নীলফামারীতে রাস্তার বেহাল দশা
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:০৫ পিএম, ১৫ই আগস্ট ২০২৫

রুহুল আমিন, ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি: নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ডালিয়া প্রধান খাল থেকে পূর্ব বাইশপুকুর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ‘তুহিন বাঁধ’ সড়কটি এখন স্থানীয়দের কাছে যেন এক দীর্ঘশ্বাসের নাম। বহু বছর সংস্কারের অভাবে সড়কটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে, ফলে কয়েকটি গ্রামের সহস্রাধিক মানুষের জীবনযাত্রা কার্যত স্থবির হয়ে গেছে।
এই সড়কটি কেবল যাতায়াতের মাধ্যম নয়—এটি বাইশপুকুর ২ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইশপুকুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একাধিক মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দিরের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করেছে।
এছাড়াও ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি, আশ্রয়ণ প্রকল্প, ডাউয়াবাড়ি ও আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন এই সড়ক ব্যবহার করে থাকেন। তবে চলতি বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। কোথাও মাটি ধসে খাল-বিলে মিশে গেছে, আবার কোথাও পুরোনো হেরিংবন্ডের ইট উঠে গিয়ে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কের এ বেহাল দশার কারণে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। এছাড়া অটোভ্যান, ভ্যানগাড়ি ও মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে জরুরি রোগী পরিবহন, শিক্ষার্থীদের স্কুল যাতায়াত এবং কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিকল্প পথে যেতে অতিরিক্ত সময় ও খরচ হওয়ায় কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
বাইশপুকুর গ্রামের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির কোনো সংস্কার হয়নি। বর্ষায় পানি জমে বড় গর্ত হয়, আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালিতে চলা কষ্টকর হয়ে ওঠে। বহুবার জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।”
ভেন্ডাবাড়ি গ্রামের প্রবীণ আব্দুল জলিল জানান, জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ও সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন সড়কটি নির্মাণ করেছিলেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের মাধ্যমে হেরিংবন্ড বসানো হলেও দীর্ঘ অবহেলায় তা এখন সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। “এখন অবস্থা এমন যে, পায়ে হেঁটে পার হওয়াও কষ্টকর,” —আক্ষেপ করে বলেন তিনি।
এ বিষয়ে খালিশা চাপানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান জানান, সড়কের দুরবস্থা সম্পর্কে তিনি অবগত এবং বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন, তবে এখনো কোনো বরাদ্দ পাননি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান বলেন, ''আমরা বিষয়টি জানি। বরাদ্দ পেলেই দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আপাতত জরুরি ভিত্তিতে কিছু অংশ মেরামতের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।”
সড়কের করুণ অবস্থার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুলগামী শিশুরা। বর্ষায় কাদা ও পানিতে ভিজে নোংরা অবস্থায় ক্লাসে যেতে হচ্ছে তাদের। অনেকেই ঝুঁকি এড়াতে বিদ্যালয়ে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, ডালিয়া প্রধান খাল থেকে পূর্ব বাইশপুকুর পর্যন্ত তুহিন বাঁধ সড়কটি সংস্কার হলে শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাই সহজ হবে না—কৃষি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, রোগী পরিবহন এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াতেও গতি আসবে। তারা দ্রুত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর আহ্বান জানিয়েছেন।
এসএ/