জোয়ারের ঢেউয়ের ধাক্কায় লণ্ডভণ্ড কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:৩৯ অপরাহ্ন, ২৬শে জুলাই ২০২৫


জোয়ারের ঢেউয়ের ধাক্কায় লণ্ডভণ্ড কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
ছবি: প্রতিনিধি।

সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও অস্বাভাবিক জোয়ারের ঢেউর আঘাতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে লণ্ডভণ্ড পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জোয়ার ঢেউর আঘাতে সৈকতের বালিয়াড়ি ভেঙে গেছে। সৈকতের পুলিশ বক্স, লকাড় ভেঙেছে অনেক স্থাপনা। ১২০ কিলোমিটার সৈকত তীরে উপড়ে পড়েছে কয়েক হাজার ঝাউগাছ। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরও বেশকিছু স্থাপনা।


আরও পড়ুন: কক্সবাজারে ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির সমাবেশ অনুষ্ঠিত


শনিবার (২৬ জুলাই) সমুদ্র সৈকতের কক্সবাজারের কয়েকটি পয়েন্ট দেখা মিলে ভাঙনের তীব্রতা। ভেঙে সাগরগর্ভে তলিয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়াও ভাঙনের উপক্রম হয়েছে একটি রেস্তোঁরা। শৈবাল পয়েন্টে দুইটি বৈদ্যুতিক খুঁটির উপর ঝাউগাছ ভেঙে পড়ায় আশপাশের এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিলো দুপুর পর্যন্ত। পরে সেই গাছ কেটে সরিয়ে নেয়া হলেও ঝুঁকিতে রয়েছে আরও কিছু খুঁটি। এরকম ভাঙন অব্যাহত থাকলে কাছেই প্রায় সৈকত ঘেঁষে গড়ে তোলা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যালয়, জেলা প্রশাসনের তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রসহ আরও কিছু স্থাপনা অচিরেই সাগরগর্ভে হারানোর  হুমকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।


বনবিভাগের তথ্য সূত্র বলছে, কক্সবাজার সদর রেঞ্জের নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ১৯৬১-৬২ সালে ১২ হেক্টর বালিয়াড়িতে প্রথমে সৃজন করা হয় ঝাউগাছ। ১৯৭৪ সালে ঝাউ বাগানের প্রসার ঘটানো হয়। তখন থেকেই এ ঝাউবাগান সমুদ্র পাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।  পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করে আসছে। তবে ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড়ে অর্ধেকের বেশি বাগান বিলীন হয়।


সূত্র আরও জানায়, ১৯৯১-৯২ সালে ১২ হেক্টর বালিয়াড়িতে নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার চারা রোপণ করা হয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে ১১৫ হেক্টর বালিয়াড়িতে রোপণ করা হয় ৩ লক্ষাধিক ঝাউচারা। ১৯৯৭-৯৮ সালে ৪০ হেক্টরে লক্ষাধিক চারা, ১৯৯৮-৯৯ সালে ৫ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার চারা, ২০০২-০৩ সালে ৮ হেক্টরে ২০ হাজার চারা, ২০০৩-০৪ সালে ৮৭ হেক্টরে ২ লাখ ১৭ হাজার চারা ও ২০১০-১১ সালে ৫ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার চারা রোপণ করা হয়। প্রতি হেক্টরে আড়াই হাজার করে প্রায় ৩০০ হেক্টরে সাড়ে ৭ লক্ষাধিক ঝাউগাছ সৃজন করা হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জোয়ারের ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙতে থাকে সৈকতের বালিয়াড়ি। সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের ঢেউয়ের তোড়ে গোড়া থেকে বালি সরে যায়। এতে বিলীন হতে থাকে নয়নাভিরাম ঝাউবাগান।


কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘জোয়ারের সময় ঢেউয়ের ধাক্কায় ঝাউগাছের গোড়া থেকে মাটি সরে যাওয়ায় বিলীন হতে থাকে ঝাউবাগান। তবে ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪৮৫ হেক্টর জমিতে ঝাউগাছ লাগানো হয়েছে। যদি পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা অন্য কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূল রক্ষায় সাগর তীরে আধুনিক পদ্ধতিতে কোনো বাঁধ নির্মাণ করা যেত তাহলে উপকূলবাসী রক্ষার পাশাপাশি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনকারী ঝাউগাছ রক্ষা পেত।’


পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম জানান, প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এই এলাকায় প্রতিবছর জিও ব্যাগ বসিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।


আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারি আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান বলেন, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন ঝাড়খন্ডে অবস্থান করছে। এটি আরো পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে দমকা/ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।


আরও পড়ুন: কক্সবাজারে ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে ভাই খুন


তিনি জানান, অমাবস্যা ও নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১-৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।


এসডি/