নড়াইলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি, স্ত্রী সহ ডাকাত দলের সর্দার গ্রেফতার
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ৭ই জুলাই ২০২৫

নড়াইলে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের মুলহোতা তুষার শেখ ওরফে গোল্ড হৃদয়কে (৩৫) গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশ।
রবিবার (৬ জুলাই) ভোরে র্যাব-৪ ও লোহাগড়া থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ঢাকার বিমানবন্দরের আজমপুর এলাকা থেকে তুষারকে গ্রেফতার করে।
আরও পড়ুন: নড়াইলে বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যু
এসময় তুষারের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্বর্ণালংকার সহ তার দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া বেগম ওরফে জান্নাতকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তুষার শেখ ওরফে গোল্ড হৃদয় লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের নোয়াগ্রামের ওয়াদুদ শেখের ছেলে। রোকেয়া বেগম ওরফ জান্নাত খাগড়াছড়ির ইসলামপুরের নূর মাঝির মেয়ে এবং তুষার শেখের দ্বিতীয় স্ত্রী।
পুলিশ জানায়,চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি লোহাগড়া উপজেলার ঘাঘা গ্রামে প্রবাসী বাবলু শেখের বাড়িতে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল প্রবাসীর স্ত্রী শেফালীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন লুট করেন। ঘটনার পর শেফালী বেগম বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
ওই ডাকাতির ঘটনার ৪ দিনের মাথায় একই উপজেলার নোয়াগ্রামে দ্বিতীয় দফায় ফের ডাকাতির ঘটনা ঘটে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আবুল হাসান বিশ্বাস বাড়িতে। সেখানে তাদের নব্য বিবাহিত মেয়ে জামাই ও পরিবারের বাকি সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন লুট করেন ডাকাত দল। পরে ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় দস্যুতার অভিযোগ এনে মামলা করেন।
আরও জানা যায়, ঘাঘা গ্রামের ডাকাতি মামলার সূত্র তদন্তে নামে লোহাগড়া থানা পুলিশ। তদন্তে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের মুলহোতা তুষার শেখ ওরফ গোল্ড হৃদয়ের সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান সনাক্ত করে শনিবার দিনগত রাতে ঢাকার বিমানবন্দরের আজমপুর এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব-৪ ও লোহাগড়া থানা পুলিশ। তুষারের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম তার নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ডাকাতিকালে লুন্ঠিত স্বর্ণালংকার সহ তার দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া বেগম ওরফ জান্নাতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ডাকাতির সময় লুন্ঠিত একটি সোনার চেইন ও কানের একজোড়া দুল উদ্ধার করা হয়।
ডাকাত সর্দার তুষার শেখ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রথমে টুকটাক হাঁস মুরগি,গাছের ফল ফলাদি চুরি করতেন। পরে বেশ কয়েকটি বাড়িতে চুরি করেন। আদালতে মামলার হাজিরা দিতে গিয়ে একই গ্রামের ভাবি আসমা বেগম বেশ কয়েকটি বাড়ির তথ্য দেন। পরে তার ফোন নাম্বার রাখি আর বাড়ি গুলোতে নজর রাখতে বলি। সুযোগ বুঝে আসমার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘাঘা গ্রামে প্রবাসী বাবলু শেখের বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করি। লোহাগড়া থেকে রওনা করি, পাঁচুড়িয়া গিয়ে নড়াগাতীর জাকির, ওদুদ সহ আরও বেশ কয়েকজন মিলিত হয়ে রাত ১ টার দিক প্রবাসীর বাড়িতে ঢুকি। সেখান থেকে টাকা পয়সা, সোনা গহনা নিছি।
তুষার আরও বলেন, পরে নোয়াগ্রামে আসমার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শাকিল, রহমতকে সাথে নিয়ে আর্মির বাড়িতে গ্রিল কেটে ঢুকি। সেখান থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও সোনা গহনা নিয়ে নিছি। পরে যার যার ভাগের টা তাকে দিছি। আসমাকে ৩ হাজার করে দিছি, আর বাকিদের সমান ভাগ। সোনা গহনা বিভিন্ন যায়গাতে বিক্রি করছি। দুই ডাকাতির পর আর কোন যায়গাতে কিছু করি নাই। আমি ভাল হয়ে গেছি।
ভুক্তভোগী শেফালী বেগম বলেন, আমার স্বামী বিদেশ থেকে কষ্ট করে টাকা ইনকাম করে পাঠাইছিলেন। বাড়িতে একটা ঘর তুলবো বলে নগদ ৬ লাখ টাকা ঘরে রাখছি। আসমা আমাদের বাড়িতে মাঝে মধ্যে আসতো। সে ডাকাতদের খবর দিয়ে আমার সর্বনাশ করছে। নগদ টাকা, সোনা গহনা সব নিয়ে গেছে।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আন্তঃজেলা ডাকাত দলের মুল হোতা তুষার শেখ ওরখ গোল্ড হৃদয়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছি, তদন্তের স্বার্থে আপাতত সব প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধারে এবং ডাকাত দলের বাকি সদস্যদের ধরতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুন: নড়াইলে গৃহবধুর মরদেহ উদ্ধার
ওসি আরও বলেন, ডাকাত তুষারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যালোচনা করে আমরা দেখেছি, সে বিলাসী জীবন যাপনে বেশ পটু। বিভিন্ন সময়ে সে নামীদামী মোটরসাইকেল, দামী ঘড়ি, স্বর্নের ব্রেসলেট, স্বর্নের চেইন, দামী মোবাইল ব্যবহার করে এমনকি নগদ টাকার ভিডিও প্রচারে স্বাচ্ছন্দ বোধ করতো। তার বিরুদ্ধে ডজন খানেক মামলা রয়েছে।
এসডি/