এক বছরেও শেষ হয়নি আঁখিরা বধ্যভূমির কাজ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ পিএম, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


এক বছরেও শেষ হয়নি আঁখিরা বধ্যভূমির কাজ

আজ ১৭ এপ্রিল দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর আঁখিরা গণহত্যা দিবস। ৫১ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বারাইহাট থেকে এক’শ গজ দূরে আঁখিরা নামকস্থানের পুকুরপাড়ে পাকিস্তানী খানসেনাদের হাতে প্রাণ হারান ভারতে আশ্রয় নিতে যাওয়া ফুলবাড়ী, নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, পার্বতীপুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার শতাধিক হিন্দু পরিবারের দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতিসহ শিশু-কিশোর। আজও অনেকে এ ঘটনার বেদনাবিধূর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী খানসেনা ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর ও আল-সামসদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে মুক্তিকামী মানুষ ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথে দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিতে শুরু করেন।

এমনিভাবে ১৭৭১ এর আজকের এই দিনে ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার কেনান সরকার পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ, বিরামপুর, পার্বতীপুরের শেরপুর, ভবানীপুর, বদরগঞ্জ ও বদরগঞ্জের খোলাহাটিসহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক হিন্দু পরিবারের দেড়শতাধিক নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-কিশোরীকে নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে ফুলবাড়ীতে নিয়ে আসে। এরপর রাজাকার কেনান সরকার অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই নিরস্ত্র বাঙালি পরিবারগুলোর সঙ্গে থাকা অর্থ সম্পদসহ স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে খানসেনাদের হাতে তুলে দেয়। খানসেনারা ওইদিন সকাল ১১টার দিকে আঁখিরা পুকুরপাড়ে নিয়ে সবাইকে লাইন করে দাঁড় করে মেশিনগানের ব্রাশ ফায়ারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। এরপরও যারা বেঁচে ছিলেন তাদেরকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তবে দেশ স্বাধীনের পর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার কেনান সরকারের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে প্রতিশোধ নেন।

প্রত্যক্ষদর্শী বারাইহাটের মোকলেসুর রহমান। সেই সময়ের ৮ বছরের বালক। মোসলেসুর রহমান জানান, লুকিয়ে থেকে পাকিস্তানী খানসেনাদের হত্যাযজ্ঞ দেখে ফেলায় এলাকার ৮ জন ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে খানসেনারা। বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকে নিরীহ বাঙালি নারী-পুরুষের লাশ। পুকুরপাড় এলাকায় স্বাধীনতার পরও মানুষের হাড়গোড়সহ মাথার খুলি পড়ে ছিল।

এদিকে এই লোকহর্ষক গণহত্যার ৫০ বছর পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপির প্রচেষ্ঠায় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের “১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বধ্যভূমি সমূহ সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়ে) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সেই বধ্যভূমিতে গত ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ শুরু করেছে গণপূর্ত বিভাগ। যা এখনও চলমান।

সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমা-ার মো. লিয়াকত আলী ও ডিপুটি কমান্ডার মো. এছার উদ্দিন বলেন, স্থানীয় সাংসদের  প্রচেষ্ঠায় শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে খানসেনাদের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস জানাতে আঁখিরা বধ্যভূমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে স্মৃতিস্তম্ভ। 

এসএ/