুলছাত্রের শরীর তল্লাশী করে কোন টাকা পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে ছাত্রকে মুক্ত করে নিয়ে আসে। 

দোকান মালিকের বক্তব্য, বেশিরভাগ সময়ই বাড়ির নারীরা দোকানটি পরিচালনা করেন। প্রতিনিয়ত দোকানের টাকা চুরির ঘটনা ঘটছে। এর আগেও বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন সুরাহা হয়নি। রোববার টাকা চুরির সময় পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রকে হাতেনাতে আটক করে দোকান মালিকের মেয়ে রুমা। এই অভিযোগে কিছুক্ষন দড়ি দিয়ে বেধে রাখলেও মারধর করা হয়নি তাকে। তার কাছ থেকে কোন টাকা পাওয়া যায়নি। পরে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চায় মালিকপক্ষ।

স্থানীয়রা জানায়, প্রায়ই এই দোকান থেকে টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তকে ধরতে তারা ওৎ পেয়ে থাকে তারা। গতকাল রোববার দুপুরে স্কুল টিফিনের সময় ওই স্কুলছাত্র খাবার কিনতে দোকানে আসলে তাকে আটক করে খুটির সাথে বেধে মারপিট করা হয়। তবে তার শরীর তল্লাশি করে কোন টাকা পাইনি। কেউ যদি চুরিও করেন তাহলে আইনি পদক্ষেপ নেয়াটা জরুরি। নিজের হাতে আইন তোলাটা ঠিক হয়নি তাদের। তাও সে একজন শিশু। শিশুর প্রতি এহন আচরণের ধিক্কার 
জানিয়েছে সচেতন মহল।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোমিন জনবাণীকে বলেন,ঘটনাটি অত্যন্ত দুংখজনক। গতক রোববার দুপুরে জানতে পেরে ওই দোকানে যায় এবং আমার ছাত্রকে মুক্ত করে আনি। তবে তার কাছে কোন টাকা পাওয়া যায়নি। দোকানি মারধর না করলেও প্রকাশ্যে বেধে রেখেছিল তা স্বীকার করেছে। এটাও শিশু নির্যাতনের মধ্যে পড়ে। আমি দোকানদারকে বলি আমার ছাত্র যদি কোন অপরাধ করে থাকে তাহলে আমাকে বলতেন আমি ক্ষতিপুরণ দিতাম। মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে শিশুর প্রতি এহন আচরণ কাম্য না। তবে ওই দোকানে থাকা রোমানা খাতুন নামে এক নারী বলেন, আমি হাতে হানে টাকাসহ ধরেছি আরাফাতকে। তাই বেঁধে রেখে ছিলাম। 

এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে জানতে চাইলে আব্দুল মোমিন বলেন, অনেক আগে দোকান মালিক আমাকে জানিয়েছিল তার প্রতিষ্ঠান থেকে স্কুলের কোন ছাত্র-ছাত্রী টাকা চুরি করেছে। এরপর আমি সবাইকে সচেতন করেছি। তবে প্রমাণ তারা দিতে পারেনি। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সালেহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি রাতে ঘটনাটি শুনেছি। কেউ যদি চুরিও করে এভাবে বেধে রেখে নির্যাতন করা আইন লঙ্ঘন। পরবর্তীতে এমন কাজ না করতে পারে শাস্তির দাবি জানায়।

দর্শনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আহমেদ আলী বিশ্বাস জনবাণীকে বলেন, সোমবার দুপুরে অভিযুক্ত বাবা-মেয়েকে আটক করা হয়েছে। বিকেলে ভুক্তভোগীর মা বাদি হয়ে দুজনের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি এজাহার দিয়েছেন। মামলা রেকর্ড প্রক্রিয়াধীন। এ মামলায় দুজনকে গ্রেফতার দেখানো হবে। আজ কিংবা আগামীকাল আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হবে। 

এসএ/